বিশ্বে প্রতি বছর ধূমপানজনিত রোগে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। বাংলাদেশেও প্রতিবছর এক লাখেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে তামাকের কারণে। তাই বলা চলে, ধূমপান শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং এটি ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ধূমপান ছাড়তে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে, কলার মতো সহজলভ্য ফল ধূমপানের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২০১৮ সালে জার্নাল নিউরোসাইন্স-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, খাদ্য থেকে প্রাপ্ত ট্রিপটোফ্যান মস্তিষ্কে সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। যা ধূমপানের কারণে তৈরি হওয়া মেজাজজনিত সমস্যা কমাতে পারে।
এক্ষেত্রে শক্তিবর্ধক ফল কলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার। এই উপাদানগুলো শরীরের ক্লান্তি দূর করে, হজমে সহায়তা করে এবং মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়ায়। এতে ধূমপান না করেও শরীর চাঙ্গা রাখা সম্ভব।
এছাড়া, ধূমপান ছাড়ার পর শরীরে নিকোটিনের অভাবজনিত কারণে অস্থিরতা, মাথা ঘোরা ও ক্ষুধামান্দ্যসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে কলায় থাকা প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ) দ্রুত শক্তি জোগায় ও রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
একই সঙ্গে কলায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া সহজ করে। যা ধূমপান-পরবর্তী বদহজম ও অস্বস্তি দূর করে। এতে মানসিক চাপ কমে এবং ধূমপান ছাড়ার পর যে অস্থিরতা তৈরি হয় তা কিছুটা প্রশমিত হয়।
২০০৭ সালে প্রকাশিত অ্যাডেক্টিভ বিহ্যাভিয়রস জার্নালের একটি গবেষণায় বলা হয়, যারা ধূমপান ছাড়ার চেষ্টায় প্রাকৃতিক খাবার বিশেষ করে ফলমূল গ্রহণ করেন, তাদের নিকোটিনের প্রতি নির্ভরতা দ্রুত কমে। ফলমূল চিবানোর প্রক্রিয়া মুখের ব্যস্ততা বজায় রাখে, যা সিগারেট হাতে নেয়ার প্রবণতা হ্রাস করতে সহায়ক।
স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথ–এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ধূমপানের অভ্যাস গড়ার ঝুঁকি কমে যায়। ফলাফলে দেখা যায়, যারা দিনে অন্তত ২ বার ফল খান, তাদের ধূমপান শুরু করার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম।
অর্থাৎ, যারা ফলমূল বেশি খান, তারা ধূমপানের প্রতি তুলনামূলকভাবে কম আসক্ত হন। এমনকি ধূমপান ছাড়ার পর ফলমূল গ্রহণ করলে সাফল্যের হারও বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিবিয়ে খাওয়ার মতো অভ্যাস সিগারেটের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। কলা সেই চাহিদা পূরণে কার্যকর একটি উপায় হতে পারে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও কলা অনেক সাশ্রয়ী। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ-সাতটি ধূমপান করেন, তাদের মাসে খরচ প্রায় তিন হাজার টাকা। অন্যদিকে একটি কলার দাম ৮ থেকে ১০ টাকা। ধূমপান পরিহার করে যদি এই ফলটির পেছনে অর্থ ব্যয় করা হয় তাহলে অর্থ সাশ্রয়ও করা যায়।
সবশেষ বলা যায়, স্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও অর্থ— সব দিক বিবেচনায় ধূমপান না করে কলা খাওয়ার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা হতে পারে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। উৎস: যমুনা টেলিভিশন।