শিরোনাম
◈ গাঁজা সেবনের পর ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়ে মালালার ◈ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি ◈ ৯টা থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্ধরে ফ্লাইট চলাচল শুরু ◈ দ‌লের কা‌ছে নয়, রিশা‌দের কা‌ছে হে‌রে গেলো ও‌য়েস্ট ই‌ন্ডিজ ◈ ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল: সিইসি ◈ চট্টগ্রামে আটটি ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ, কুয়েতের ফ্লাইট বাতিল ◈ শাহজালালে আগুনের সূত্রপাত ও হতাহতের বিষয়ে যা জানা গেল ◈ আগুন লাগার ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়, স্বৈরাচারের দোসরদের চক্রান্তের অংশ: সারজিস ◈ যেখান থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর কার্গো এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ◈ ঢাকা বিমানবন্দরের আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে: বেবিচক

প্রকাশিত : ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:৫৮ দুপুর
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চীনের প্রভাব বাড়ছে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা খাতে

সৌদি আরব ও চীন যৌথভাবে শুরু করেছে তৃতীয় দ্বিপাক্ষিক নৌ মহড়া ‘ব্লু সোর্ড ২০২৫’। এটি কেবল সামরিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায় নয়, বরং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা প্রভাবেরও প্রতিফলন। বিশেষ করে রিয়াদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে।

রিয়াদের পূর্ব উপকূলে কিং আবদুল আজিজ নৌঘাঁটিতে শুরু হওয়া মহড়ায় দুই দেশের নৌবাহিনী অংশ নিচ্ছে। সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মহড়ার উদ্দেশ্য হলো 'অভিজ্ঞতা বিনিময় ও অংশগ্রহণকারীদের যুদ্ধ-প্রস্তুতি বাড়ানো'।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল জিয়াং বিন বলেন, এই মহড়া দুই দেশের সেনাদের মধ্যে দক্ষতা ও কৌশল বিনিময়কে উৎসাহিত করবে এবং সামরিক বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করবে।

২০১৯ সালে প্রথম ‘ব্লু সোর্ড’ মহড়া অনুষ্ঠিত হয় চীনের গুয়াংডং প্রদেশে, যেখানে সন্ত্রাসবিরোধী ও জলদস্যু দমন অনুশীলন হয়। ২০২৩ সালে ঝানজিয়াংয়ে দ্বিতীয় মহড়ায় বিশেষ অভিযান, উদ্ধার ও সমুদ্রবোর্ডিং প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত হয়। এ বছর যুক্ত হয়েছে ট্যাকটিক্যাল ড্রোন ও সামুদ্রিক মাইন নিষ্ক্রিয়করণের অনুশীলন।

গত জুনে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান বেইজিং সফরে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুন ও সামরিক কমিশনের উপ-চেয়ারম্যান ঝাং ইউসিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়।

এর আগে মে মাসে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীদের নেতৃত্বে নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক হয় বেইজিংয়ে। বৈঠক শেষে সৌদি উপমন্ত্রী আবদুলআজিজ বিন মুহাম্মদ বিন আয়াফ বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার ওপর ভিত্তি করে এই নিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে উঠছে।

গত মাসে সৌদি শিল্প ও খনিজ সম্পদমন্ত্রী বান্দার আলখোরাইফের চীন সফরেও প্রতিরক্ষা-সম্পৃক্ত শিল্প খাতে সহযোগিতার ইঙ্গিত মেলে। সেখানে তিনটি সমঝোতা চুক্তি হয়, অ্যাভকো ইন্টারন্যাশনাল, লানশি সুপারঅ্যালয় ও বিএমজিকে’র সঙ্গে, যা সৌদি আরবের স্থানীয় মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা শিল্প বিকাশে ভূমিকা রাখবে।

মার্কিন বিমানঘাঁটির উপস্থিতি সত্ত্বেও গত সেপ্টেম্বরে দোহায় ইসরায়েলের হামলার পর রিয়াদ বুঝতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সবসময় কার্যকর নয়। এর পর থেকেই সৌদি আরব বিকল্প নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।

এই প্রেক্ষাপটে ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের সঙ্গে রিয়াদ স্বাক্ষর করে কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি। এতে বলা হয়, যে কোনও এক দেশের ওপর আক্রমণ অপর দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দূরে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত নয়, বরং বহুমুখী নিরাপত্তা জালের অংশ হিসেবে সৌদি কৌশল। বিশেষত পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা রিয়াদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা আশ্বাস দেয়।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চীন থেকে সৌদি আরবের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ ছিল ২৪৫ মিলিয়ন ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০১৮-২০২২ সময়ে সৌদির অস্ত্র আমদানির ৭৮ শতাংশই আসে মার্কিন উৎস থেকে।

তবু সৌদি আরব ‘ভিশন ২০৩০’-এর লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে, সামরিক ব্যয়ের অন্তত ৫০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করবে। এজন্য প্রয়োজন কৌশলগত অংশীদার, যারা প্রযুক্তি, উপকরণ ও কারিগরি দক্ষতা সরবরাহ করতে পারে। এই জায়গায় চীনকে উপযুক্ত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে রিয়াদ।

২০২১ সালে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, চীনের সহায়তায় সৌদি আরব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। যা দুই দেশের সহযোগিতার গভীরতা নির্দেশ করে।

সৌদি আরব এখনও যুক্তরাষ্ট্রকেই প্রধান নিরাপত্তা অংশীদার হিসেবে রাখছে। তবে চীনকে উপেক্ষা করছে না। মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা অস্থিরতা, বিশেষত দোহা হামলার পর, রিয়াদের জন্য এটি স্পষ্ট হয়েছে যে একক নিরাপত্তা নির্ভরতা ঝুঁকিপূর্ণ।

এই পরিস্থিতি চীনের জন্য সুযোগ তৈরি করেছে সৌদি প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় নিজের অবস্থান শক্ত করার। উৎপাদন, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সহায়তার মাধ্যমে বেইজিং সৌদি নিরাপত্তা স্থাপত্যের এক অনিবার্য অংশ হয়ে উঠছে। যদিও প্রধান নিরাপত্তা নিশ্চয়তাদানকারী নয়, বরং সহায়ক কৌশলগত অংশীদার হিসেবে।

সূত্র: আল মনিটর

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়