শিরোনাম
◈ ইয়েমেন থেকে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, বন্ধ ইসরাইলি বিমানবন্দর ◈ পুলিশ কর্মকর্তা শামিমের ওপর চাঁদাবাজদের হামলা, গ্রেফতার ৭ ◈ ভেনিজুয়েলাকে ঘি‌রে ফে‌লে‌ছে আ‌মে‌রিকা, চারপাশে ব্যাপক সেনা মোতায়েন, পাল্টা জবাব দি‌তে প্রস্তুত নি‌কোলাস মাদু‌রো ◈ খুব শিগগিরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ◈ কী হ‌বে আজ? বাংলা‌দেশ হার‌বে না‌কি আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ কর‌বে ◈ এবার প্রধান উপদেষ্টাকে হত্যার হুমকি, থানায় জিডি ◈ জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়া‌মে কুকুর, কামড় দি‌লো দুই বি‌দে‌শি কোচ‌কে, আতঙ্ক বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্সে! ◈ শেরপুরে ৫ উপজেলায়  এক পৌরসভায় জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা ◈ পাচার করা হবে এমন তরুণীদের পাসপোর্ট করা হয় মাত্র ৪ ঘণ্টায়! ◈ ইং‌লিশ লি‌গে জয়ে ফিরলো ম্যান‌চেস্টার ইউনাইটেড

প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৪১ দুপুর
আপডেট : ০৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:২৭ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে এক হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, জাগ্রত হচ্ছে বিবেক

মহসিন কবির: ডোনাল্ড ট্রাম্পর গাজার হামলা বন্ধ করতে বলেছে। কিন্তু ইসরাইল হামলা অব্যাহত রেখেছেন। ২০ জনকে হত্যা করেছে। শনিবার রাত ১২টা থেকে দুপুর ১২টা ৪৫ পর্যন্ত গাজা সিটির আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ১১ জনের মরদেহ আনা হয়। এছাড়া আল-শিফা, আল-আওদা এবং নাসের হাসপাতালেও মরদেহ আসার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বহরের সবশেষ ত্রাণবাহী নৌযানটিও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল শুক্রবার সকালে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের গাজা উপকূলের কাছে এলে জাহাজটি আটক করে ইসরায়েল। সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, ইসরায়েলি সেনারা জোর করে নৌযানটিতে প্রবেশ করছে। তবে গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র কাছ থেকে আলাদা অবস্থানে আছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজকর্মী ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।

শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেছেন। গাজাগামী ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বাধার প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট ভাঙচুরের খবরও পাওয়া গেছে। এদিকে, ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে গাজা অভিমুখে নতুন করে আরও ১১টি জাহাজ যাত্রা করেছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) জানিয়েছে, এসব নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন। ১৫ বছরের সমুদ্র অভিযানের অভিজ্ঞতা আছে এফএফসির। এর আগে এফএফসি ম্যাডলিন ও হান্দালা ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছিল।

অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের বাকি থাকা জাহাজটিও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ‘ম্যারিনেট’ নামের নৌযানটি পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এবং এতে ৬ জন নাবিক ছিলেন বলে জানা গেছে। এটিই ছিল ৪৪টি নৌযানের শক্তিশালী ফ্লোটিলা বহরের সবশেষ জাহাজ যা ইসরায়েলি বাধা উপেক্ষা করে গাজার দিকে ছুটে যাচ্ছিল। ম্যারিনেটের আগে বৃহস্পতিবার ইসরায়েল বহরের বাকি সব নৌযানকে আটকায় এবং সেখানে থাকা বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী ও ক্রুদের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যায়।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজা থেকে ৪২ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল দূরে ম্যারিনেটকেও আটকায় ইসরায়েলি বাহিনী। আশদোদ বন্দরে এরই মধ্যে ৬০০ ইসরায়েলি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল। সেখানে আটক অধিকারকর্মী ও ক্রুদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হবে। তবে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক অধিকারকর্মীরা অনশন শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি টু ব্রেক দ্য সিজ অব গাজা।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। বহরে প্রায় ৪৪টি নৌযানে ৫০০ মানুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের নাগরিকসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক রয়েছেন। সাইপ্রাসের সরকার জানিয়েছে, ফ্লোটিলা বহরের একটি জাহাজ পুনরায় জ্বালানি ভরতে ও মানবিক কারণে তাদের লারনাকা বন্দরে নোঙরের অনুমতি চেয়েছে। তবে ২১ অধিকারকর্মীকে বহন করা জাহাজটির নাম বলেননি সাইপ্রাসের মুখপাত্র। ইসরায়েল যে কয়েক ডজন জাহাজ আটকেছে তার মধ্যে এটিও ছিল কি না তাও জানা যায়নি। সব যাত্রীর নাম নিবন্ধন শেষে সাইপ্রাস তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও কনস্যুলার সেবা নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে বলে মুখপাত্র জানিয়েছেন।

এদিকে, গাজা অভিমুখে আরও ১১টি জাহাজ যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)। এসব নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন। এর আগে এফএফসি ম্যাডলিন ও হান্দালা ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছিল। এবার অবরোধ ভাঙতে এফএফসি ব্যবহারিক পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও প্রক্রিয়াগত সহায়তা দিচ্ছে। এক বিবৃতিতে এফএফসি জানিয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর কনসায়েন্স নামের জাহাজ আরও ৮টি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। তাদের সঙ্গে ইতালি ও ফ্রান্সের পতাকাবাহী নৌবহর ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ যোগ দিয়েছ।

এই বহরে রয়েছে দুটি নৌকা। একসঙ্গে এ দুটি দল ১১টি জাহাজের বহর নিয়ে গাজা অভিমুখে ছুটে চলছে। বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া অধিকারকর্মী ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই বহরে থাকা ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে আছেন। শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার কাছ থেকে আলাদা অবস্থানে আছেন তারা। ইসরায়েলের নৌঅবরোধ ভাঙতে অন্য একটি জাহাজে করে গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছে তাদের জাহাজ। শহিদুল আলমের এই ভিডিও বার্তা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর সুমুদ ফ্লোটিলার সর্বশেষ জাহাজও আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ভিডিও বার্তায় শহিদুল বলেন, আজ আমরা ফিলিস্তিন টাইম জোনে এসেছি। সুমুদ ফ্লোটিলায় যারা গিয়েছিলেন, তারা ভিন্নভাবে গিয়েছিলেন।

আমরা আলাদাভাবে যাচ্ছি। এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা ছিল যে ওদের ওপর কিছু হলেও আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। জানতে পেরেছি, ইসরায়েল তাদের (সুমুদ ফ্লোটিলা) সব জাহাজ আটক করেছে। শহিদুল আলম বলেন, আমাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। আমাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা পাড়ি দিয়েছিল। তারা আমাদের একটু আগে পাড়ি দিয়েছিল। আমরাসহ এই মুহূর্তে এই ৯টি যানবাহন মুক্ত আছে। আমরা এই ৮টি ছোট নৌকাকে নিয়ে পার হয়ে যাব। এর পর থেকে আমাদের এই জাহাজটিই সবচেয়ে আগে থাকবে। এতে বোঝাই যাচ্ছে, আক্রোশটা আমাদের ওপরই পড়বে। কিন্তু আমরা একেবারেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আমরা একেবারেই গাজা পর্যন্ত যাব। ‘আমরা জয়ী হব, ফিলিস্তিন মুক্ত হবে’ জানিয়ে ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, তাদের জাহাজে ৯৬ জন মানুষ আছেন। তাদের মধ্যে ৮২ জন গণমাধ্যম  ও চিকিৎসা পেশাজীবী। এ ছাড়া আয়োজক, ফ্লোটিলা কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য ও জাহাজের ক্রুরা আছেন।

গাজাগামী ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বাধায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করেন এবং দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ ভাঙচুর করেন। বিক্ষোভকারীরা স্পেনের বার্সেলোনার বিভিন্ন দোকান ও রেস্তোরাঁর জানালায় ভাঙচুর চালান এবং ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান লিখে দেন। ইতালিতে শিক্ষার্থীরা মিলানের স্টাতালে ও রোমের লা সাপিয়েঞ্জাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নেন। বলোনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়ির টায়ার ফেলে পথ অবরোধ করা হয়। তুরিনে শত শত মানুষ শহরের রোড অবরোধ করে রাখেন বলে সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে। রোমে চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্টসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা একটি ফ্ল্যাশ মব আয়োজন করেন।

তারা টর্চলাইট ও মোবাইলের আলো জ্বেলে গাজায় নিহত ১ হাজার ৬৭৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীর নাম পড়ে শোনান। এ ছাড়া, গাজামুখী ত্রাণবাহী নৌবহরের সমর্থনে ইতালির ট্রেড ইউনিয়নগুলো সারা দেশে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে মিছিল বা সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এসব বিক্ষোভের সমালোচনা করেছেন। এছাড়া ইউরোপ জুড়ে ডাবলিন, প্যারিস, বার্লিন ও জেনেভায় হাজারো মানুষ তাদের ক্ষোভ জানাতে সড়কে নেমে আসেন। বুয়েনস আয়ার্স, মেক্সিকো সিটি এবং করাচিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। এদিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসরায়েলি দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে সাধারণ জনতা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে গ্লোগান দেন।

গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ বহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। 

বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, এথেন্স, বুয়েনস আয়ার্স, রোম, বার্লিন ও মাদ্রিদে। বিক্ষোভে শহরগুলোর লাখো ফিলিস্তিনপন্থি অংশগ্রহণ করেন। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিন, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান, বেলজিয়াম, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়