চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা নতুন কিছু নয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, যে কোনো বয়স বা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যেই এই সমস্যা দেখা যায়। অনেকেই মনে করেন, একবার চুল পড়া শুরু হলে আর রক্ষা নেই। তবে চিকিৎসক ও ট্রাইকোলজিস্টরা বলছেন-সময়মতো পদক্ষেপ নিলে চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। খবর বিবিসি বাংলা
কারণ জানলেই সমাধানের পথ সহজ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক চুল বিশেষজ্ঞ এনিটান আগিডির মতে, ‘চুল পড়া থেকে কেউই রেহাই পায় না। এমনকি আমিও এই সমস্যার ভুক্তভোগী।’ জেনেটিক, বয়সজনিত পরিবর্তন, পুষ্টির ঘাটতি, মানসিক চাপ কিংবা খারাপ হেয়ারস্টাইলিংয়ের অভ্যাস-সবকিছুই দায়ী হতে পারে চুল পড়ার জন্য।
চিকিৎসা পরিভাষায় চুল পড়ার নাম অ্যালোপেশিয়া। গবেষণা বলছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী ১৬ শতাংশ পুরুষ চুল পড়ায় ভোগেন, যা ৪০ পার হলে বেড়ে দাঁড়ায় অর্ধেকের বেশি। নারীদের মধ্যেও এক-তৃতীয়াংশ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই সমস্যায় পড়েন।
সমাধান শুরু হোক রোগ নির্ণয় দিয়ে
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আঁচল পান্থ বলেন, ‘চুল পড়া বুঝতেই হলে প্রথমেই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ রোগ নির্ণয় না করে চিকিৎসা শুরু করলে লাভ নেই।’
তিনি জানান, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, ও পুষ্টির ঘাটতি দূর করা-এসবই চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
মিনোক্সিডিল, কেটোকোনাজল-কাজের কিন্তু ম্যাজিক নয়
চুল পড়া ঠেকাতে অনেকেই মিনোক্সিডিল বা ক্যাফেইনযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করেন। এটি চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। তবে নতুন চুল গজানোয় এর কার্যকারিতা সীমিত।
অন্যদিকে, কেটোকোনাজল মাথার ত্বকের প্রদাহ ও ছত্রাকজনিত ইনফেকশন রোধে সহায়ক। এটি ডিএইচটি হরমোন কমাতে পারে, যা চুল পড়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
জীবনযাপনের বদলেই রক্ষা সম্ভব চুল
হেয়ার স্টাইলেও থাকতে হবে সচেতনতা। ট্রাইকোলজিস্ট এনিটান আগিডি বলছেন, ‘চুল খুব টাইট করে বাঁধলে বা হিট স্টাইলিং বেশি করলে গোড়ায় চাপ পড়ে, যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে।’
ধূমপান, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত চাপ-এগুলোও রক্তপ্রবাহ কমিয়ে চুল পড়া বাড়াতে পারে। ত্বক পরিষ্কার না রাখলেও সমস্যা বাড়ে।
ডা. পান্থ পরামর্শ দেন, ‘তৈলাক্ত মাথা হলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করুন, শুষ্ক হলে সপ্তাহে অন্তত তিনবার।’
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট-শেষ চেষ্টার অস্ত্র
চুল পড়ার দৃশ্যমান সমাধান হিসেবে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট জনপ্রিয় হলেও, এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। দাম বেশি, ঝুঁকিও কম নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রান্সপ্লান্ট করা হলেও প্রাকৃতিক চুলের যত্ন না নিলে পরবর্তীতে আবারও সমস্যায় পড়তে পারেন।
এনিটান আগিডির ভাষায়, ‘ট্রান্সপ্লান্ট হলো জ্যাকেট পরা-কিন্তু ভিতরে কিছু না থাকলে শীত লাগবেই।’
চুল পড়া বন্ধ করা সম্ভব, তবে তা এক দিনের ব্যাপার নয়। সময়, সচেতনতা আর পেশাদার পরামর্শই এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।