দীর্ঘ বিরতির পর আগামী ১ নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য খুলছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের পথ। তবে আইনগত বিধিনিষেধের কারণে উখিয়ার ইনানী সৈকত থেকে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি নেই। তাই কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া ঘাট থেকেই সেন্টমার্টিনে যাবে পর্যটকবাহী জাহাজ। চলাচলের জন্য দুটি জাহাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান।
তিনি বলেন, ‘সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের নির্দেশনা নভেম্বরে পর্যটকরা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসবে। কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়বে। পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। প্রশাসন বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে টিকিট চেকিং করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর সেন্টমার্টিন দ্বীপেও পর্যটকদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সবধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পর্যটকরা শুধুমাত্র ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সেন্টমার্টিনের রাত্রিযাপন করতে পারবে। সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করবে।’
তবে নভেম্বর মাসে পর্যটকদের রাত্রি যাপনের সুযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে সেন্টমার্টিনের পর্যটন খাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে দাবি করেছেন দ্বীপের হোটেল-রেস্তোরাঁ ও দোকান মালিকেরা। সেন্টমার্টিন দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, দুই বছর আগেও মৌসুমের পাঁচ মাস পর্যটকেরা দ্বীপে রাত যাপন করতেন। এখন সেই সুযোগ না থাকায় দোকানে বেচাবিক্রি নেই। ৬০-৭০টি দোকান বন্ধ রয়েছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পর্যটকরা দিনে গিয়ে দিনে সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার শর্তে যেতে আগ্রহী নন। ফলে জাহাজ চলাচলের প্রস্তুতি থাকলেও যাত্রী পর্যাপ্ত হবে না। তাই নভেম্বরে জাহাজ চলাচলের চিন্তা নেই জাহাজ মালিকদের। তারা মূলত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস জাহাজ চলাচলের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। মূলত এই দুই মাসই সেন্টমার্টিনের পর্যটকদের রাত্রি যাপনের অনুমতি রয়েছে।
সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বলেন, কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী দুটি জাহাজ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ও বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু অনুমতি পেলেও কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন দিনে গিয়ে দিনে আসা সম্ভব নয়। তাই অনুমতি পেলেও জাহাজ চলাচল সম্ভব নয়। যদি উখিয়ার ইনানী থেকে সেন্টমার্টিন পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় তাহলে নভেম্বরে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে। শর্তের বেড়াজালে পর্যটন শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা হচ্ছে। এভাবে পর্যটন শিল্প চলতে পারে না।
কক্সবাজার বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির মুখপাত্র আব্দুর রহমান বলেন, পর্যটকরা এত টাকা খরচ করে, এত দূরত্ব, ঝুঁকি নিয়ে দুই ঘণ্টার জন্য সেন্টমার্টিন কেন যাবে। এটা কর্তৃপক্ষকে সু-বিবেচনা করা দরকার।
এদিকে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দ্বীপটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে পর্যটকদের মানতে হবে সরকারের ১২টি নির্দেশনা।
সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে, নভেম্বরে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপটি ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
তথ্য অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্টমার্টিন দ্বীপে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন না।
পর্যটকদের ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদফতর বলছে, দ্বীপের পরিবেশ সুরক্ষায় সেন্টমার্টিন ভ্রমণে পর্যটকদের ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে মানতে হবে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কক্সবাজারে জাহাজে ওঠা থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ পর্যন্ত পর্যটকরা নির্দেশনা মানছে কিনা তা দেখা হবে।’
সূত্র: সময়