সরকার কর্তৃক ৮ই আগস্টকে 'নতুন বাংলাদেশ দিবস' হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম। যমুনা টেলিভিশনের এক টক শো-তে তিনি বলেন, ৮ই আগস্ট দ্বিতীয় স্বাধীনতার শুরু নয়, বরং দ্বিতীয় স্বাধীনতা নষ্টের এবং বিপ্লব বেহাত হওয়ার কর্মযজ্ঞ শুরুর দিন। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের একাংশের অদক্ষতা, অনভিজ্ঞতা ও সাহসিকতার অভাবকে এর জন্য দায়ী করেছেন।
টক শো-এর সঞ্চালক রোকসানা আঞ্জুমান নিকোল সরকারি প্রজ্ঞাপনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ৫ই আগস্টকে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস' এবং ৮ই আগস্টকে 'নতুন বাংলাদেশ দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তিনি সারজিস আলমের কাছে প্রশ্ন রাখেন, যেহেতু ৮ই আগস্টে গঠিত ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগদাতা ছাত্ররাই, তবে কারা এই বিপ্লবকে নষ্ট করলো বা বেহাত হওয়ার সুযোগ দিলো?
জবাবে সারজিস আলম বলেন, "সেই সরকারের নিয়োগদাতা আমরা না।" তিনি স্পষ্ট করেন যে, ছাত্ররা আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল বিভিন্ন পক্ষ যেমন—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াত, নাগরিক সমাজ এবং শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ের মাধ্যমে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে সমর্থন করলেও পুরো উপদেষ্টা পরিষদ তাদের পছন্দ ছিল না।
সারজিস আলম অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করে বলেন:
উপদেষ্টাদের ব্যর্থতা: উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত অর্ধেক সদস্য প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। অনভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতার অভাব এবং সাহসিকতার অভাবে তারা গতানুগতিক রুটিন কাজের বাইরে যেতে পারছেন না।
বিপ্লব বেহাত: উপদেষ্টাদের এই দুর্বলতার সুযোগে স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, আবার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় বিবেচনায় পদ দেওয়া হচ্ছে, যা পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই দুর্নীতির পুনরাবৃত্তি।
প্রশাসনিক দুর্বলতা: পুলিশ প্রশাসনে যারা আগে মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা পুরনো রূপে ফিরে আসছে এবং দুর্নীতি করছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোও এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা: সারজিস আলম অভিযোগ করেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও অদক্ষ বা ব্যর্থ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়ার মতো সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, "আগে লাউ ছিল, এখন কদু হয়েছে"—অর্থাৎ শুধু নাম বা মানুষ পরিবর্তন হলেও ব্যবস্থার কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। তার মতে, সবচেয়ে ভালো হতো একটি বিপ্লবী সরকার বা সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা গেলে। উৎস: যমুনা টেলিভিশন।