নাজিয়া আফরিন: হাইপোথাইরয়েডিজম: ‘হাইপো’ শব্দের অর্থ কম। যখন কোন কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি প্রয়োজনের তুলনায় কম হরমোন তৈরি করে তখন তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে।
হাইপোথাইরয়েডিজম সমস্যা বুঝবার কিছু লক্ষণ: থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বিপাক ক্রিয়া দেরিতে হয় তাই এই রোগের প্রথম লক্ষণ ওজন বেড়ে যাওয়া।
● অবসাদগ্রস্ততা, ঘুম ঘুম ভাব।
● ঠাণ্ডা একদমই সহ্য করতে না পারা।
● হৃদস্পন্দন কমে যাওয়া।
● উচ্চ রক্তচাপ হওয়া।
● বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
● গলগন্ড দেখা যাওয়া।
● চামড়া ও চুল শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাওয়া।
● কানে কম শোনা বা একদমই না শোনা।
● স্নায়ু ও মাংসপেশী নির্ভর রিফ্লেক্স কমে যাওয়া।
● মাংসপেশীতে প্রচন্ডচাপ ও ব্যথা অনুভব করা।
● অনিয়মিত মাসিক ও মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত।
● মুখ ও পা ফুলে যাওয়া।
● কোষ্ঠকাঠিন্য।
● বন্ধ্যাত্বতা।
● যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া।
● স্বরের কোমলতা কমে যাওয়া, কন্ঠ ভারী ও কর্কশ শোনানো।
● পেটে পানি জমা।
● স্মৃতিশক্তি লোপ ও বিষন্নতা।
হাইপোথাইরয়ডিজমের জন্য পুষ্টি উপাদানসমূহ: থাইরয়ডের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক-
আয়োডিন: আয়োডিন একটি অপরিহার্য খনিজ যা থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজন এবং এই পুষ্টির ঘাটতি হাইপোথাইরয়ডিজম হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, অপর্যাপ্ত আয়োডিন গ্রহণ বিশ্বব্যাপী হাইপোথাইরয়ডিজমের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ।
সেলেনিয়াম: সেলেনিয়াম হল আরেকটি খনিজ যা থাইরয়েড স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় । এটি থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে থাইরয়েডকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে। এর মধ্যে রযছে বাদাম, টুনা মাছ, সামুদ্রিক মাছ, ডিম এবং শষ্যদানা।
জিংক: পর্যাপ্ত জিঙ্ক খাদ্য তালিকায় না থাকলে থাইরয়েড ফাংশন এবং স্বাস্থ্যের অন্যান্য অনেক দিকে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তাই ডায়েটে এই পুষ্টির যথেষ্ট পরিমাণ থাকাটা অপরিহার্য। দুধ, দুগ্ধজাত খাবার,ডিম, বাদাম, শিম, মাশরুম, চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে জিংক থাকে।
ভিটামিন ডি: হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়াার সম্ভাবনা বেশি। ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম থাকলে তা থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। যেহেতু ভিটামিন ডি অনেক খাবারে ঘনীভূত হয় না, তাই পরিপূরক এর প্রয়োাজন।
ভিটামিন বি ১২: হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি দেখা যায়। সর ছাড়া দুধ, মুরগী, ডিম, টুনা মাছ, পনির ও বিভিন্ন রকম ডালে ভিটামিন বি ১২ আছে। এসব খাবার খাদ্যতালিকায় যোগ করতে হবে।
ম্যাগনেসিয়াম: ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রার ঘাটতি থাইরয়েডের কর্মহীনতার সাথে যুক্ত এবং হাইপোথাইরয়ডিজম হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সামুদ্রিক মাছ, বীচি জাতীয় খাবার, কুমড়ার বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, বিভিন্ন রকম বাদাম ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। এগুলো প্রায়শই খেতে হবে।
এছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন হাইপোথাইরয়ডিজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির উদাহরণ।
মূলত: স্বাস্থ্যকর থাইরয়েড ফাংশনের জন্য অনেক ভিটামিন এবং খনিজ প্রয়োজন। হাইপোথাইরয়ডিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিভিন্ন পুষ্টি ও পরিপূরকের অভাব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং এদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে।
নাজিয়া আফরিন: স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কর্মকর্তা - মানবিক সাহায্য সংস্থা