শিরোনাম
◈ নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে ১৮ বাংলাদেশিকে পুশইন ◈ যুক্তরাষ্ট্রে আজ শুরু হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর তিন দিনব্যাপী মহাসম্মেলন ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার পাকিস্তা‌নের ক্রিকেটার, জামিন মিললেও চলছে তদন্ত  ◈ সাকিব‌কে নি‌য়ে ক্রিকেট বোর্ডকে নাটক বন্ধ করতে বললেন খা‌লেদ মাহমুদ সুজন ◈ ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত প্যালেস্টাইনের ফুটবলার পেলে ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর: রিজার্ভের স্থিতিশীলতায় নতুন আশা ◈ সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫ জন আটক, ব্ল্যাকমেইল চক্র জড়িত বলে পুলিশের ধারণা ◈ ভারতীয় পণ্যে শুল্ক: অ্যামাজন-ওয়ালমার্টসহ মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ডার স্থগিত ◈ অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে ব্যর্থতা ও সফলতা কোথায়? ◈ বাংলাদেশিরা এখন ভিসা ছাড়াই যে ৬টি দেশ ঘুরতে পারবে! তালিকা দেখুন

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ছয় মাস আগেই নির্বাচনী ট্রেনে গতি তুলেছে বিএনপি, চলছে প্রার্থী বাছাইয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ

সহযোগীদের খবর: ছয় মাস হাতে রেখে নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ট্রেনে জোরগতিতেই চলছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। যাত্রা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে এই মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে বড় এই দলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপের প্রতিযোগিতা চলছে। যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে ধাপে ধাপে জরিপও চালিয়েছে দলটি। সূত্র: কালের কণ্ঠ

তার প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত পাওয়া জরিপের ফলাফল এবং সেই সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি মূল্যায়ন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। কয়েকটিতে ব্যতিক্রম ছাড়া কমপক্ষে ২৩০টি আসনের প্রতিটিতে তিনজন করে প্রার্থী প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রত্যেকের আমলনামা তৈরি করা হয়েছে।

তা দিন দিন হালনাগাদও করা হচ্ছে। প্রার্থীদের সর্বশেষ অবস্থাসহ তালিকা এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সামনে।  চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ সংসদীয় আসনের দুই শতাধিক আসনে জয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে বিএনপি হাইকমান্ড কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
দলটি কমপক্ষে ৭০টি আসনে সমমনা দলগুলোকে ছাড় দিতে পারে। একাধিক   জরিপ ও বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তবে বিএনপি সমমনা দলের সঙ্গে জোট করবে কি না তার ঘোষণা এখনো আসেনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে সমমনাদের নিয়ে জোট হতে পারে। তাঁর ভাষায় : ‘যুগপৎ যারা জুলাই আন্দোলন করেছে, আমরা তাদের নিয়ে নির্বাচন করতে চাই।

আমাদের সমমনা যারা আছে, যাদের নিলে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে পারব, সে হিসেবে আমাদের জোট গঠনের চেষ্টা হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের জোট গঠনের কোনো পরিকল্পনা ঘোষিত হয়নি। তবে জোট করব না এমনও নয়।’ গতকাল রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

দলের প্রবীণ নেতা ও পর্যবেক্ষক মহল বলছে, বিএনপির সামনে যোগ্য প্রার্থী যাছাই করা অন্যতম দায়িত্ব। বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে ধাপে ধাপে দলের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূলত দলীয় শৃঙ্খলা, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা, শিক্ষাগতসহ বিভিন্ন যোগ্যতার বিচার করেই প্রার্থী মূল্যায়ন করা হবে। দলের হাইকমান্ড সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে গণমানুষ ও তরুণদের সঙ্গে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সম্পর্ক, এ ছাড়া তাঁর নেতৃত্ব, দক্ষতা, দলের জন্য ত্যাগ, সততার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছে গুরুত্বের সঙ্গে। 

তবে আগে করা জরিপে এগিয়ে থেকেও বহু নেতা মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁদের একটি অংশ চাঁদাবাজি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে চিহ্নিত দলের ‘গুডবুকে’ নেই। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে টেন্ডারবাজি, উপদল সৃষ্টি, দলের আদর্শ থেকে নিজের স্বার্থরক্ষায় ব্যতিব্যস্ত থাকা, অন্য দলের সঙ্গে আঁতাত ও অদৃশ্য সম্পর্ক থাকা—এসব কারণেও মনোনয়নের তালিকা থেকে প্রভাবশালী বহু নেতা বাদ পড়ছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িতদের নাম মনোনয়নের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্যও তালিকা করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণসহ আলাদা প্রতিবেদনও তৈরি করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে অপরাধ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কোথাও নেতাদের পদ স্থগিত করা হয়েছে, কোথাও আবার তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাউকে কাউকে সতর্কও করা হয়েছে। সূত্র জানায়, দিন যত যাচ্ছে বাদ পড়াদের নামও বাড়ছে। কারণ এরই মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাঁদাবাজিতে যুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন। দলীয় সূত্র জানায়, আগামী নভেম্বরে মূল্যায়ন পর্ব শেষ করে নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রার্থী বাছাই করতে এরই মধ্যে বিএনপি কয়েকটি ধাপে মাঠ পর্যায়ে জরিপ করেছে। এর মধ্যে এ বছরের শুরু থেকে একটি জরিপ করা হয়েছিল। জরিপটি করা হয় ৩০০ সংসদীয় আসনেই।

জরিপপত্রে প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় কমপক্ষে ১০ জন ‘অরাজনৈতিক’ ব্যক্তির মতামত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিলেন শিক্ষক, ছাত্র, সরকারি চাকরিজীবী, গৃহিণী, কৃষক, জেলে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, মুদি দোকানিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী। জরিপকালে জরিপ পরিচালনাকারীরা কখনো বুঝতে দেননি জরিপটি বিএনপির উদ্যোগেই করা হচ্ছে। কারণ দলের হাইকমান্ড দলের ও নেতাদের মাঠ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতার অবস্থাই জানতে চেয়েছিলেন জরিপের মাধ্যমে। জরিপ সংশ্লিষ্ট একাধিক নেতা জানান, জরিপে জনপ্রিয়তার কারণে দলের চারজন সংস্কারপন্থী ‘যোগ্যতম প্রার্থী’ বলে মতামত দিয়েছে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশ।

জানা গেছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কমপক্ষে ৮০ জন নেতার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে। তাঁরা বিভিন্নভাবে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে সংকেত পেয়ে গেছেন। অন্য আসনগুলোয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য কাজ চলছে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। কেটে গেছে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সব সন্দেহ। ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে ও কেন্দ্রে তৎপরতার প্রতিযোগিতায় আছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচনের ছয় মাস বাকি থাকলেও কার্যত নির্বাচনী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন আসনে কেন্দ্রের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে ভোটের মাঠে কোমর বেঁধেই নেমেছেন। বাকিরা প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে নানান তৎপরতা চালাচ্ছেন।

রাজনীতি ও ভোটের মাঠে এখন সবচেয়ে বৃহৎ দল বিএনপি। ফলে এবার দলে মনোনয়নপ্রত্যাশীও উল্লেখ করার মতো। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন আড়াই হাজার। এবার তা ছাড়িয়ে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। মনে করা হচ্ছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অয়োজন করা হবে। প্রার্থীদের ভোটারদের রায় পেয়ে তবেই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে। এ কারণে তরুণ ভোটারদের কাছেও প্রার্থীদের বেশি যেতে হবে। কালের কণ্ঠের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বিপুলসংখ্যক তরুণ এবারই প্রথম ভোট দেবেন—তাঁদের আকৃষ্ট করতে তাই বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ছুটছেন।

জানা গেছে, বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থীদের খসড়া তালিকা তৈরি করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দেবেন। তিনি তাতে তাঁর সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ জানাবেন। এরপর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যাঁরা দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন। সর্বশেষ দলীয় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মতামত নিয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবেন। জানা গেছে, লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রত্যেক সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য সব প্রার্থীর খোঁজখবরও রাখছেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন আসনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জোরেশোরে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়নি। তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তারপর দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নের জন্য প্রার্থিতা আহবান করা হবে। স্থানীয় কমিটিগুলোর কাছে আমরা জানতে চাইব, তাদের কোনো পরামর্শ আছে কি না। এরপর যে তালিকা হবে সেটা অনুযায়ী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। সেখানে আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পার্লামেন্টারি বোর্ড তাঁদের ইন্টারভিউ নেবে। তারা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে মনোনয়ন দেবে। তারপর প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। তারপর শুরু হবে প্রচারণা। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে অতীতে যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। শুধু এ বিষয়ে নয়, আরো অনেকগুলো বিষয় বিবেচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির আন্দোলনের অন্যতম শরিক জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ গতকাল রাতে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ শুক্রবার) বিকেল ৩টায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের একটি ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা সব সময় বিএনপির সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা এরই মধ্যে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, শরিকদের সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে। তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। আশা করি, বিএনপি শরিকদের জন্য সম্মানজনক হারে আসন ছেড়ে দেবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়