কিডনি আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। এটি শরীর থেকে বর্জ্য ছেঁকে বের করে এবং তরল ভারসাম্য বজায় রাখে। অথচ, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক সাধারণ বাথরুম-সংক্রান্ত ভুলই হতে পারে এই অঙ্গটির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। আপনি কি সেই ভুলটি করছেন?
প্রস্রাব আটকে রাখা বা দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে না যাওয়া।
ব্যস্ততা, কর্মস্থলের চাপ, বা সাময়িক অস্বস্তির কারণে আমরা অনেকেই প্রস্রাবের বেগ উপেক্ষা করি। এটি প্রথমে নিরীহ অভ্যাস মনে হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এই আচরণই কিডনি বিকলের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
১. মূত্রাশয় ও কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ:
মূত্রাশয় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্রাব ধারণ করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে এর পেশিতে চাপ পড়ে, ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কিডনির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) বা মূত্রনালীর সংক্রমণ:
প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া বের হয়। যদি প্রস্রাব আটকে রাখা হয়, তাহলে ব্যাকটেরিয়াগুলো মূত্রনালীতে বৃদ্ধি পায় এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করে। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এই সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পাইলোনেফ্রাইটিস নামক মারাত্মক রোগ তৈরি করতে পারে।
৩. কিডনিতে পাথর:
দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রে থাকা খনিজ লবণ ও বর্জ্য জমাট বাঁধে, যার ফলে কিডনিতে পাথর গঠনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৪. দীর্ঘমেয়াদী কিডনি ড্যামেজ:
পুনঃপুন সংক্রমণ, কিডনি পাথর এবং অতিরিক্ত চাপ—সবকিছু মিলিয়ে কিডনির কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। একসময় এটি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ কিংবা সম্পূর্ণ অকার্যকর কিডনির দিকে গড়াতে পারে।
প্রস্রাবের বেগ হলে দেরি না করে টয়লেটে যান।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন — দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন: সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে যদি মূত্রনালী বা কিডনি সমস্যার উপসর্গ দেখা দেয়।
একটি সাধারণ অভ্যাস—প্রস্রাব আটকে না রাখা—কেবল কিডনির জন্য নয়, আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ থেকেই এই সচেতনতা তৈরি করুন এবং সুস্থ জীবন গড়ুন।
আপনার কিডনি, আপনার যত্নে—আজই শুরু হোক সচেতনতা।