এআর আব্বাস সিদ্দিকী, কুতুবদিয়া : সাগরবেষ্টিত কক্সবাজারের ছোট্ট দ্বীপ কুতুবদিয়া দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে। গত ৩৪ বছরে প্রায় ১৮৩ একর জমি সাগরে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে দ্বীপটির আয়তন দাঁড়িয়েছে ২১৫ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ২০২০ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৬৩ দশমিক ০৪ বর্গকিলোমিটার জমি যাচাই-বাছাই অধিক্ষেত্রের জন্য নির্ধারণ করে। ফলে অবশিষ্ট ১৫২ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার জমির ওপর ভর করে চলছে স্থানীয়দের বসতবাড়ি ও সীমিত আবাদি জমি। কিন্তু অতিরিক্ত রেজিস্ট্রি খরচের কারণে বর্তমানে জমি ক্রয়-বিক্রয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাছশূন্য বঙ্গোপসাগর ও লবণের দরপতনে অর্থনৈতিক সংকটে পড়া অনেক পরিবার সংসার চালাতে জমি বিক্রির চেষ্টা করছে। কিন্তু রেজিস্ট্রির বাড়তি খরচের কারণে কেউ জমি কিনতে আগ্রহী নন। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রকৃত মালিকরা।
তথ্যমতে, কুতুবদিয়ায় জমি রেজিস্ট্রির খরচ প্রতি শতকে সাড়ে ৭ শতাংশ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত জমিতে অতিরিক্ত সাড়ে ৭ শতাংশসহ প্রতি শতকে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে জুলাই মাস থেকে জমি ক্রয়-বিক্রয় কার্যত বন্ধ রয়েছে। এতে সরকারও বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শরীফ আহমেদ, আবু তৈয়ব ও রিদুওয়ানুল হক জানান, চিকিৎসা ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে জমি বিক্রি করতে চাইলে রেজিস্ট্রি খরচ এত বেশি পড়ছে যে, ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে সংকটে পড়েছেন তারা।
অন্যদিকে সাগরে বসতভিটা হারানো ছৈয়দা বেগম, করিমা খাতুন, রোজিনা আক্তার ও রেনু আরা জানান, বর্ষায় ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ায় তারা অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। নতুন করে ঘর করার সামর্থ্য নেই জমি রেজিস্ট্রির অতিরিক্ত খরচের কারণে।
উপজেলার দলিল লেখক জহিরুল ইসলাম ও নুরুল আবছার বলেন, গত এক মাসে কোনো জমি রেজিস্ট্রি হয়নি। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং দ্বীপের মানুষও ভোগান্তিতে পড়েছেন।
কক্সবাজারের জেলা রেজিস্ট্রার রেজাউল করিম বকসী বলেন, “প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়নের ফলে সরকারের আয় বাড়ার পরিবর্তে উল্টো রাজস্ব কমে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, সরকারের আরোপিত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রি খরচ বাতিল না হলে জমি ক্রয়-বিক্রয় স্থবির হয়ে পড়বে এবং দ্বীপবাসীর জীবন আরও কঠিন হয়ে উঠবে। তারা সরকারকে বিষয়টি দ্রুত বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।