রাশিদুল ইসলাম: অত্যন্ত ক্ষমতাশালী অ্যান্টেনার সাহায্যেই এমন অসাধ্যসাধন করতে পারে পিঁপড়েরা। বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক জার্নালে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এভাবে গন্ধ শুঁকে শরীরে ক্যান্সার কোষের উপস্থিতির কথা জানার জন্য পিঁপড়েকে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা সহজ এবং একই সঙ্গে কম খরচসাপেক্ষ পদ্ধতি।
ক্যান্সারাস টিউমার অর্থাৎ ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কোষ থেকে বেশ কয়েক ধরনের উদ্বায়ী তরল রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। ঘাম এবং মূত্রের মধ্যে সেই সব রাসায়নিকের নমুনা রয়ে যায়। পিঁপড়ের অ্যান্টেনায় অসংখ্য অলফ্যাক্টরি স্নায়ুর উপস্থিতির কারণে তাদের ঘ্রাণশক্তি খুব তীব্র। ফলে দেহ থেকে নিঃসৃত ঘাম ও মূত্রের মধ্যে বিশেষ রাসায়নিকের উপস্থিতি গন্ধ শুঁকে চিহ্নিত করতে পারে পিঁপড়ে, এমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের।
এই সমীক্ষা করার জন্য মানুষের স্তন ক্যান্সার কোষকে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে ইঁদুরের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সেই ক্যান্সার কোষযুক্ত এবং ক্যান্সারবিহীন ইঁদুরের মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করেন বিজ্ঞানীরা। এরপর ট্রেনিং দেওয়ার জন্য ফরমিকা ফুসকা নামে একটি বিশেষ প্রজাতির ৩৫টি পিঁপড়েকে সেই দুই ধরনের মূত্রের নমুনার সামনে ছেড়ে দেওয়া হয়। পিঁপড়েগুলি যাতে দীর্ঘ সময় ক্যান্সাররের উপস্থিতি থাকা মূত্রের গন্ধ শোঁকার সুযোগ পায়, সেই উদেশ্যে ওই প্রস্রাবের নমুনার সামনে চিনি মেশানো জলের ফোঁটা ফেলে দেওয়া হয়। তাঁদের হিসেবে মতোই, সুস্থ ইঁদুরের তুলনায় ক্যান্সার হওয়া ইঁদুরের প্রস্রাবের নমুনার সামনে বেশি সময় কাটায় পিঁপড়েগুলি।
এবার গবেষকরা মানুষের মূত্র নিয়ে একই পরীক্ষা করতে চাইছেন। ক্যান্সার কোষ চিহ্নিতকরণের জন্য কুকুরকে আগে কাজে লাগানো হলেও এই কাজে তাদের চেয়েও বেশি উপযুক্ত পিঁপড়ে। এর কারণ হল, পিঁপড়েকে ট্রেনিং দেওয়া কুকুরের তুলনায় অনেক কম সময়সাপেক্ষ। কুকুরকে এই বিষয়ে ট্রেনিং দিতে যেখানে ৬ মাস সময় লাগে, সেখানে পিঁপড়ের ক্ষেত্রে এই সময় মাত্র ১০ মিনিটের ৩টি রাউন্ড।
এই সমীক্ষাটির লেখক সর্বন প্যারিস নর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক প্যাট্রিজিয়া ডি’এতর জানিয়েছেন, ‘সুস্থ এবং ক্যান্সার রোগী চিহ্নিত করার জন্য বায়ো-ডিটেক্টর হিসাবে পিঁপড়েকে ব্যবহার করা যেতে পারে।’