নেপাল সরকার বলেছে, এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ব্যক্তি ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে ঘৃণা ও গুজব ছড়াচ্ছে, সাইবার অপরাধ করছে এবং সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। তাই সরকার এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর সরকারের ধারাবাহিক নিয়ন্ত্রণনীতির অংশ।
সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধিত না হওয়ায় ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স, লিংকডইনসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে নেপাল। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এসব প্ল্যাটফর্মকে নিবন্ধন করার সর্বশেষ সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার নেপালি সরকার দেশটির টেলিকমিউনিকেশনস অথরিটিকে (এনটিএ) অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা এএফপি ও রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শুধু পাঁচটি সাইট সময়মতো নিবন্ধিত হয়েছে—টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিমবাজ ও পোপো লাইভ। আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ ছাড়া অন্য প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মোট ২৬টি প্ল্যাটফর্ম এ সিদ্ধান্তের ফলে প্রভাবিত হয়েছে। ব্যবহারকারীর দিক থেকে নেপালে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকের পাশাপাশি ইউটিউব, এক্স ও লিংকডইন বন্ধ হয়ে যাওয়ার তালিকায় রয়েছে।
নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং এএফপিকে বলেছেন, ‘আমরা নিবন্ধনের জন্য তাদের যথেষ্ট সময় দিয়েছি এবং বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা আমাদের অনুরোধ উপেক্ষা করেছে। তাই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’ মন্ত্রণালয়ের আরও এক কর্মকর্তা রবীন্দ্র প্রসাদ পাউডেল জানান, নির্দেশিকাটি ২০২৩ সাল থেকে কার্যকর ছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে একটি আপিল করা হলেও এটি বহাল থাকে।
তবে ডিজিটাল রাইটস নেপালের সভাপতি ভোলানাথ ঢুঙ্গানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়াকে সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণমূলক’ দৃষ্টিভঙ্গি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি মনে করেন, এর ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, নেপালের প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
ভোলানাথ ঢুঙ্গানা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা খারাপ নয়, কিন্তু তার জন্য আমাদের প্রথমে আইনি কাঠামো থাকতে হবে। এভাবে হঠাৎ বন্ধ করা নিয়ন্ত্রণমূলক।’
নেপালে এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিল। গত জুলাইয়ে অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগে টেলিগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের আগস্টে টিকটকের দক্ষিণ এশীয় শাখা নতুন আইন মানতে রাজি হলে ৯ মাসের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।