বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ঢাকায় তখনকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সমর সেন ফুলের তোড়া নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে। পরদিন ভারতের জাতীয় স্তরের দৈনিক 'দ্য হিন্দু'তে দু'জনের হাসিমুখে করমর্দনের ছবি ছাপা হয়েছিল প্রথম পাতাতেই।
একদা যে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা ছিল ঐতিহাসিক, তারই নির্মম হত্যার পর যে এত তাড়াতাড়ি দিল্লি ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নিয়েছিল - তখন সেই ঘটনা বিস্মিত করেছিল অনেককেই।
১৯৯৮ সালে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সমর সেন, যিনি কূটনৈতিক মহলে ও বন্ধুদের মধ্যে 'টিনু সেন' নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, তিনি 'ফ্রন্টলাইন' সাময়িকীতে লেখা এক নিবন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন কোন পটভূমিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
সমর সেনের লেখা থেকেই উদ্ধৃত করা যাক, "আমার ব্যক্তিগত মত ছিল অপেক্ষা করা ও নজর রাখা। কিন্তু সেই সঙ্গেই আমি মনে করেছিলাম, বাংলাদেশের নতুন শাসকদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত। যদিও ভারত সরকারের কারও কারও সেই ভাবনাটা পছন্দ হয়নি।"
তিনি আরও লিখেছেন, "শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে নিশ্চয় একটা বড় আঘাত ছিল - কিন্তু বিপর্যয় ছিল না।"
"বস্তুত খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটা আপাত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল," জানিয়েছিলেন ভারতের ডাকসাইটে ওই কূটনীতিবিদ।
সেই ঘটনার ঠিক উনপঞ্চাশ বছর বাদে শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার একটানা ষোল বছরের শাসনের যখন নাটকীয়ভাবে অবসান ঘটল – তখন কিন্তু ভারতের প্রতিক্রিয়া একেবারেই অন্যরকম ছিল।
বস্তুত শেখ হাসিনার পতনের পর পুরো একটা বছর ঘুরে গেলেও ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনো মোটেই স্বাভাবিক হয়নি।
ভারত যে শুধু সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না তাই নয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকেও দিল্লি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে এই মুহূর্তে তারা ঢাকার সঙ্গে 'ফুল এনগেজমেন্টে' যেতেই উৎসাহী নয়।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে ভারতেরও অবশ্যই নিজস্ব কিছু কিছু যুক্তি রয়েছে, তবে বাস্তবতা হলো ১৯৭৫-এর অগাস্টে আর ২০২৪- সালের অগাস্টে ভারত বাংলাদেশে যে দু'ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে তা চরিত্রগতভাবে একেবারেই আলাদা।
সাধারণত কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশে রাজনৈতিক পালাবদল হলে, সেটা যদি পুরোপুরি গণতান্ত্রিক উপায়ে নাও হয়, তারপরও সম্পর্কের একটা ধারাবাহিকতা রক্ষার তাগিদ থাকে নানা কারণে।
অবশ্য অতীতে এই রীতির কিছু কিছু ব্যতিক্রমও দেখা গেছে, আর এখনকার বাংলাদেশকে স্পষ্টতই ভারত সেই ব্যতিক্রমের তালিকাতেই গণ্য করছে।
শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা দুজনেই ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন – কিন্তু প্রায় অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে দু'জনের পতনের পর ভারতের প্রতিক্রিয়া দু'রকম কেন – এই প্রতিবেদনে তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয়েছে।
সমর সেনকে দিল্লি থেকে ডেকে পাঠান খন্দকার মোশতাক
ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক মানস ঘোষ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু কভারই করেননি, যুদ্ধের পর কলকাতার 'দ্য স্টেটসম্যান' পত্রিকা তাকে ঢাকায় নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবেও নিযুক্ত করেছিল।
১৯৭২ থেকে টানা তিন বছরেরও বেশি সময় তিনি ঢাকায় কাজ করেছেন – আর সেই সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখেছেন শেখ মুজিব ও তার রাজনৈতিক সতীর্থদেরও।
শেখ মুজিবের জীবনের 'রাজনৈতিক ভুল'গুলো নিয়ে লেখা 'মুজিব'স ব্লান্ডার্স' নামে একটি বইয়েরও রচয়িতা তিনি।
মানস ঘোষ মনে করেন, মুজিব-পরবর্তী বাংলাদেশ যাতে নিজেদের 'ইসলামী রাষ্ট্র' ঘোষণা না করে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো 'কনফেডারেশন' গঠনের পথে না এগোয় – সেটা নিশ্চিত করতেই ভারত তখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, "বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খন্দকার মোশতাক, তিনি একটু প্রমাদ গুনলেন যে যদি ভারত, ভারত-বাংলাদেশের যে মৈত্রী চুক্তি আছে ২৫ বছরের, সেটা যদি ইনভোক করে!"
"কারণ তাতে এমন কয়েকটা ক্লজ আছে যে কোনো দেশে অশান্তি বা অস্থিরতা তৈরি করা হয়, তাহলে অন্য দেশ তাদের সহায়তা করবে। সোজা কথায়, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এমনটা মনে করলে ভারত সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারবে।"
শেখ মুজিবকে যে দিন হত্যা করা হয় সে দিন অবশ্য হাই কমিশনার সমর সেন ঢাকায় ছিলেন না। তিনি তখন দিল্লিতে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত কনসালটেশনে যোগ দিতে তিনি দেশে গিয়েছিলেন।
মানস ঘোষ জানাচ্ছেন, "খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে সমর সেনের কিন্তু একটা ভালো রিলেশন ছিল ... উনি সঙ্গে সঙ্গে একটা মেসেজ পাঠালেন, আপনি অতি সত্ত্বর ফিরে আসুন – যেন তিনি বাংলাদেশেরই কোনো রাষ্ট্রদূত, দেশের সরকার তাকে ডেকে পাঠাচ্ছে!"
ঢাকায় ফিরেই সমর সেন যাতে নতুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন, ওই বার্তায় সেটাও জানানো হলো।
এদিকে শেখ মুজিবকে যে দিন হত্যা করা হয়, সে দিন ভোরবেলাতেই রেডিও পাকিস্তানের লাহোর স্টেশন থেকে প্রচারিত বিশেষ বুলেটিনে দাবি করা হয়েছিল, 'গদ্দার' শেখ মুজিবুর রহমান খতম হয়েছেন এবং বাংলাদেশ নিজেদের 'ইসলামী রাষ্ট্র' হিসেবে ঘোষণা করেছে।
যদিও দাবির দ্বিতীয় অংশটির কোনো সত্যতা ছিল না, তবে ভারত অবশ্যই পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখছিল – জানাচ্ছেন মানস ঘোষ।
'মৈত্রী চুক্তি প্রয়োগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভারত'
মানস ঘোষ আরও বলছিলেন, "ওদিকে সেই মেসেজ পাওয়ার পরই সমরবাবু আর দেরি না করে ১৭ কি ১৮ তারিখেই ঢাকায় ফিরে এলেন – আর ১৯ তারিখে রাষ্ট্রপতি সমর সেনকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলেন।"
তখনও ঢাকায় নিযুক্ত কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূতই খন্দকার মোশতাকের অ্যাপেয়ন্টমেন্ট পাননি, ফলে নতুন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎকারীদের তালিকায় সমর সেনের নামই ছিল প্রথম।
"অতঃপর সমর সেন দেখা করতে গেলেন, ফুলের স্তবক একটা দিলেন খন্দকার মোশতাককে – আর ফাইল থেকে একটি চিঠি বের করলেন।"
"তাতে লেখা ছিল, আপনারা যদি বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন তাহলে ভারত 'ইন্দো-বাংলাদেশ ট্রিটি'র কয়েকটি বিশেষ ধারা প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে এবং আমাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে!"
"তো সেইটা শুনে খন্দকার মোশতাকের একেবারে, যাকে বলে 'হিস জস ফেল', চোয়াল ঝুলে গেল ... তিনি একেবারে থপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন।"
"যাই হোক, হি গট দ্য মেসেজ – আর বাংলাদেশ ওই পথে আর এগোল না!", এক নিঃশ্বাসে বলে যান মানস ঘোষ।
বস্তুত এরপর বাংলাদেশ বেতার থেকে (তখন অবশ্য বলা হচ্ছিল 'রেডিও বাংলাদেশ') খন্দকার মোশতাক জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিলেন, তাতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হলো।
মানস ঘোষের কথায়, "উনি এমনও বলেছিলেন ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের বন্ধন, বাইরের কোনো শক্তি তা ছিন্ন করতে পারবে না। বাংলাদেশ চাইবে ভারতের সঙ্গে সব সময় বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকুক।"
দেশের রাষ্ট্রপতি পদে খন্দকার মোশতাক আহমেদের মেয়াদ অবশ্য তিন মাসও স্থায়ী হয়নি, কিন্তু পরবর্তী বহু বছর ধরে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে যে একটা স্বাভাবিকতা বজায় রাখার চেষ্টা থাকবে – তা মোটামুটি তখনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
'ভুলটা স্বীকার করার মানসিকতা এখনো তৈরি হয়নি'
চলে আসা যাক সেই ঘটনার ঠিক ৪৯ বছর বাদে – ঘটনাবহুল আর এক অগাস্ট মাসেই নাটকীয়ভাবে পতন হলো ভারতের 'পরীক্ষিত মিত্র' শেখ হাসিনার, তিনি রাতারাতি ভারতে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হলেন।
এবারে কিন্তু দেখা গেল নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে দিল্লির বিন্দুমাত্র তাগিদ নেই, বরং রীতিমতো অনীহা।
দুটো পরিস্থিতির মধ্যে কেন এই পার্থক্য?
দিল্লির কাছে ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এবং দীর্ঘদিনের বাংলাদেশ গবেষক শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, দিল্লিতে তখনকার ও এখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের চিন্তাধারায় ফারাকই এর কারণ।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, "আমি মনে করি অনেক প্র্যাগম্যাটিক বা বাস্তববাদী ছিল তখনকার নেতৃত্ব।"
"মুজিবের হত্যাতে যেটা হওয়ার তা হয়ে গেছে, সেটা তো একটা পর্বের অবসান হলো ... কিন্তু সে তো তখনও আমাদের পাশেরই প্রতিবেশী, তার সঙ্গে যোগাযোগটা তো আমাদের রাখতেই হবে।"
সেই বাস্তববাদী ও 'প্র্যাকটিক্যাল' ভাবনা থেকেই তখনকার ইন্দিরা গান্ধী সরকার বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নিয়েছিল বলে যুক্তি দিচ্ছেন তিনি।
কিন্তু এই মুহূর্তে ভারত সরকারে যারা বাংলাদেশ নীতি ঠিক করেন, তারা স্পষ্টতই সেই ধারণায় বিশ্বাস করেন না।
শ্রীরাধা দত্তর কথায়, "এখন আমার যেটা মনে হয়, এক তো হতে পারে হয়তো আমরা যে ভুল প্রমাণিত হয়েছি বা আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত ভুল ছিল – সেটা অ্যাকসেপ্ট করার জায়গাটাই এখনো তাদের কাছে পুরোপুরি খুলে যায়নি।"
"তারা বোধহয় এখনো ভাবছেন যে না, আমরা ঠিক সামাল দিতে পারব।"
"কিংবা এইটা যেটা হচ্ছে, এটা ইন্টেরিম – আক্ষরিক অর্থেই অন্তর্বর্তী একটা পিরিওড। আবার নর্মালসি ফেরত আসবে। আর নর্মালসি মানেই আবার সব পলিটিক্যাল পার্টি একসঙ্গে কাজ করবে। তার মধ্যে আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনা অবশ্যই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।"
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা ভারত এখনো খারিজ করে দেয়নি বলেই বাংলাদেশের নতুন শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করার কোনো চেষ্টা চোখে পড়ছে না – বিশ্লেষকদের কেউ কেউ সেরকমটাও মনে করেন।
'অসাংবিধানিক সরকারের সঙ্গে কীসের কথাবার্তা?'
দিল্লিতে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক আবার যুক্তি দিচ্ছেন, শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকায় যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, ভারতের বিশ্বাস তাদের কোনো সাংবিধানিক বৈধতা নেই এবং সেখানে ইসলামপন্থিদেরই প্রাধান্য।
আর ঠিক সে কারণেই শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পরও দিল্লির দিক থেকে সম্পর্ক বজায় রাখার যে তাগিদ দেখা গিয়েছিল এখন তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না।
দিল্লিতে পররাষ্ট্র নীতির বিশেষজ্ঞ ও শাসক দল বিজেপির ঘনিষ্ঠ শুভ্রকমল দত্ত যেমন বলছেন, "সরকারটা যেটা এখন বাংলাদেশে আছে, আমরা মনে করি এটা একটা ইল্লিগ্যাল সরকার।"
"তো আমাদের যদি এখন মানে কথাবার্তা বলতেও হয়, এমনিতেও যদি বাংলাদেশের সাথে নর্মালাইজ করতে হয় রিলেশনশিপ – তাহলে কাদের সাথেই বা কথা বলব?"
তাছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যে ভারতের 'উদ্বেগের জায়গাগুলো' অ্যাড্রেস করার কোনো সদিচ্ছাই দেখায়নি, সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
মি. দত্তর কথায়, "প্রধান উপদেষ্টার কথাই ধরুন। যখন ওনার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ছিল, বাংলাদেশে যারা 'র্যাবল রাউজার', মানে মানুষের রাজনৈতিক আবেগে যারা উসকানি দিচ্ছিল – ওদের যখন রাশ টেনে ধরার দরকার ছিল উনি তো করেননি ওটা!"
"তো তার পরে তো (সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে) এটা আশা করাটা বোকামো, না? আশাও করা যায় না!"
উপরন্তু ইসলামপন্থি দল জামায়াত আর "ক্ষুদ্রঋণের কারবারি" মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে একটি "সুবিধাবাদী আপসের" মধ্যে দিয়েই এই সরকার গঠিত হয়েছে বলে শুভ্রকমল দত্ত দাবি করছেন। তার মতে যাতে "ভারতের সন্দেহ তৈরি হওয়ার সঙ্গত কারণ আছে"।
তার কথায়, "আমি তো আশ্চর্য হয়ে যাই যখন দেখি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা সারা জীবন কিন্তু মাইক্রোফিনান্সের কাজটাই করেছেন।"
"অথচ থিওক্রেটিক ইসলাম বা ওয়াহাবি ইসলামের হিসেবে যদি দেখা যায়, তাহলে মাইক্রোফিনান্সিং তো একটা অপরাধ, পাপ। কারণ ইসলামিক রীতিতে তো মাইক্রোফিনান্সিং-এর কোনো জায়গা নেই!"
"তো জামায়াত কীভাবে যে ওনাকে আড়াই দিনের মধ্যে গলায় টেনে নিয়ে, কোলাকুলি করে চেয়ারে বসিয়ে দিল এটাও একটা রহস্য," বিবিসিকে বলছিলেন শুভ্রকমল দত্ত।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে জামায়াত-সহ ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর এই মাত্রাতিরিক্ত প্রভাবও ভারতের আপাতত দূরে থাকার আর একটা বড় কারণ বলে দাবি করছেন তিনি।
সমকালীন ইতিহাসের গবেষকরা মানেন, শেখ মুজিবের জীবনের শেষ পর্বে ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে শুরু করে বাকশাল, কিংবা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার প্রশ্ন বা তার লাহোর সফর – এসব নানা কারণে ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্কে একটা শীতলতা তৈরি হয়েছিল।
শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে অবশ্য সে রকম কোনো তিক্ততা কখনোই হয়নি – আর সেটাও সম্ভবত ১৯৭৫ আর ২০২৪-এ ভারতের দু'রকম আচরণের আর একটা কারণ।