দুই পাশজুড়ে সবুজ অরণ্যে মোড়া ছোট–বড় পাহাড়, মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ, শান্ত আর শীতল জলের কর্ণফুলী নদী—দৃশ্যটি যেন কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা রূপকথার রাজ্য। প্রকৃতির এমন অনন্য রূপ দেখতে চাইলে যেতে হবে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে।
কাপ্তাইয়ের নাম শুনলেই অনেকের চোখে ভেসে ওঠে নীল লেকের টলমলে পানি। সত্যিই, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য আর পাহাড়–নদী–লেকের অপূর্ব সমন্বয়ে কাপ্তাই যেন এক স্বপ্নলোক। এ কারণেই অনেকে স্নেহভরে এই জায়গাকে ডাকেন— ‘রূপসী কাপ্তাই।’
এই রূপসী কাপ্তাই একেক মৌসুমে একেক রূপে সেজে ওঠে। বর্ষায় থাকে মেঘে ঢাকা পাহাড় আর টলমলে লেকের নীলাভ ঢেউ; আর শরৎ–হেমন্তে দেখা মেলে নির্মল আকাশ ও সোনালি রোদে ঝিলমিল জলরাশি। তবে কাপ্তাইয়ের সবচেয়ে মোহনীয় রূপ ঠিকই ফুটে ওঠে শীতের দিনে। তাই শীত এলেই দেশ–বিদেশের হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে কাপ্তাই।
পর্যটকদের আকর্ষণের মূল কারণ—এর চারপাশের সবুজ পাহাড়, নির্মল বাতাস, ঝকঝকে লেক আর শান্ত প্রকৃতির আলিঙ্গন। চাইলে খুব অল্প খরচেই একদিনে ঘুরে দেখা যায় কাপ্তাই উপজেলার নানা দর্শনীয় স্থান। ব্যস্ত জীবনে একটু শান্তি–নিশ্বাস নিতে তাই কাপ্তাই এখন অনেকেরই প্রিয় গন্তব্য।
কাপ্তাইয়ে কোথায় কোথায় ঘুরবেন
রিভার ভিউ পার্ক
কাপ্তাইয়ের নতুন বাজার পেরোতেই চোখে পড়ে দারুণ সুন্দর রিভার ভিউ পার্ক। এখান থেকে দেখা যায় কর্ণফুলী নদীর নীল জলরাশি, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রিজার্ভ বনের সেগুন বাগানসহ অসাধারণ সব দৃশ্য। ছোটদের জন্য আছে রাইড ও খেলাধুলার ব্যবস্থা।
নিসর্গ পড হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট
কাপ্তাইয়ে রাত কাটানোর জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা নিসর্গ পড হাউস। বাঁশ, ছনসহ দেশীয় উপকরণে থাই ডিজাইনে তৈরি কটেজগুলো যেন ছবির ফ্রেম। আগেভাগে বুকিং করে যেতে হয়। উপরে আছে তাদের রেস্টুরেন্ট—যেখানে মিলবে সুস্বাদু খাবার।
ফ্লোটিং প্যারাডাইস
কর্ণফুলী নদীর মোহনার পাশের পাহাড়চূড়ায় নির্মিত এই রেস্টুরেন্ট কাপ্তাইয়ের প্রথম দিককার জনপ্রিয় খাবারস্থান। দেশীয় ও পাহাড়ি সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে উপভোগ করা যায় কর্ণফুলী নদী আর সবুজ চা-বাগানের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
জুম রেস্টুরেন্ট
৪১ বিজিবি পরিচালিত এই সুন্দর পর্যটনকেন্দ্রটি কর্ণফুলী নদীর তীরে। সুশৃঙ্খল পরিবেশ, ভালো খাবার ও আরামদায়ক বসার ব্যবস্থার কারণে এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
কাপ্তাই লেক শোর স্পট
কাপ্তাই সেনা জোন পরিচালিত লেকশোর একটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও আকর্ষণীয় জায়গা। অগ্রিম বুকিং করলে এখানে ঘোরাফেরা ছাড়াও পাওয়া যায় নানা সুবিধা ও থাকার ব্যবস্থা।
দর্শনীয় স্থান
কর্ণফুলী পেপার মিলস
এশিয়ার অন্যতম খ্যাতিমান কাগজ তৈরির প্রতিষ্ঠান চন্দ্রঘোনার কর্ণফুলী পেপার মিলস। মূল কারখানায় অনুমতি ছাড়া প্রবেশযোগ্য নয়, তবে মিলের আবাসিক এলাকা ঘুরে দেখা যায়।
কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র
বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কাপ্তাইয়ে অবস্থিত। নিরাপত্তাবেষ্টিত এই এলাকার প্রবেশ কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রিত। অনুমতি মিললে এখান থেকে পাওয়া যায় কাপ্তাইয়ের সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
ওয়াগ্গাছড়া চা বাগান
কর্ণফুলী নদীর কোল ঘেঁষা এই চা-বাগান যেন পাহাড়ের বুকজুড়ে সবুজের কারুকাজ। ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় প্রবেশে অনুমতি প্রয়োজন। সবুজ প্রকৃতি আর নদীর সান্নিধ্য মিলিয়ে জায়গাটি একেবারেই ছবির মতো।
কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই লেকে নৌভ্রমণ
কাপ্তাই এলে নৌভ্রমণ যেন অবশ্যই করার মতো অভিজ্ঞতা। বোটে উঠে কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই লেকের নীল পানি, পাহাড় আর আকাশ একাকার হয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার নৌভ্রমণ আপনাকে দেবে অন্যরকম প্রশান্তি।
কিভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম থেকে: বহদ্দারহাট থেকে লিচুবাগান পর্যন্ত বিভিন্ন বাস চলে। লিচুবাগান থেকে সিএনজিতে মাত্র ৩০ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন কাপ্তাইয়ে।
ঢাকা থেকে: সরাসরি কাপ্তাই যাওয়ার বাস সার্ভিস রয়েছে। ভ্রমণ সময় ৫–৬ ঘণ্টা। জনপ্রতি ভাড়া ৮০০–১০০০ টাকা।
সূত্র: সিভয়েস ২৪