ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত নিরসনে অবদান রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে পাকিস্তান।
শনিবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে এ ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান সরকার।
পোস্টে বলা হয়, “ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংকটে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারক কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম ২০২৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
পাকিস্তানের কিছু বিশ্লেষক বলেছেন, এই পদক্ষেপ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পকে ফের চিন্তা করতে প্ররোচিত করতে পারে। পাকিস্তান ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন অভিহিত করে এর নিন্দা করেছে এবং তেল আবিবের এ পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেছে।
মে তে ট্রাম্পের বিস্ময়কর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের চার দিনের যুদ্ধ হঠাৎ করে শেষ হয়। তারপর থেকে ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, তিনি একটি পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন আর লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, কিন্তু এর জন্য তাকে কোনো কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপেই এই যুদ্ধ থেমেছে বলে পাকিস্তান স্বীকার করেছে; কিন্তু ভারত দাবি করেছে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতিটি হয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসলামাবাদ ও নয়া দিল্লি উভয়ের সঙ্গেই শক্তিশালী কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে অসাধারণ কৌশলগত দূরদর্শিতা এবং অগ্রণী রাষ্ট্রনায়কত্ব প্রদর্শন করেছেন, যা একটি দ্রুত অবনতিশীল পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছে। এই হস্তক্ষেপ একজন প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার ভূমিকার সাক্ষ্য হয়ে আছে।”
রয়টার্স জানিয়েছে, সরকারগুলো ব্যক্তিদের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করতে পারে। পাকিস্তানের এই ঘোষণার বিষয়ে ওয়াশিংটন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য জানানো অনুরোধে ভারত সরকারের এক মুখপাত্র সাড়া দেননি।
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানানোর তিন দিনের মাথায় পাকিস্তান সরকার এ ঘোষণা দিল। এই প্রথম ইসলামাবাদে একটি বেসামরিক সরকার থাকার পরও পাকিস্তানের একজন সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
পাকিস্তান সরকার ট্রাম্পের কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে আগ্রহ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গাজায় চলমান মানবিক সংকট এবং ইরানকে ঘিরে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে বলেই ইসলামাবাদ আশাবাদী।”
ট্রাম্প বলেছেন, “আমি পাকিস্তান ও ভারতের যুদ্ধ থামিয়েছি। ভারত, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে ভারতের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বড় ভূমিকা নিয়েছেন। আর পাকিস্তানের হয়ে সেই কাজটা করেছেন আসিম মুনির। উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আমি এটাকে থামিয়েছি।”
নিজের ভূমিকার জন্য স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশালে তিনি লিখেছেন, “আমি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ থামিয়েছি, কিন্তু কোনও নোবেল পুরস্কার পাব না। রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরায়েল-ইরান, এমনকি আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের জন্যও নয়। কিন্তু জনগণ জানে আমার অবদানের কথা, সেটাই যথেষ্ট।”
তিনি আরও দাবি করেন, কঙ্গো ও রুয়ান্ডার মধ্যে শান্তিচুক্তি ওয়াশিংটনে তার নেতৃত্বেই হয়েছে। “এটা আফ্রিকার জন্য, এবং বিশ্ববাসীর জন্য একটি বিশেষ দিন। তবুও আমি শান্তির নোবেল পাব না,” বলেন ট্রাম্প।
এরপর ট্রাম্প বলেন, “আমি দুইটি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ থামালাম, কিন্তু কোথাও একটি প্রতিবেদনও লেখা হয়নি। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না, কারণ মানুষ জানে।”
পুরস্কারের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট অনুযায়ী নোবেল শান্তি পুরস্কার সাধারণত চারটি বিষয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয়, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও নিরস্ত্রীকরণ, শান্তি আলোচনা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এবং আরও সংগঠিত ও শান্তিপূর্ণ একটি বিশ্ব গঠনের জন্য অবদান।
পাকিস্তানে তাদের সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা সবাই করেনি। গাজা ও ইরানে যুদ্ধের ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে ট্রাম্পের সমর্থনে দেশটির অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের বিশিষ্ট টেলিভিশন টক শো উপস্থাপক তালাত হুসেইন এক্স এ এক পোস্টে বলেছেন, “গাজায় ইসরায়েলের সুগার ড্যাডি এবং ইরানে তাদের হামলার চিয়ারলিডার কোনো পুরস্কারের প্রার্থী নন। আর কয়েক মাস পরে তিনি যদি মোদীর দুই গালে চুমা দিতে শুরু করেন তখন কী হবে?”