শিরোনাম
◈ সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা নিয়ে সুখবর ◈ জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে ১৬ বছরের ফ্যাসিজমের ইতিহাস জীবন্ত থাকবে : প্রধান উপদেষ্টা ◈ এই খেলা দেখ‌তে হ‌বে না, রুমের দরজা ও ফোন বন্ধ করে ঘুমাও: পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ভার‌তের অ‌ধিনায়ক ◈ ১৬ বছরের দুঃশাসনের চিত্র থাকবে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে ◈ পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে যেসব সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয় ◈ নির্বাচনী জোট নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ ◈ বাংলাদেশের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ পরামর্শ ◈ আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে দলের  সিদ্ধান্তকে যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা : তারেক রহমান  ◈ সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে আবারও সভা করেছে ঐকমত্য কমিশন ◈ বিদেশি গুপ্তচর নিয়োগে এমআই৬-এর নতুন অস্ত্র ‘সাইলেন্ট কুরিয়ার’ পোর্টাল

প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৯:৪৩ রাত
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সৌদি আরব-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তির পর এখন ভারতকে যেসব বিষয়ে ভাবতে হবে

পাকিস্তান ও সৌদি আরব গত সপ্তাহে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা নিয়ে ভারতসহ এই অঞ্চলের সামনে নানা হিসাব-নিকাশ উপস্থিত হয়েছে। সামরিক শক্তিতে এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তানের অর্থনীতি ধুঁকছে। অন্যদিকে সৌদি আরব অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হলেও সামরিকভাবে দুর্বল।

সৌদি আরব ও পাকিস্তান উভয়ই সুন্নি-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং তাদের মধ্যে শক্তিশালী ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের সময় পাকিস্তানকে বহুবার সাহায্য করেছে সৌদি আরব এবং বিনিময়ে পাকিস্তান সৌদি আরবকে নিরাপত্তা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক চুক্তিটি সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।

এছাড়াও, এই চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যদি দুই দেশের মধ্যে যেকোনো একটির ওপর আক্রমণ করা হয়, তাহলে অন্য দেশও সেটিকে নিজের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচনা করবে। এর মানে, এখন যদি পাকিস্তান বা সৌদি আরবের ওপর কোনো হামলা হয়, তাহলে তা উভয় দেশের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।

উভয় দেশের স্থল, বিমান ও নৌবাহিনী এখন আরও বেশি সহযোগিতা করবে এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করবে।

পাকিস্তান একটি পারমাণবিক অস্ত্র-সমৃদ্ধ দেশ, তাই এটি উপসাগরীয় অঞ্চলে সৌদি আরবের জন্য একটি নিরাপত্তা গ্যারান্টি হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের হামলা আরব বিশ্বে ক্ষোভ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে লড়াইয়ের পটভূমিতে এবং বর্তমান বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে সৌদি আরবের জন্য এই চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ চুক্তির পর বলেছেন, "আমাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি ঐতিহাসিক মোড় নিচ্ছে, আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।"

চুক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে সাবেক পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হুসেইন হাক্কানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ বলেছেন, "সৌদি আরবের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে পাকিস্তান আমেরিকান অস্ত্র কিনতে সক্ষম হবে।"

এদিকে, পাকিস্তানি কূটনীতিক মালিহা লোধি এই চুক্তির পর বলেছেন, "এটি অন্যান্য আরব দেশগুলোর জন্যও দরজা খুলে দিয়েছে।"

চুক্তির অনেক বিবরণ এখনো পাওয়া যায়নি, তবে বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এটি সৌদি আরব এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

একটি বিশ্লেষণে বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক এলিজাবেথ থ্রেকহেল্ড বলেছেন, এই চুক্তি সৌদি আরবের কাছ থেকে জ্বালানি ও আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়ার পাকিস্তানের সামর্থকে শক্তিশালী করবে।

যদিও হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টারের গবেষক এবং লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক রাবিয়া আখতার বিশ্বাস করেন যে এই চুক্তি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলমান সহযোগিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রূপ দিলেও এটি নতুন কোনো বড় প্রতিশ্রুতি নয়।

পাকিস্তানের জন্য সুবিধা অনেক

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সৌদি আরবের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে পাকিস্তান অনেক বড় সুবিধা পেতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুক্তাদির খান বলেন, "এটা পাকিস্তানের জন্য লটারি জেতার মতো।"

"পাকিস্তান সৌদি আরব থেকে আরও আর্থিক সহায়তা পাবে এবং এর ফলে দেশটি তার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা জোরদার করতে সক্ষম হবে। সৌদি আরব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় আরও বিনিয়োগ করবে," বলেন তিনি।

সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতীয় পর্যটকদের প্রাণহানির পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত দেখা দেয়।

ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া সামরিক পদক্ষেপের নাম দিয়েছিল 'অপারেশন সিন্দুর' এবং যুদ্ধবিরতির পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে 'অপারেশন সিন্দুর' এখনো চলছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নেওয়ার আগে এখন ভারতকে ভাবতে হবে যে সৌদি আরব প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সমর্থন করবে কি না।

অধ্যাপক মুক্তাদির খান বলেন, "ভারতের এখন বিবেচনা করা উচিত যে তারা পাকিস্তানে আক্রমণ চালালে সৌদি আরব সরাসরি পাকিস্তানকে সমর্থন করবে কি না। তাছাড়া, লাখ লাখ ভারতীয় সৌদি আরবে কাজ করেন। ভারতকে নিশ্চিত করতে হবে যে এই ভারতীয়দের স্বার্থ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।"

আর্থিক সাহায্য পাবে পাকিস্তান

সৌদি আরব কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানের আর্থিক সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করে আসছে। অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ, ঋণ, তেল কেনার ক্ষেত্রে অনেক দিন পর মূল্য পরিশোধ এবং অর্থনৈতিক সংকটের সময় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের মতো সুযোগ দিয়ে আসছে তারা।

এই বছর, সৌদি আরব পাকিস্তানকে ১.২ বিলিয়ন (১২০ কোটি) ডলার মূল্যের তেল কেনার জন্য বিলম্বিত অর্থ প্রদানের সুবিধা দিয়েছে। একইভাবে, ২০১৮ সালে সৌদি আরব পাকিস্তানকে ৩ বিলিয়ন (৩০০ কোটি) ডলার মূল্যের তেল কেনায়ও একই ধরনের সুবিধা দিয়েছিল। সৌদি আরব পাকিস্তানকে তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ভারসাম্য বজায় রাখতে বেশ কয়েকবার সহায়তা করেছে।

২০১৪ সালে সৌদি আরব সরাসরি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার জমা দেয়। পরবর্তীতে ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সৌদি আরব পাকিস্তানকে ৩ বিলিয়ন ডলার করে দেয়। প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়াও পাকিস্তানকে ত্রাণ প্যাকেজও দিয়েছে সৌদি আরব এবং বিশাল বিনিয়োগও করেছে। বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই প্রতিরক্ষা চুক্তির পরে সৌদি আরব থেকে আরও আর্থিক সাহায্য পেতে পারে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক হুসেন হাক্কানির ভাষ্যমতে বলেন, "পাকিস্তান এখন সৌদি আরবের অর্থ ব্যবহার করে তাদের প্রয়োজনীয় আমেরিকান অস্ত্র কিনতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনকেও অস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।"

জ্বালানি নিরাপত্তা

এই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান জ্বালানি নিরাপত্তাও পাবে। পাকিস্তান প্রতি বছর সৌদি আরব থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল কেনে এবং কখনো কখনো সৌদি আরব পাকিস্তানকে এর জন্য দেরিতে অর্থ পরিশোধের সুবিধাও দেয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে সংকটের সময়ে পাকিস্তান এখন সৌদি আরবের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

"এটি অনেক ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে। জ্বালানি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য পাকিস্তান সৌদি আরবের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে," এক বিশ্লেষণে বলেছেন জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি।

আঞ্চলিক প্রভাব

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে সবসময়ই টানাপোড়েন ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত মধ্যপ্রাচ্যে তার সম্পর্ক ও প্রভাব জোরদার করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে এই চুক্তির পর পাকিস্তানকে এ অঞ্চলে আরও গুরুতর শক্তি হিসেবে দেখা যেতে পারে।চুক্তি ঘোষণার পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক বিবৃতিতে বলেন যে অন্যান্য আরব দেশের যোগদানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়নি এবং দরজা বন্ধও করা হয়নি।

তিনি জিও টিভির সাথে এক আলাপচারিতায় আরও বলেন, এই চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতার সুবিধাও পাওয়া যাবে।পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে অন্যান্য আরব দেশগুলোকে পাকিস্তানের সাথে অনুরূপ চুক্তি করার জন্য আমন্ত্রণ হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মুক্তাদির খান বলেন, "ইসরায়েলের আক্রমণের জবাব দিতে কাতার অক্ষম ছিল। আরব দেশগুলো অস্ত্রের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছে, কিন্তু তাদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনেক যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যে পাকিস্তানকে একটি গুরুতর শক্তি হিসেবে দেখা যেতে পারে।"

বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই চুক্তি আঞ্চলিক মঞ্চে পাকিস্তানকে নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক করে তুলবে। সূত্র: বিবিসি নিউস বাংলা 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়