শিরোনাম
◈ ব্যান্ডেজে লেখা ‘হাড় নেই, মাথায় চাপ দিবেন না’, মামুনের মাথার খুলি ফ্রিজে ◈ নেপালে বন্ধ হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ ২৬টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, সরকারের কড়াকড়ি ◈ ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ ◈ শেখ হাসিনা পালালেও তার প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে: রিজভী ◈ রাশিয়া-ন্যাটো উত্তেজনায় আশঙ্কা: ২০২৬ সালের মধ্যে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ফ্রান্সের হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ ◈ এজলাসে বিচারকের সামনেই সাংবাদিককে মারধর ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিজের, সহায়তা করবে সরকার: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চাপে নিম্নবিত্ত, অসহায় মধ্যবিত্ত ◈ নাটোর থেকে অপহৃত বিকাশ কর্মীকে টাঙ্গাইল থেকে উদ্ধার, জড়িত ভুয়া পুলিশ আটক ◈ ডিমের ডজন ১৫০ টাকা ছাড়ালেই আমদানির অনুমতি দেবে সরকার

প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:৫৩ বিকাল
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৩ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চাপে নিম্নবিত্ত, অসহায় মধ্যবিত্ত

মহসিন কবির: দ্রব্যমূলের উর্ধগতিতে বেশি চাপের নিম্নবিত্ত। অসহায় হয়ে পেড়েছে মধ্যবিত্ত। কান তারা লাইনে দাঁড়িয়ে জিনিসপত্র কিনতে পারেছে না। কারো কাছে হাত পাততেও পারছেন না। একটি পরিবারের মোট মাসিক খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাবার কেনায়। শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যয়ও দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না আয়। 

ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে। একদিকে আয় না বাড়া, আরেকদিকে মূল্যস্ফীতির কারণে বাড়তি ব্যয়ের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে যারা দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে, আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামঞ্জস্য করতে না পেরে তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। আর বাড়তি ব্যয় সামাল দিতে না পারা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো আছে হাঁসফাঁস অবস্থায়।

সম্প্রতি পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের বড় একটি অংশ পূর্ণাঙ্গ কর্মসংস্থানের বাইরে আছে। এসব কর্মজীবীর প্রায় চারজনের মধ্যে একজন (৩৮ শতাংশ) পূর্ণ সময় (সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা) কাজ করছেন না। তারা পছন্দমতো কাজ পাচ্ছেন না। তারা হলেন আন্ডারএমপ্লয়েড বা ছদ্মবেকার।

গবেষণায় বলা হয়, আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, তিন বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ সময়ে ধারাবাহিকভাবে মানুষের মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম ছিল। ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে মজুরি বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং প্রকৃত আয় কমেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতির প্রভাব আছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গরিব মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগেছে, আয় কমে যাওয়ায় অনেকে গরিব হয়েছেন। অথচ গরিব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের সুরক্ষায় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। দারিদ্র্য বৃদ্ধি ঠেকাতে উদ্যোগ কম। বিশেষ করে চাল, ডালসহ কৃষিপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে হবে। এ ছাড়া সরবরাহ-শৃঙ্খল ঠিক করতে হবে। আওয়ামী লীগের সময়ে সুবিধাভোগী অনেক ব্যবসায়ী পণ্যের বাজারে ছিলেন।

জানা গেছে, গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই খাতেই আগের মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

জানা গেছে, দুই-তিন বছর ধরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। এনবিআরও তেল, আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ বেশকিছু নিত্যপণ্যে শুল্ক-কর কমিয়ে দেয়। বাজারে নিত্যপণ্যের আমদানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়েছে। খাবার, চিকিৎসা, বাসাভাড়া ও শিক্ষা- এমন প্রতিটি খাতেই ব্যয় বেড়েছে। ফলে দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত সবাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখতে পারছেন না।

জানা গেছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ বা প্রায় ২৮ শতাংশ। সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালে এই হার ছিল ১৮ দশমিক ৭। সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালের অতি দারিদ্র্যের হার ছিল ৫ দশমিক ৬। ২০২৫ সালে এসে অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৫-এ। এর মানে হলো, গত তিন বছরের মধ্যে দেশের দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। এখনও ১৮ শতাংশ পরিবার যে কোনো সময় গরিব হয়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্র না হলেও দারিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরেই অবস্থান করছে। এদের অবস্থান টেকসই নয়, সামান্য ধাক্কায় তারা দরিদ্র হয়ে যেতে পারে। কিছু মানুষ নাক বরাবর পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। সামান্য ঢেউ এলেই তারা তলিয়ে যাবে। তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোনোভাবে শুধু জীবনধারণ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না।

সম্প্রতি প্রকাশিত বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পরিবার নিজের প্রয়োজন অনুসারে আয় করতে পারছে না। তাদের ধারদেনা করে চলতে হয়। পিপিআরসি বলছে, ৫২ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে ঋণ নিয়েছে। সংসার চালানোর খরচ মেটাতে সবচেয়ে বেশি পরিবার ঋণ নিয়েছে। এক-তৃতীয়াংশ পরিবার শুধু সংসার চালাতে ধারদেনা করতে বাধ্য হয়।

বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, দারিদ্র্য গত তিন বছরে বেড়েছে। এটি খাদ্য মূল্যস্ফীতি এবং কর্মসংস্থান স্বল্পতার কারণে হয়েছে। এ দুটি সমস্যা সমাধান না করলে জোড়াতালি দিয়ে খুব বেশিদূর এগোনো যাবে না। সরকারি সহায়তায় হয়তো কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে। তবে সেক্ষেত্রেও অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। তা ছাড়া দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষের সহায়তা প্রয়োজন। এটা দেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা সরকারের নেই। এ জন্য যে কারণে দরিদ্র তৈরি হচ্ছে। তা বন্ধ করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ গাজীপুরের ছোট-বড় মিলিয়ে ১০৬টি শিল্পকারখানা নানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পপুলিশের তথ্যানুসারে, চাকরি হারিয়েছেন ৭৩ হাজার শ্রমিক। অনেক শ্রমিক আগের চেয়ে কম বেতনে চাকরি পেলেও হাজার হাজার শ্রমিক এখনও বেকার। অনেকেই চাকরি না পেয়ে টিকে থাকতে অটোরিকশা চালাচ্ছেন; সবজি বিক্রি, ফেরি করে পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে নানা ধরনের পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক এবং ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চের চেয়ারম্যান ড. শহীদুল জাহীদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশের আয় তাদের খরচকে সামাল দিতে পারছে না। তারা সরকারি-বেসরকারি নানা সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া বিরাজমান মূল্যস্ফীতিতে প্রকৃত আয় কমেছে। সেভাবে মজুরি বাড়েনি। সংসার চালাতে বা জীবনধারণে প্রয়োজন অনুসারে আয় করতে না পারলে ধারদেনা করে দেশের অনেক পরিবার। এ জন্য সরকারকে সামাজিক নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে নগদ সহায়তা দিলে ভালো হয়। এ ছাড়া খাদ্যে ভর্তুকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়