ছবির ফুটফুটে শিশুটির নাম মরিউম উম্মি আফিয়া। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সে।
সোমবার (২১ জুলাই) ভয়াবহ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ঠিক সেই ভবনের কক্ষে ক্লাস করছিল আফিয়া। দুর্ঘটনায় শরীর এতটাই ঝলসে যায় যে, তার মরদেহ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। বিমান বিধ্বস্তের তৃতীয় দিনেও তার মরদেহের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বোনের ছবি মোবাইল ফোনে হাতে নিয়ে বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় মাইলস্টোন স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে ছিল আফিয়ার ভাই সামিউল ইসলাম সামিদ। যাকে পাচ্ছে তাকেই ছবিটি দেখাচ্ছে আর অনুরোধ করছে- “আপনি কি দেখেছেন? কোথাও কোনো খোঁজ জানলে দয়া করে বলবেন। ”
সামিদ নিজেও একই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র।
বাংলানিউজকে সামিদ জানায়, প্রতিদিনের মতো বাবা বোনকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যান। ওই দিনও তাই হয়েছিল। স্কুলে পরীক্ষাও ছিল। পরীক্ষা শেষে কোচিং ক্লাসে ঢুকে পড়েছিলাম। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই ঘটে সেই ভয়ংকর দুর্ঘটনাটি।
বিমানটি সরাসরি আফিয়ার ক্লাসের নিচের অংশে আছড়ে পড়ে ভবনের একাংশ ভেঙে দেয়। আগুনে পুড়ে যায় পুরো শ্রেণিকক্ষ। ক্লাসে থাকা প্রায় সব শিশুই দগ্ধ হয়। কারো চেহারা চেনার উপায় ছিল না। আগুন লাগার খবর পেয়ে দৌড়ে আসে সামিদ। বাবাও ছুটে আসেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মরদেহগুলো বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
“প্রথমে সিএমএস হাসপাতালে, পরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটেও গিয়েছি। কিন্তু কোথাও আমার বোনকে খুঁজে পাইনি,” জানায় সামিদ।
সে আরও বলে, যেই হাসপাতালে যাওয়ার কথা কেউ বলছে, আমরা সেখানে ছুটে যাচ্ছি। এমনকি একবার একজন ভুয়া তথ্য দিয়েছিল, তবু যাচ্ছি যদি কিছু পাওয়া যায়! কিন্তু এখনো কিছুই পাইনি।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) গিয়েও চারটি পুড়ে যাওয়া মরদেহ দেখে এসেছি, কিন্তু কোনোটি শনাক্ত করার উপায় ছিল না। “ডিএনএ পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল দিয়ে এসেছি। মিল পেলে জানাবে বলে জানিয়েছে,” বলেন সামিদ।
ভাইয়ের কণ্ঠে তখন কান্না। থেমে থেমে বলছে, মা পাগলের মতো কাঁদছে, বাবাও কাঁদছে। আফিয়া ছিল আমাদের সবার আদরের ছোট বোন। তার মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টা কেউই মেনে নিতে পারছি না। পুরো বাড়িটা যেন শূন্য হয়ে গেছে। এত বড় সর্বনাশ হবে, কখনও কল্পনাও করিনি।
এই কথা বলতে বলতে সামিদের গলায় আবার কান্না জড়ায়। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। স্কুলের গেটে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। সামিদের বন্ধুরাও কাঁদছিল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বন্ধু সামিদকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দেয়। এরপর আবারো কথা বলতে শুরু করে সামিদ। উৎস: বাংলানিউজ২৪