আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ (AICR)-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতিদিন অন্তত ৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করা উচিত।
AICR কোনো নির্দিষ্ট চারটি খাবারের কথা না বললেও, তাদের গবেষণা মতে কিছু বিশেষ শ্রেণীর খাবার এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। নিচে এমন চারটি শ্রেণীর খাবার উল্লেখ করা হলো:
১. শস্য বা হোল গ্রেইন (Whole Grains)
উদাহরণ: ওটস, ব্রাউন রাইস, বার্লি, কুইনোয়া, হোল-হুইট আটার রুটি বা পাউরুটি।
কারণ: হোল গ্রেইনে থাকা অদ্রবণীয় ফাইবার (insoluble fiber) মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এটি দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। এর ফলে, ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকারক পদার্থগুলো কোলনের সংস্পর্শে কম সময় থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৯০ গ্রাম হোল গ্রেইন গ্রহণ করলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ১৭% পর্যন্ত কমতে পারে।
২. শিম ও ডাল (Beans and Legumes)
উদাহরণ: কালো শিম (black beans), কিডনি বিনস (rajma), মসুর ডাল, ছোলা ইত্যাদি।
কারণ: এই খাবারগুলো ফাইবার, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এগুলোতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়ায় ফারমেন্টেড (fermented) হয়ে বিউটিরেট (butyrate) নামক একটি শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে। এই বিউটিরেট কোলনের কোষকে শক্তি জোগায় এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিকে বাধা দিতে পারে।
৩. ব্রকোলি ও অন্যান্য ক্রুসিফেরাস সবজি (Broccoli and Other Cruciferous Vegetables)
উদাহরণ: ব্রকোলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কেল (kale)।
কারণ: এই সবজিগুলোতে শুধু ফাইবারই নয়, সালফোরাফেন (sulforaphane) নামক একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ক্যানসার যৌগও থাকে। ফাইবার কোলনকে পরিষ্কার রাখে এবং সালফোরাফেন ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করতে ও তাদের বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে।
৪. বেরি জাতীয় ফল (Berries)
উদাহরণ: রাস্পবেরি, ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি।
কারণ: বেরি জাতীয় ফলগুলো ফাইবারের চমৎকার উৎস। বিশেষ করে রাস্পবেরিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এছাড়া এগুলোতে অ্যান্থোসায়ানিন (anthocyanins) নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং প্রদাহ কমায়, যা ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য জরুরি।
AICR-এর গবেষণা অনুযায়ী, ফাইবার মূলত তিনটি উপায়ে কাজ করে:
দ্রুত নিষ্কাশন: ফাইবার মলের ওজন বাড়িয়ে দেয়, ফলে তা দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এতে কোলনের প্রাচীরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শের সময় কমে যায়।
বিউটিরেট তৈরি: অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ফাইবারকে ভেঙে বিউটিরেট তৈরি করে, যা কোলনের কোষকে সুস্থ রাখে এবং ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি দমন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে পেট ভরা থাকে, যা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়ক। স্থূলতা কোলন ক্যানসারের একটি অন্যতম ঝুঁকি।
এই তথ্যের মূল ভিত্তি হলো আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ (AICR) এবং ওয়ার্ল্ড ক্যানসার রিসার্চ ফান্ড (WCRF)-এর যৌথভাবে পরিচালিত "Continuous Update Project" (CUP)।
AICR on Colorectal Cancer Prevention:
আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ তাদের ওয়েবসাইটে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য খাদ্যতালিকা এবং জীবনযাত্রা বিষয়ক বিস্তারিত সুপারিশমালা প্রকাশ করেছে।
WCRF/AICR Colorectal Cancer Report:
এই সংস্থাগুলোর বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, ফাইবারযুক্ত খাবার, বিশেষ করে হোল গ্রেইন, কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
লিঙ্ক: WCRF - Diet, Nutrition, Physical Activity and Colorectal Cancer Report
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই তথ্যগুলো রোগ প্রতিরোধের জন্য সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়েছে। যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করুন।