ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ বন্ধ, এখন আবেদন নিষ্পত্তি হবে জেলা-উপজেলা পর্যায়েই। বয়স সংশোধনের নতুন নিয়মাবলী একনজরে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: জন্ম নিবন্ধনে ভুল তারিখ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা ভোগান্তির অবসান ঘটাতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। নতুন পরিপত্র জারির মাধ্যমে বয়স সংশোধনের প্রক্রিয়াকে এখন পুরোপুরি বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে আর ঢাকায় রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে দৌড়াতে হবে না, জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকেই মিলবে সমাধান।
চলুন জেনে নেওয়া যাক বয়স সংশোধনের নতুন নিয়ম এবং এর জন্য কী কী কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বয়স সংশোধনের আবেদন এখন দুটি ধাপে নিষ্পত্তি হবে:
১. ৫ বছর পর্যন্ত বয়স সংশোধন (উপজেলা পর্যায়):
যাদের জন্ম নিবন্ধনের তারিখ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের (যেমন: পিইসি, জেএসসি, এসএসসি) তারিখের মধ্যে পার্থক্য ৫ বছরের কম, তাদের আবেদন নিষ্পত্তি করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO)। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদকেই মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হবে।
২. ৫ বছরের বেশি বয়স সংশোধন (জেলা পর্যায়):
বয়সের পার্থক্য ৫ বছরের বেশি হলে সেই আবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জেলার উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার (DDLG)-এর কাছে পাঠানো হবে। আগে এই ধরনের বড় সংশোধনের জন্য ঢাকায় যেতে হতো, যা এখন জেলা পর্যায় থেকেই করা সম্ভব।
৩. শিক্ষাগত সনদ না থাকলে:
যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত সনদ নেই, তাদের বয়স প্রমাণের জন্য জেলার সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। সেই বোর্ডের দেওয়া রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার (DDLG) সংশোধনের অনুমোদন দেবেন।
১. অনলাইন আবেদন: প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইট (https://bdris.gov.bd/) এ গিয়ে "জন্ম তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন" অপশনে ক্লিক করতে হবে।
২. তথ্য পূরণ: জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে যে তথ্যটি সংশোধন করতে চান (এক্ষেত্রে জন্মতারিখ) তা নির্বাচন করুন এবং সঠিক তারিখটি লিখুন।
৩. কাগজপত্র সংযুক্তি: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। প্রতিটি ফাইলের সাইজ ১০০ কিলোবাইটের (100 KB) মধ্যে হতে হবে।
৪. আবেদন জমা: অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করার পর আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি এবং সংযুক্ত সকল কাগজের সত্যায়িত ফটোকপি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের অফিসে জমা দিতে হবে।
৫. অনুমোদন প্রক্রিয়া: আপনার আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে পর্যায়ক্রমে সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) অথবা উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার (DDLG)-এর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। আবেদন অনুমোদন হয়ে গেলে আপনি একটি এসএমএস পাবেন এবং সংশোধিত কপি সংগ্রহ করতে পারবেন।
সকলের জন্য আবশ্যক:
অনলাইন আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি: ওয়েবসাইটে আবেদন করার পর যে কপিটি পাবেন।
মূল জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি: যে সনদটি সংশোধন করতে চান।
অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): পিতা এবং মাতা উভয়ের এনআইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি। যদি তাদের এনআইডি না থাকে, তবে তাদের জন্ম সনদ দেওয়া যেতে পারে।
আবেদনকারীর নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): যদি আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হয়।
বয়স প্রমাণের জন্য নিচের যেকোনো একটি বা একাধিক (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে):
শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ: এসএসসি/সমমান, জেএসসি বা পিইসি পাসের সার্টিফিকেট (অবশ্যই সত্যায়িত ফটোকপি)। এটি বয়স সংশোধনের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ।
পাসপোর্ট: আবেদনকারীর পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে)।
মেডিকেল বোর্ডের সার্টিফিকেট: শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে সিভিল সার্জন কর্তৃক গঠিত মেডিকেল বোর্ড থেকে বয়স প্রমাণের সার্টিফিকেট।
হলফনামা (Affidavit): ক্ষেত্রবিশেষে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিক কর্তৃক সম্পাদিত একটি হলফনামা প্রয়োজন হতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
সকল ফটোকপি অবশ্যই ১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে।
দালাল বা প্রতারক চক্রের খপ্পরে না পড়ে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদ বা সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।
আবেদনের অবস্থা অনলাইনে নিয়মিত চেক করুন।
সরকারের এই নতুন পদক্ষেপে জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতা বহুলাংশে কমে আসবে এবং সাধারণ মানুষ দ্রুত ও সহজে সেবা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।