তপু সরকার হারুন, জেলা প্রতিনিধি শেরপুর: গাভী বিক্রি করে ও কিস্তিতে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান কিনেছিলেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুণা গ্রামের হতদরিদ্র জাকির হোসেন। আয়ের অন্যকোন উৎস না থাকায় ভ্যান চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন।
প্রতিদিনের মতো ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের আযান হলে কর্ণঝোড়া বাজারের জামে মসজিদে নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে ফিরে এসে দেখেন তাঁর ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি চুরি হয়ে গেছে। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ওই ঘটনায় একদিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর কান্না থামছে না। জাকির হোসেন সিংগাবরুণা ইউনিয়নের সিংগাবরুণা গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে। ওই ঘটনার পর বুধবার রাতেই জাকির হোসেন ও তাঁর ব্যবহৃত ভ্যানটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কর্ণঝোড়া জামে মসজিদ কমিটির সদস্য জিয়া বলেন, মাগরিবের নামাজ পড়ার পর এসে দেখে জাকির হোসেন কান্না করছেন। পরে জানতে পারলাম তার ভ্যানটি চুরি হয়েছে। ভ্যানের পিছনে একটি মোবাইল নাম্বার লেখা ছিলো। চক্রের লোকজন সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে ২০ হাজার টাকা চেয়েছিলো। কিন্তু পরে আর কোন যোগাযোগ করেনি।
বৃহস্পতিবার সকালে জাকির হোসেন বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে চরম অভাব অনটনে দিন কাটছিলো। আয়-উপার্জনের অন্য কোন মাধ্যম না থাকায় গাভী বিক্রির ৪০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করে কিস্তিতে গড়খোলা বাজার থেকে ৯৬ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কিনেছিলাম। এটার ইনকাম দিয়েই কিস্তি পরিশোধের পাশাপাশি আমার সংসার চলছিলো। কিন্তু ভ্যানটি চুরি হওয়ায় আমার আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে গেল।
এখনো কিস্তির প্রায় ১০ হাজার টাকা বাকী রয়েছে। সংসার চালাবো কিভাবে বুঝতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, বুধবার বিকালে সিংগাবরুণা মোড় থেকে ২ জন যাত্রী নিয়ে কর্ণঝোড়া বাজারে যাই। বাজারে পৌঁছার আগেই মাগরিবের নামাজের আযান দেয়। তাই জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে যাত্রী নামিয়ে তাড়াহুড়া করে মসজিদে যাই। নামাজ শেষে এসে দেখি ভ্যান নেই। অনেক খুঁজেও আর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, বিষয়টি জেনেছি। রাতেই পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। তদন্ত চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদের সাথে কথা হলে তিনি ব্যাটারিচালিত ভ্যান মালিক জাকির হোসেনকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।