শিরোনাম
◈ বাংলাদেশিরা এখন ভিসা ছাড়াই যে ৬টি দেশ ঘুরতে পারবে! তালিকা দেখুন ◈ জুলাই সনদের চূড়ান্ত ঘোষণা শিগগিরই: জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ◈ এবার দীপু মনিকে নিয়ে যে গোপন তথ্য দিলেন বেরোবির সাবেক ভিসি কলিমুল্লাহ! ◈ মাঠের মিত্রদের নিয়ে নির্বাচন করতে চায় বিএনপি, ৩১ দফার ভিত্তিতে হবে জাতীয় সরকার ◈ ভার‌তে এশিয়া কাপ খেলবে না পাকিস্তান, পরিবর্তে ডাক পেলো বাংলাদেশ ◈ রেস্তোরাঁয় পিস্তল নিয়ে তরুণ–তরুণীর খুনসুটি, ভিডিও ফেসবুকে ◈ থানার সামনেই সাংবাদিককে নির্মমভাবে পিটিয়েছে হামলাকারীরা, থেঁতলে দিয়েছে পা (ভিডিও) ◈ সিসিটিভিতে ধরা পড়ল ঘটনাপ্রবাহ: যে ভিডিও ধারণের জন্য করুণ পরিণতি সাংবাদিক তুহিনের (ভিডিও) ◈ নিত্যপণ্যের বাজার আবার অস্থির, ৮০ টাকার নিচে সবজি নেই ◈ কক্সবাজারে যাওয়া ছিল ‘নীরব প্রতিবাদ’, উদ্দেশ্য ছিল ‘চিন্তা করাও’: হাসনাত আব্দুল্লাহ

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ১১:২২ দুপুর
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারে যাওয়া ছিল ‘নীরব প্রতিবাদ’, উদ্দেশ্য ছিল ‘চিন্তা করাও’: হাসনাত আব্দুল্লাহ

জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় উদ্‌যাপনের মধ্যে ‘ব্যক্তিগত সফরে’ কক্সবাজারে যাওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির ৫ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল দলটি। এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও হাসনাত আব্দুল্লাহসহ ৫ নেতা শোকজের জবাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত।

বৃহস্পতিবার দেয়া শোকজ নোটিশের জবাব ফেসবুকে শেয়ার করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। নিজের ফেসবুক পেজে হাসনাত লিখেছেন, ‘উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সামপ্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একইসঙ্গে এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।’

জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লিখেছেন, ‘সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণ-অভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’

কক্সবাজারে যাওয়া ছিল ‘নীরব প্রতিবাদ’, উদ্দেশ্য ছিল ‘চিন্তা করাও’: হাসনাত আব্দুল্লাহ
নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ওই শোকজের জবাব দিয়েছেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহ। শোকজের জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘আপনার স্বাক্ষরিত ৬ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশটি আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছি এবং এনসিপির প্রতি আমার অঙ্গীকার ও দায়বোধ থেকেই আমি এই ব্যাখ্যা লিখছি।’

তিনি লেখেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের জন্য। এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশায়, যেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এই সরকার গঠিত হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, যা সেই মানুষগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করবে।’

ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় সেই মানুষদের কথা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, যারা অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। শহীদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু উপাদান দেখি, যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।’

তিনি দাবি করেন, ৪ঠা আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেককেই ঐ দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

‘এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই’, জানান হাসনাত আবদুল্লাহ। বলেন, ‘উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সামপ্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একইসঙ্গে এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।

তিনি জানান, ৪ঠা আগস্ট রাতে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবহিত করেন ভ্রমণের ব্যাপারে। তার ভাষায়, ‘তিনি আমাকে জানান যে, তিনি আহ্বায়ক মহোদয়কে বিষয়টি জানাবেন। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন যে, আহ্বায়ক মহোদয় এতে সম্মতি প্রদান করেছেন।’

হাসনাত জানান, এই ভ্রমণে তার সঙ্গে যোগ দেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি।

তবে তিনি অভিযোগ করেন, বিমানবন্দর থেকে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ রেকর্ড করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তা মিডিয়ার হাতে তুলে দেয়। তার ভাষায়, ‘কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ সেইসব উপস্থাপন করেছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘কিছু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, আমরা পিটার হাস্‌-এর সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে-যখন তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন না।’
গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, এই একই প্যাটার্নে হাসিনার আমলেও বিরোধী দলের নেতাদের নামে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন চালানো হতো।’

‘অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদর্শন’
এনসিপি’র পাঁচ নেতার কক্সবাজার সফর ঘিরে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সে প্রসঙ্গে নিজের জবাবে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লিখেছেন, ‘কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত (ঢাকায় নিযুক্ত) পিটার হাস্‌-এর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি! আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায়, সেখানে পিটার হাস্‌ নামে কেউ নেই। পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন। এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনো কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি, কিন্তু ঘুরতে এলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোনো বার্তা আমাকে কখনো দল থেকে দেয়া হয়নি।’

পরিস্থিতির আলোকে দলের শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি লিখেছেন, ‘আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবু দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব দিচ্ছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদর্শন হিসেবে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট: “ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়।” কারণ, ইতিহাস কেবল বৈঠকে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়