রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আবারও আলোচনায় এসেছে এই বিমানের নিরাপত্তা এবং এর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা। বিমানটি চীনের অন্যতম প্রধান বিমাননির্মাতা সংস্থা তৈরি করলেও, এই সিরিজের উৎপাদন তারা বেশ আগেই বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ এই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধুনিক পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরি করছে।
প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ও সক্ষমতা:
বিধ্বস্ত এফ-৭ বিজিআই বিমানটির নির্মাতা চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন (সিএসি), যা দেশটির শীর্ষস্থানীয় এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন অব চায়না (এভিক)-এর অধীনস্থ একটি সংস্থা।
সিএসি বর্তমানে সামরিক বিমান প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। তাদের উল্লেখযোগ্য সাম্প্রতিক কিছু উদ্ভাবন হলো:
চেংদু জে-১০সি: চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি একটি আধুনিক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান।
চেংদু জে-২০: চীনের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ যুদ্ধবিমান, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এফ-২২ ও এফ-৩৫ এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত।
শুধু যুদ্ধবিমানই নয়, সিএসি বেসামরিক বিমান এবং মনুষ্যবিহীন ড্রোন (ইউএভি) উৎপাদনেও নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে। অর্থাৎ, যে প্রতিষ্ঠানটি এফ-৭ তৈরি করেছিল, তারা প্রযুক্তিগতভাবে এখন বিশ্বের সেরা নির্মাতাদের কাতারে অবস্থান করছে।
এফ-৭ সিরিজের ইতিহাস ও উৎপাদন বন্ধ:
এফ-৭ সিরিজটি মূলত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের புகழ்பெற்ற মিগ-২১ এর চীনা সংস্করণ। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য তৈরি এফ-৭ বিজিআই ছিল এই সিরিজের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণগুলোর একটি। জানা গেছে, বাংলাদেশকে এই মডেলের ১৬টি বিমান সরবরাহের পরই চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এফ-৭ সিরিজের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এর মাধ্যমে তারা পুরনো প্রযুক্তি থেকে বেরিয়ে নতুন প্রজন্মের বিমান নির্মাণে পুরোপুরি মনোযোগ দেয়।
বাংলাদেশে এফ-৭ বিমানের দুর্ঘটনা:
উত্তরায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটি দেশে এই সিরিজের তৃতীয় দুর্ঘটনা। এর আগের দুটি দুর্ঘটনা ছিল প্রাণঘাতী:
১. নভেম্বর ২০১৮: টাঙ্গাইলের মধুপুরে মহড়ার সময় একটি এফ-৭ বিজি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপু নিহত হন।
২. নভেম্বর ২০২১: চট্টগ্রামের ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর বঙ্গোপসাগরে একটি এফ-৭ এমবি বিমান বিধ্বস্ত হয় এবং এতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ প্রাণ হারান।
বিমানবাহিনীর বহরে এফ-৭:
বিভিন্ন সূত্রমতে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে মোট ৩৬টি এফ-৭ যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে এফ-৭ বিজিআই, এফ-৭ এমবি এবং প্রশিক্ষণের জন্য এফটি-৭ মডেলের বিমান অন্তর্ভুক্ত। ২০১১ সালে চীনের সাথে চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৬টি এফ-৭ বিজিআই বিমান সংগ্রহ করে, যা ২০১৩ সালের মধ্যে বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়। এই বিমানগুলোতে আধুনিক ককপিট, মাল্টি-ফাংশনাল ডিসপ্লে এবং শক্তিশালী ফায়ার কন্ট্রোল রাডার যুক্ত করা হয়েছিল।
শেষ কথা:
উত্তরার দুর্ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করলো যে, এফ-৭ সিরিজটি উন্নত করা হলেও এর মূল প্রযুক্তি বেশ পুরনো। যে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আজ পঞ্চম প্রজন্মের বিমান তৈরি করছে, তাদের নির্মিত পুরনো মডেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সীমিত বাজেট এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশ এখনও এই বিমান ব্যবহার করলেও, এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। উৎস: চ্যানেল24