মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকে বসেছিলেন। তবে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে জেলেনস্কির চোখ থাকলেও ট্রাম্প সে বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাননি।
বৈঠকের পর এ নিয়ে হোয়াইট হাউসের বাইরে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর কারণ, যুক্তরাষ্ট্র চায় না উত্তেজনা বৃদ্ধি পাক।’
তবে বৈঠকে আসার আগ পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বিশ্বাস করতেন এই বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তার দেশ।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র কী?
১৯৯১ সালে প্রথম যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক ক্ষেপণাস্ত্র।
প্রথম দিকে সমুদ্র থেকে দীর্ঘ-পাল্লার স্ট্রাইক মিশনে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করার জন্য এই গাইডেড ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আনে আমেরিকা। আধুনিক টমাহকের পাল্লা ৯৯৫ মাইল (১,৬০০ কিমি)। এগুলো প্রতি ঘণ্টা ৫৫০ মাইল গতিতে নির্ভুলভাবে শত্রুঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম। প্রায় ১,৫১০ কেজি ওজনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৬ দশমিক ১ মিটার দীর্ঘ এবং এগুলোর ডানার দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৫ মিটার। প্রতিটির জন্য আনুমানিক ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এটি নন-নিউক্লিয়ার, অর্থাৎ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়। সম্প্রতি ইয়েমেনে হুথি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে মার্কিন নৌবাহিনী।
ইউক্রেনের কেন এগুলো দরকার?
ইউক্রেনে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে দেশটির আক্রমণের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের ধারণা অনুযায়ী, টমাহকের নির্ভুল পাল্লার মধ্যে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি, লজিস্টিক হাব, এয়ারফিল্ড এবং কমান্ড সেন্টার থাকায় বিপাকে পড়বে রাশিয়া।
ইউক্রেন যুক্তি দিয়েছে, এই জাতীয় সক্ষমতা ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্পের সরাসরি আলোচনার আহ্বানকে আরো গুরুত্ব সহকারে নিতে বাধ্য করবে।
মঙ্গলবার পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাও সিকোরস্কি যুক্তি দিয়েছিলেন যে টমাহক কার্যকর হতে পারে কারণ রাশিয়ার বিশাল আয়তন এটির বিমান প্রতিরক্ষার বিষয়টি কঠিন করে তোলে।
ইউক্রেনের জন্য কেন উপযুক্ত নয়?
টমাহক সাধারণত জাহাজ এবং সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়, যা ইউক্রেনের নেই। এ ছাড়া স্থলভাগ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের জন্য তুলনামূলক নতুন লঞ্চপ্যাড টাইফুন এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই লঞ্চার মার্কিন বাহিনীর কাছেই আছে মাত্র দুইটি।
ইউক্রেনের কাছে বর্তমানে বেশ কয়েকটি মডেলের পশ্চিমা সরবরাহকৃত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মার্কিন তৈরি অ্যাটাসিএমএস এবং জিএমএলআরএস এবং যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের তৈরি স্টর্ম শ্যাডোস। এর মধ্যে, অ্যাটাসিএম সর্বোচ্চ ১৯০ মাইল দূরবর্তী লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। সূত্র: কালের কণ্ঠ