সনত চক্র বর্ত্তী, ফরিদপুর : ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল গরুর গাড়ি। এমন এক সময় ছিল যখন ফরিদপুর জেলার গ্রাম-গঞ্জের মানুষদের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। সেটি খুব বেশি সময় আগের কথা নয়। ৩০-৩৫ বছর আগেও এইসব গরুর গাড়ির কদর ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর গাড়ি। হয়তো খুঁজে দু’একটি গরুর গাড়ি পাওয়া যাবে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ।
গরুর গাড়ি হলো দুই চাকাবিশিষ্ট যান বিশেষ, যা গরু বা বলদ টেনে নিয়ে যায়। একসময় কৃষি ফসল ও মানুষ বহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল এই গরুর গাড়ি। মালপত্র পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন। গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন।প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ এই যানটি ব্যবহার করে আসছে। সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন শুরু হয় প্রায় ১৫০০ বছর আগে। সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে।
মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরুর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে মেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। দুই যুগ আগেও গ্রামাঞ্চলে গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনা করা যেত না। বরপক্ষের লোকজন ১০ থেকে ১২টি গরুর গাড়ি সাজিয়ে বরযাত্রী যেত। সে সময় যেসব পরিবারে গরুর গাড়ি ছিল, তাদের কদর ছিল বেশি।
গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’ এরকম যুগান্তকারী সব ভাওয়াইয়া গান। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে।
মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যান। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। অথচ গরুর গাড়ির একটি সুবিধা হলো, পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন। এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। আবার ধীরগতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থাকে না। যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুরগাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।
এ ব্যাপারে ময়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কালীপদ চক্রবর্ত্তী বলেন, গরুর গাড়ি আগের দিনে যানবাহন ও মালামাল পরিবহনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু কালের আবর্তে গরুর গাড়ি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন আমরা আগে বাব দাদার সাথে জেলা শহরে যেতাম গরুর গাড়িতে চড়ে। সেই গাড়ি আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে।