শিরোনাম
◈ ন্যায়বিচার পেয়েছেন তারেক রহমান: ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ◈ জি এম কাদের ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ◈ তারেক রহমান দেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন: আযম খান ◈ বিশ্বব‌্যাপী মা‌র্কিন প্রভা‌ব রুখ‌তে ইরান ও চীনের ২৫ বছরের ব্যাপক চুক্তি ◈ ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী চৌধুরী ও পরিবারের ৮ হাজার কোটি টাকার লেনদেন ◈ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস কক্সবাজারে, কৌতূহল ◈ আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০ গাড়ি কেনা হচ্ছে ◈ সোহাগ পরিবহনের কাউন্টারে তাণ্ডব, হামলার নেপথ্য কারন যা জানাগেল ◈ এবার জেলেনস্কিকে মস্কোয় আমন্ত্রণ জানালেন পুতিন ◈ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক রহমান-বাবরের খালাসের রায় আপিল বিভাগেও বহাল

প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:১৫ দুপুর
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গুলশানে প্রবাসফেরত কর্মীদের জন্য ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে তড়িঘড়ি, বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা অর্থ অপচয়ের

রাজধানীর গুলশান এলাকায় দুই দশক ধরে ফেলে রাখা অবকাঠামোয় ২০ শয্যার প্রবাসী কল্যাণ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে |

সহযোগীদের খবর: প্রবাসফেরত কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঢাকার গুলশানে নির্মাণ হবে ২০ শয্যার একটি জেনারেল হাসপাতাল। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হবে এটি। তবে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এ জায়গায় নির্মাণ হওয়ার কথা ৩০০ শয্যার একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল। কিন্তু বর্তমানে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের অর্থায়নে ৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় তরিঘড়ি করে আপাতত ২০ শয্যার হাসপাতাল তৈরির অনুমোদন দিয়েছে বোর্ডের পরিচালনা পরিষদ। সূত্র: বণিকবার্তা 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় হাসপাতাল নির্মাণের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। কোনো বিশেষজ্ঞ কমিটি ছাড়াই বোর্ডের কর্মকর্তাদের দিয়ে হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর এ ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এ হাসপাতাল নির্মাণ করার প্রস্তুতি চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ভবিষ্যতে ৩০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করতে গেলে ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের অর্থ পুরোটাই অপচয় হবে। কর্মকর্তারা যে প্রক্রিয়ায় ডিপিপি তৈরি করেছেন সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। শুধু প্রবাসীদের দেখানোর জন্য তাড়াহুড়া করে যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তা ভবিষ্যতে বড় অর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ৩০০ শয্যার দুটি ১৫ তলা হাসপাতাল ভবন, ১০ তলার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডক্টর-নার্সদের আবাসিক ভবন এবং দুটি আটতলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি না করে আপাতত পরিত্যক্ত দুটি বেজমেন্টসহ একটি ভবনের লেভেল-২ এবং অন্য একটি ভবনের লেভেল-৪ ফ্রেম স্ট্রাকচারে হাসপাতাল নির্মাণের ডিপিপি করে হাসপাতাল তৈরির প্রস্তুতি চলছে। যেখানে ২০ শয্যার একটি জেনারেল হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল সুবিধা, ডাক্তারের সঙ্গে কনসাল্টেশন সেন্টার এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুবিধাদি ও ফার্মেসি স্থাপন করা হবে।

কনসাল্টিং ফার্মের প্রতিবেদন মতে, মূল মাস্টারপ্ল্যানের প্রকল্পটি যেখানে তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেখানে বর্তমানে ২০ শয্যার হাসপাতাল তৈরির যে প্রস্তুতি চলছে তার মেয়াদ ধরা হয়েছে দুই বছর। এছাড়া প্রবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ছাড়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কথা বলা হলেও বর্তমান প্রকল্পে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি।

জানা যায়, উপসাগরীয় যুদ্ধের ফলে ১৯৯০ সালে প্রায় ৭২ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে ফিরতে বাধ্য হন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে ক্ষতিপূরণ দেয় ইউনাইটেড নেশনস কমপেনসেশন কমিশন (ইউএনসিসি)। ক্ষতিপূরণের অর্থ ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা হয়। ২০০১ সালে ওই এফডিআরের সুদ ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে রাজধানীর গুলশান থানার ভাটারা মৌজায় কেনা হয় ১৬৭ দশমিক ২৮ কাঠা জমি। লক্ষ্য ছিল সেখানে প্রবাসীদের কল্যাণে কিডনি হাসপাতাল ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে। ২০০০ সালে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিজিল্যান্স টিমের সভা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিতে সর্বসম্মতভাবে এ প্রস্তাব পাস হয়।

তবে ২০০৪ সালে কিডনি হাসপাতাল ও আইটি সেন্টার নির্মাণের প্রকল্পটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বাতিল হয়ে যায়। এর পরিবর্তে সেখানে ৫০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন পায়। কাজ পায় দুটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড এবং ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড। দুটি বেজমেন্টসহ একটি ভবনের লেভেল-২ পর্যন্ত এবং অন্য একটি ভবনের লেভেল-৪ পর্যন্ত ফ্রেম স্ট্রাকচার নির্মাণের পর ২০০৬ সালে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর এক দশকেরও বেশি সময় পার হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এরপর ২০২০ সালে প্রবাসফেরত ও বিদেশগামী কর্মীদের জন্য আধুনিক একটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। ২০২২ সালে হয় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই। এরপর কনসাল্টিং ফার্ম জানায়, সেখানে ৩০০ শয্যার হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা যাবে এবং এ বিনিয়োগ হবে ঝুঁকিমুক্ত। বর্তমানে মূল মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ৩০০ শয্যার হাসপাতাল না করে ২০ শয্যার একটি জেনারেল হাসপাতাল তৈরির অনুমোদন দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

জানা গেছে, মূল মাস্টারপ্ল্যানের ৩০০ শয্যার হাসপাতাল প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিবর্তে তড়িঘড়ি করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিজস্ব কর্মকর্তাদের দিয়ে ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ। ডিপিপি প্রণয়ন করেছেন বোর্ডের পরিচালক (অর্থ, বাজেট ও কল্যাণ) ড. এটিএম মাহবুব-উল করিম, সহকারী পরিচালক (ভূসম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) মো. হাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. নাজমুল হক ও সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) আবু শাহাদাৎ মো. শরীফ।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের যে কর্মকর্তারা ডিপিপি প্রণয়ন করেছেন তাদের সেই যোগ্যতাই নেই বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘তারা কীভাবে এটি করেছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ। নিজেরা নিজেরা ডিপিপি প্রণয়ন করলে সেটা কখনো পরিশুদ্ধ হবে না। ৩০০ বেডের মাস্টারপ্ল্যান থেকে ২০ বেডের হাসপাতাল তৈরির জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি দরকার।

যেহেতু মূল ডিজাইনের একটি আংশিক কাজ হচ্ছে তাই পূর্ব মূল্যায়ন ছাড়া সরাসরি কাজ করলে অর্থের অপচয় হওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রফেশনাল মূল্যায়ন, ফিজিবিলিটি স্টাডি ছাড়া এটা করা যাবে না। নিজেরা ডিপিপি তৈরি করে, পরিবর্তন করে বোর্ড সভায় অনুমোদন দেয়া স্ট্যান্ডার্ড কোনো সিস্টেম নয়। এ প্রকল্প আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার একটি শঙ্কা রয়ে গেছে। সরকারি যেকোনো উদ্যোগে লাভবান না হলেও অন্তত যেন লোকসান না হয় সেটা প্রথম বিবেচনা থাকতে হবে।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ বিষয় আমার কোনো ধারণা নেই। আমি শুনিনি। আপনার কাছে শুনলাম। ২০ বেডের জন্য করা হচ্ছে কিনা সেটা আমি জানি না। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করেন। আমার কাছে এসব বিষয়ের কোনো তথ্য নেই। এগুলো যখন নীতিনির্ধারণী বৈঠক হয় তখন আলোচনা হয়।

আমি যেটা জানি অর্ধেক করে দুইটা ভবন করে রাখছে। আমার সঙ্গে যখন কথা হয় তখন আমি বলছিলাম এখানে কুয়েত প্রবাসীদের কীভাবে যুক্ত করা যায়, সে ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করো। আমি জানি ওইখানে কোম্পানি করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর কিছু জানি না। আর বেড ২০টা হলে সেখানে শুধু রোগী থাকতে পারবে। একটা হাসপাতালে কি শুধু রোগী থাকে। ওইখানে তো আরো সার্ভিস থাকে। ২০ বেডের মানে তো এই না যে শুধু ২০টা লোকের হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। আরো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকবে।’

হাসপাতাল সম্পর্কে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ভালো জানাশোনা নেই স্বীকার করে মহাপরিচালক ব্যারিস্টার মো. গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া বলেন, ‘যারা ৩০০ বেডের প্ল্যান করছিল তাদের দুইবার ডেকেছি। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে ডিপিপি তৈরি করেছি। এরপর সেনাবাহিনীকেও যুক্ত করব। কারণ সেনাবাহিনী হাসপাতাল করেছে। ফলে ডিপিপিতে ভুল থাকলে তারা ঠিক করে নিতে পারবে। আর এটা থেকে ক্ষতি হবে না। এই জায়গাটা পড়ে আছে, কোনদিন কে দখল করে বলা যায় না। আপাতত বসা দরকার। হাসপাতাল পরিচালনা হবে একটি কোম্পানির অধীনে। যেখানে ৫১ শতাংশ থাকবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের। আর ৪৯ শতাংশ শেয়ার প্রবাসীদের জন্য ছাড়া হবে।’

বোর্ডের মহাপরিচালক বণিক বার্তাকে আরো বলেন, ‘আসলে ২০ বেডের হাসপাতাল করা আমাদের উদ্দেশ্যে না। উদ্দেশ্যটা হলো যে এখানে ২৫ বছর ধরে কেউ যাচ্ছে না। তাই প্রথমে কাউকে নিয়ে বসানো। আমার উদ্দেশ্য ছিল ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হলো এখানে ডায়াগনস্টিক সেন্টার হবে না। বেড ধরে করতে হবে। এখনকার সরকার হলো অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা যদি কিছু একটা করতে পারি তারপর এটি স্বাভাবিকভাবেই এগোবে। আমরা ওই মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে একত্র করেই করব, যাতে আর ভাঙা না লাগে। এখান থেকেই পরে ৩০০ বেড করা যাবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়