স্পোর্টস ডেস্ক : সকলের নজর ছিল শুভমন গিলের দিকে। চলতি সিরিজ়ে স্বপ্নের ফর্মে থাকা শুভমনকে লর্ডসে ইংল্যান্ড কী ভাবে আটকাতে পারে সে দিকেই নজর ছিল সকলের।
ম্যাচের আগে বেন স্টোকস জানিয়েছিলেন, শুভমনকে আটকানোর পরিকল্পনা তাঁদের তৈরি। সেই পরিকল্পনা বাস্তবে করে দেখাল ইংল্যান্ড। জসপ্রীত বুমরাহের ফর্মে ফেরার দিন রান পেলেন না শুভমন। চলতি সিরিজ়ে দ্বিতীয় বার অল্প রানে আউট হলেন তিনি।
লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৩৮৭ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারত ৩ উইকেটে ১৪৫। ক্রিজ়ে রয়েছেন লোকেশ রাহুল ও ঋষভ পন্থ। রাহুল ৫৩ ও পন্থ ১৯ করে ব্যাট করছেন। ইংল্যান্ডের থেকে এখনও ২৪২ রানে পিছিয়ে ভারত। -- আনন্দবাজার
দিনের শুরুটা হয়েছিল জো রুটের শতরান দিয়ে। প্রথম বলেই চার মেরে শতরান করেন রুট। কিন্তু সেই হাসি বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি। নিজের প্রথম স্পেলেই ভারতকে খেলায় ফেরান বুমরাহ। প্রথমে ৪৪ রানের মাথায় স্টোকসকে আউট করেন তিনি। তার পর ১০৪ রানে ফেরান রুটকে। পরের বলে শূন্য রানে আউট করেন ক্রিস ওকসকে। তিন ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড। সেখান থেকে জুটি বাঁধলেন জেমি স্মিথ ও ব্রাইডন কার্স।
বলা ভাল, ভারতের ফিল্ডিং ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরাল। ৫ রানের মাথায় স্মিথের সহজ ক্যাচ ছাড়লেন রাহুল। গত টেস্টে দুই ইনিংসেই বড় রান করেছেন স্মিথ। তাঁর ক্যাচ ছাড়া যে কতটা অপরাধ সেটা বুঝিয়ে দিলেন স্মিথ। অর্ধশতরান করলেন তিনি। কার্সও অর্ধশতরান করলেন। দুই ব্যাটার ইংল্যান্ডের রান ৩৫০ পার করালেন। তাঁদের দেখে মনে হচ্ছিল, ৪০০ পার করে ফেলবে ইংল্যান্ড। কিন্তু চা বিরতির পর আবার দ্রুত উইকেট তুলল ভারত। বুমরাহ ও মহম্মদ সিরাজের দাপটে ৩৮৭ রানে শেষ হয়ে গেল ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। বুমরাহ ৫ উইকেট নিলেন। হেডিংলেতে প্রথম ইনিংসের পর আবার লর্ডসের প্রথম ইনিংসে এই কীর্তি করলেন তিনি।
লর্ডসের মন্থর উইকেটে ইনিংসের শুরুটা ভাল করে ভারতও। প্রথম ওভারেই যশস্বী জয়সওয়াল তিনটে চার মারেন। ভারতকে ধাক্কা দেন জফ্রা আর্চার। চার বছর পর ইংল্যান্ডের টেস্ট দলে ফিরেছেন তিনি। প্রথম ওভারেই যশস্বীকে (১৩) আউট করেন তিনি। উইকেট-মেডেন দিয়ে শুরু করেন তিনি। প্রথম উইকেট পড়ার পর জুটি বাঁধেন রাহুল ও করুণ। নতুন বল সাবধানে খেলেন তাঁরা। করুণ বেশ দ্রুত রান করছিলেন। ভাল দেখাচ্ছিল তাঁকে। দুই ব্যাটারের মধ্যে ৬১ রানের জুটি হয়।
ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরায় তাদের ফিল্ডিং। ঠিক এখানেই ভারতকে টেক্কা দিল তারা। স্টোকসের বল করুণের ব্যাটে লেগে পিছনে যায়। উইকেটরক্ষক ও প্রথম স্লিপের মাঝে বল ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, ফিল্ডার পৌঁছোনোর আগেই তা মাটিতে পড়ে যাবে। কিন্তু বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে একহাতে ক্যাচ ধরেন রুট। টেস্টে সর্বাধিক ক্যাচ ধরার রেকর্ড গড়লেন তিনি। ছাপিয়ে গেলেন রাহুল দ্রাবিড়কে। আরও একটা ইনিংসে ভাল শুরু করে আউট হয়ে গেলেন করুণ (৪০)।
শুভমন ব্যাট করতে নামার পরেই ইংল্যান্ড তাদের পরিকল্পনা শুরু করে। উইকেটরক্ষক জেমি স্মিথকে কাছে এনে ক্রিস ওকসকে দিয়ে বল করানো শুরু করেন স্টোকস। ওকস অফ স্টাম্প লক্ষ্য করে এক লাইনে বল করতে থাকেন। উইকেটরক্ষক উইকেটের কাছে থাকায় শুভমন উইকেট ছেড়ে মারতে পারছিলেন না। বাধ্য হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রক্ষণাত্মক শট খেলতে থাকেন তিনি। একটা বল ব্যাটের কানায় লাগে। ক্যাচ ধরেন স্মিথ। ১৬ রানে আউট হন শুভমন। ইংরেজ ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল, কতটা পরিকল্পনা করে ভারত অধিনায়কের উইকেট পেয়েছেন তাঁরা।
ফিল্ডিং করার সময় আঙুলে চোট পেয়েছিলেন পন্থ। তিনি ব্যাট করতে নামবেন কি না সে দিকে নজর ছিল। ভারতীয় সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে পাঁচ নম্বরে নামেন তিনি। তবে তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, চোট এখনও সারেনি। মাঝে ব্যথা কমানোর ওষুধ খেতেও দেখা যায় তাঁকে। রাহুল অবশ্য ওপেন করতে নেমে ভাল খেলেছেন। ইংল্যান্ডের হয়ে রুট যে কাজ করেছেন, সেটাই রাহুল করছেন ভারতের হয়ে। একদিকে ধরে রয়েছেন। তাড়াহুড়ো করছেন না। ঝুঁকি নিচ্ছেন না। ধীরে ধীরে দলের ইনিংস টানছেন।
শুভমন আউট হওয়ায় ভারতের ইনিংস টানার দায়িত্ব এই জুটির কাঁধেই। রাহুল জানেন তাঁকে বড় ইনিংস খেলতে হবে। পন্থও সময় নিচ্ছেন। দ্বিতীয় দিনের শেষ পর্যন্ত ক্রিজ়ে তাঁরা। এর পর ভারতের তিন অলরাউন্ডার থাকলেও এই জুটির কাঁধে বড় ভরসা করছেন কোচ গৌতম গম্ভীর। লর্ডসের মন্থর উইকেটে রানের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে ব্যাটারদের। সেই কাজটাই করছেন রাহুল ও পন্থ। এখন দেখার তৃতীয় দিন দলের রান কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তাঁরা।