শিরোনাম
◈ আরব আমিরাতের বিমানে বোমা হামলা, নিহত ৪০ (ভিডিও) ◈ জাতীয় পার্টির বিভক্তি স্পষ্ট: জিএম কাদেরকে বাদ দিয়েই কাউন্সিলের ডাক ব্যারিস্টার আনিসুলের ◈ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে এখনো সক্রিয় হাসিনার অনেক পুলিশ-সচিব: জয়নুল আবদিন ফারুক (ভিডিও) ◈ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আটক ১,১৩৬ বাংলাদেশি সম্পর্কে পার্লামেন্টে দিলেন ভয়াবহ তথ্য ◈ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মহাপরিকল্পনা চূড়ান্তের পথে ◈ নওগাঁ সীমান্ত দিয়ে ১৮ বাংলাদেশিকে পুশইন ◈ যুক্তরাষ্ট্রে আজ শুরু হচ্ছে মুসলিম উম্মাহর তিন দিনব্যাপী মহাসম্মেলন ◈ ইংল‌্যা‌ন্ডে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার পাকিস্তা‌নের ক্রিকেটার, জামিন মিললেও চলছে তদন্ত  ◈ সাকিব‌কে নি‌য়ে ক্রিকেট বোর্ডকে নাটক বন্ধ করতে বললেন খা‌লেদ মাহমুদ সুজন ◈ ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত প্যালেস্টাইনের ফুটবলার পেলে

প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ০২:৩০ দুপুর
আপডেট : ০৮ আগস্ট, ২০২৫, ০৬:২৬ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পায়ের এই ৭টি মারাত্মক লক্ষণ অবহেলা করছেন না তো? হতে পারে ডায়াবেটিসের সংকেত

ডায়াবেটিস এখন একটি নীরব মহামারী, যা শুধু বয়স্কদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আধুনিক জীবনযাত্রার নানা অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবে তরুণ প্রজন্মও zunehmend এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত না হলে কিডনি, হৃদপিণ্ড, চোখ এবং স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।

শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মতো পায়েও ডায়াবেটিসের বেশ কিছু স্পষ্ট লক্ষণ ফুটে ওঠে। যেহেতু পা শরীর থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থিত, তাই রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা এবং স্নায়ুর ক্ষতি (Nerve Damage) সর্বপ্রথম এখানেই প্রকাশ পায়। এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে এবং সময়মতো ব্যবস্থা নিলে ভয়াবহ জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পায়ে দেখা দেওয়া এমনই ৭টি লক্ষণের কথা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, যা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

১. পায়ে ব্যথা, জ্বালা, ঝিনঝিন করা বা অসাড়তা (Diabetic Neuropathy)

লক্ষণ: পায়ের পাতায় বা আঙুলে সূচ ফোটানোর মতো অনুভূতি, জ্বালাপোড়া করা, ঝিনঝিন করা বা অবশ হয়ে যাওয়া। অনেক সময় রোগীরা বলেন, মনে হয় যেন "পোকামাকড় হাঁটছে" বা "মোজা পরে আছি"। এই অনুভূতিগুলো রাতের বেলা বাড়তে পারে। সময়ের সাথে সাথে এই অনুভূতি কমে গিয়ে পা পুরোপুরি অসাড় হয়ে যেতে পারে।

কেন হয়: রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি থাকলে তা ধীরে ধীরে পায়ের স্নায়ুগুলোকে (Nerves) ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই অবস্থাকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি (Diabetic Neuropathy) বলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু মস্তিষ্কে ভুল সংকেত পাঠায়, যার ফলে এই অস্বাভাবিক অনুভূতিগুলো তৈরি হয়। অসাড়তার কারণে পায়ে আঘাত লাগলেও রোগী তা টের পান না, যা থেকে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে।

২. ঘা বা ক্ষত সহজে না শোকানো (Slow-healing Sores)

লক্ষণ: পায়ে সামান্য কেটে গেলে, ছিলে গেলে বা ফোসকা পড়লে তা সহজে সারতে চায় না। ছোট একটি ক্ষত দীর্ঘস্থায়ী ঘায়ে (Ulcer) পরিণত হয়।

কেন হয়: এর পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে:

ক্ষীণ রক্ত সঞ্চালন (Poor Blood Circulation): ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালিগুলো সরু ও শক্ত হয়ে যায়, যাকে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (Peripheral Artery Disease) বলা হয়। এর ফলে ক্ষতস্থানে পর্যাপ্ত রক্ত, অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না, যা ক্ষত সারানোর প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়।

দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: উচ্চ রক্ত শর্করা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও দুর্বল করে দেয়, ফলে ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৩. পায়ের নিচে ফোসকা বা আলসার (Foot Ulcers)

লক্ষণ: পায়ের তলায়, বুড়ো আঙুলের নিচে বা যেসব জায়গায় বেশি চাপ পড়ে, সেখানে ফোসকা, কড়া বা গভীর ঘা বা আলসার তৈরি হওয়া। অনেক সময় নিউরোপ্যাথির কারণে রোগী ব্যথা অনুভব করেন না বলে এই আলসার তার অগোচরেই বাড়তে থাকে।

কেন হয়: পায়ের অসাড়তার কারণে জুতার ঘষা লাগা বা ছোটখাটো আঘাত রোগী বুঝতে পারেন না। ক্রমাগত চাপে ওই স্থানে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে কোষগুলো মরে গিয়ে ফোসকা বা আলসার তৈরি হয়। সঠিক চিকিৎসা না করালে এই আলসার হাড় পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে এবং ইনফেকশনের কারণে পা কেটে ফেলার (Amputation) মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।

৪. পায়ের আকৃতির পরিবর্তন (Charcot Foot)

লক্ষণ: পায়ের পাতা বা গোড়ালির হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ায় পায়ের স্বাভাবিক আকৃতি বদলে যাওয়া। পা ফুলে যেতে পারে, লাল হতে পারে এবং தொடும்போது গরম অনুভব হতে পারে। অনেক সময় পায়ের নিচের অংশ বেঁকে গিয়ে "রকার-বটম" (Rocker-bottom) বা নৌকার তলার মতো আকৃতি ধারণ করে।

কেন হয়: এটি ডায়াবেটিসের একটি গুরুতর জটিলতা, যাকে শারকোট ফুট (Charcot Foot) বলা হয়। মারাত্মক স্নায়ু ক্ষতির (Severe Neuropathy) কারণে পায়ের হাড়গুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং ছোট ছোট ফাটল ধরে। রোগী অসাড়তার কারণে ব্যথা অনুভব না করায় ওই পা দিয়ে হাঁটাচলা চালিয়ে যান, ফলে হাড়গুলো ভেঙে গিয়ে পায়ের আকৃতিই বদলে যায়।

৫. পায়ের ত্বক শুষ্ক ও ফাটা (Dry, Cracked Skin)

লক্ষণ: পায়ের ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক, খসখসে এবং আঁশের মতো হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে গোড়ালি বা পায়ের পাতার চামড়া ফেটে যাওয়া এবং আঙুলের মাঝখানে চামড়া ওঠা।

কেন হয়: ডায়াবেটিসের কারণে যে স্নায়ুগুলো ত্বকের আর্দ্রতা ও তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারায় এবং শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। এই ফাটা অংশ দিয়ে সহজেই জীবাণু প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

৬. ত্বকের রঙে পরিবর্তন (Skin Color Changes)

লক্ষণ: পায়ের ত্বকের রঙ স্বাভাবিকের চেয়ে ফ্যাকাশে, নীলচে বা লালচে হয়ে যাওয়া। অনেক সময় রক্ত সঞ্চালনের অভাবে ত্বকে কালচে ছোপও দেখা যেতে পারে।

কেন হয়: পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ বা রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা এর মূল কারণ। পায়ে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছানোর কারণে ত্বকের রঙ পরিবর্তন হয়। লালচে ভাব কোনো ইনফেকশন বা শারকোট ফুটের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে।

৭. গোড়ালি বা পায়ে ফোলাভাব (Swelling/Edema)

লক্ষণ: এক বা উভয় পায়ে, বিশেষ করে গোড়ালি বা পায়ের পাতায় পানি জমে ফুলে যাওয়া। জুতা পরতে কষ্ট হওয়া বা পায়ের উপর আঙুল দিয়ে চাপ দিলে গর্ত হয়ে যাওয়া।

কেন হয়: ডায়াবেটিসের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে পায়ে ফোলাভাব হতে পারে। যেমন: দুর্বল রক্ত সঞ্চালন, হৃদপিণ্ডের সমস্যা, কিডনি রোগ (ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি) বা কোনো ইনফেকশন। যদি একটি পা হঠাৎ করে ফুলে যায় এবং লাল হয়ে গরম হয়ে ওঠে, তবে তা ইনফেকশন বা শারকোট ফুটের লক্ষণ হতে পারে, যা একটি জরুরি অবস্থা।

করণীয় ও সতর্কতা

  • ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ডায়াবেটিসের সকল জটিলতা প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।

  • প্রতিদিন পা পরীক্ষা করুন: প্রতিদিন ভালোভাবে নিজের পা দেখুন। কোনো কাটাছেঁড়া, ফোসকা, লালচে ভাব বা ফোলা চোখে পড়লে অবহেলা করবেন না।

  • সঠিক জুতা পরুন: আরামদায়ক এবং সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করুন। নতুন জুতা কেনার সময় খেয়াল রাখুন যেন তা বেশি টাইট না হয়।

  • পা পরিষ্কার রাখুন: প্রতিদিন হালকা গরম পানি ও সাবান দিয়ে পা পরিষ্কার করুন এবং নরম তোয়ালে দিয়ে, বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকগুলো, ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।

  • ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান রক্ত সঞ্চালন আরও কমিয়ে দেয়, যা পায়ের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

যদি উপরের কোনো লক্ষণ আপনার চোখে পড়ে, তবে দ্রুত একজন ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ বা এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের (Endocrinologist) পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতাই পারে আপনাকে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

সূত্র:

  1. American Diabetes Association (ADA) - Foot Complications.

  2. National Institute of Diabetes and Digestive and Kidney Diseases (NIDDK), USA - Diabetes and Foot Problems.

  3. Mayo Clinic - Diabetic Neuropathy, Charcot Foot.

  4. World Health Organization (WHO) - Diabetes.

 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়