শাহীন খন্দকার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের অডিটোরিয়ামে ভাসকুলার বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে জানানো হয়, রক্তনালীর ব্লকের কারণে আর কেটে ফেলতে হবে না হাত, পা এবং আঙ্গুল। অপারেশন ছাড়াই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদেরকে অঙ্গহানি থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
রক্তনালী রোগের সর্বশেষ তথ্য নিয়ে ‘আপডেট অফ ভাসকুলার সার্জারি’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। উপাচার্য বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরণের আধুনিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে না হয় সেই লক্ষ্যে বর্তমান প্রশাসন কাজ করছেন।
তিনি বলেন, অত্যাধুনিক চিকিৎসার উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্ল্যাস্টিক সার্জারি, ভাসকুলার সার্জারি, থোরাসিক সার্জারি, ইনফার্টিলিটি ইত্যাদি। উপাচার্য তার বক্তব্যে ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ সকল বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দেন।
আরও বলেন, ভাসকুলার সার্জারি বিশেষজ্ঞ সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হবে। চিকিৎসাসেবার সম্প্রসারণে স্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গবেষণাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গবেষণার জন্য সরকারের যে একশত কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে সেখান থেকে চার ভাগের এক ভাগ অর্থা পঁচিশ শতাংশ তার মানে পচিশ কোটি টাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পাবেন।
সেমিনারে জানানো হয়, রক্তনালীসমূহের রোগের কারণে মানুষের অঙ্গহানি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যে রোগীদের অপারেশন সম্ভব নয় বর্তমানে চিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই তাদের অঙ্গ রক্ষা করা সম্ভব। রক্তনালীর ব্লকের কারণে পায়ের গ্যাংরিন হয়। স্টেমসেল থেরাপি ও প্রোস্টাগ্লান্ডিন থেরাপির মাধ্যমে নতুন রক্তনালী তৈরি করে বিনা অপারেশনে চিকিৎসা করে রোগীদের পঙ্গুত্ব বরণ করা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে। ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসায় লেজার থেকে শুরু করে সব ধরণের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে এই বিভাগে।
এছাড়াও আঁকাবাঁকা শিরা না কেটে আরএফএ এর মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান শীঘ্রই চালু হবে। রক্তনালী ব্লক, এনিউরিজম, ডিভিটি, টিউমার, ম্যালফরমেশন ইত্যাদি চিকিৎসাসেবা ও চালু আছে। কিডনী রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য ফিস্টুলা নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে। ভেনাসজনিত পায়ের আলসার ফোর লেয়ার ব্যান্ডেজ মাধ্যমে এই ক্ষত দূর করা সম্ভব হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের আধুনিক ডুপ্লেক্স স্ক্যান ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ জন রোগীর পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও বহির্বিভাগে ৫০-৬০ জন রোগী নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। ছাত্রদের নিয়মিত শিক্ষাদান ছাড়াও গত ২ বছরে ৬ জন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ভাসকুলার সার্জন তৈরি এই বিভাগটির সাফল্যের মধ্যে অন্যতম। দেশে একমাত্র বিএসএমএমইউতে চালু আছে ভাসকুলার সার্জারিতে বিশেষায়িত এম এস কোর্স।
ভাসকুলার সার্জারি রোগীদের অপারেশন করার জন্য বিভাগটিতে আছে সুসজ্জিত ওটি। নানা সময়ে গাইনী ও সার্জারি বিভাগের বিভিন্ন অপারেশনেও ভাসকুলার সার্জনদের অংশগ্রহণ করতে হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোঃ সাইফ উল্লাহ খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাকিবুল হাসান।