শিরোনাম
◈ সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা নিয়ে সুখবর ◈ জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে ১৬ বছরের ফ্যাসিজমের ইতিহাস জীবন্ত থাকবে : প্রধান উপদেষ্টা ◈ এই খেলা দেখ‌তে হ‌বে না, রুমের দরজা ও ফোন বন্ধ করে ঘুমাও: পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ভার‌তের অ‌ধিনায়ক ◈ ১৬ বছরের দুঃশাসনের চিত্র থাকবে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে ◈ পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে যেসব সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয় ◈ নির্বাচনী জোট নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ ◈ বাংলাদেশের আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ পরামর্শ ◈ আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে দলের  সিদ্ধান্তকে যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা : তারেক রহমান  ◈ সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে আবারও সভা করেছে ঐকমত্য কমিশন ◈ বিদেশি গুপ্তচর নিয়োগে এমআই৬-এর নতুন অস্ত্র ‘সাইলেন্ট কুরিয়ার’ পোর্টাল

প্রকাশিত : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫৮ বিকাল
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

নির্বাচনী জোট নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ

মহসিন কবির: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোটের আলোচনা জোরেসোরে চলছে। আদর্শগতভাবে ভিন্ন অবস্থানে থাকা দলগুলোও ইস্যুভিত্তিক বৈঠকে বসছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও একের পর সভা ইঙ্গিত দিচ্ছে- তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটের নতুন জোটের রূপরেখা দৃশ্যমান হবে। 

যদিও জোটের বিষয়টি দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি। ইসলামপন্থি দলগুলো অভিন্ন ইস্যুতে নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। তবে ইসলামি দলগুলোর এই আন্দোলনে নেই হেফাজতে ইসলাম। অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে যেসব দল ঐক্যবদ্ধ ছিল, তাদের মধ্যেও সমঝোতার চেষ্টার কমতি নেই।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থান থেকে বেরিয়ে আসা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টিসহ ৯টি দল সম্প্রতি এক সভা করেছে। যদিও এই বৈঠকে জোট গড়ার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। তবে ইস্যুভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের বৈঠক থেকেই জোট গঠনের দিকে হাঁটতে পারে বলে জানা গেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জোটের সমীকরণ চূড়ান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে চলতি সেপ্টেম্বর এবং আগামী মাসে একাধিক জোটের দেখা যেতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়েছে। যে কারণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনাগুলো চূড়ান্ত রূপ পায়নি। জামায়াতসহ ইসলামি দলগুলো পিআর পদ্ধতির বিষয়ে অনড়। অন্যদিকে এনসিপিসহ অন্য দলগুলো জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন বা গণপরিষদ নির্বাচনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এসব ইস্যুতে দলগুলো পরস্পরবিরোধী জোটের দিকেই ঝুঁকছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দল এবং আরও তিনটি দল বসেছিলাম মূলত জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত একত্রিত করার পথ বের করতে। এখানে কোনো জোটের হিসাব নেই। কোনো কোনো দলের ভেতর জোটের চিন্তা থাকতে পারে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখানে জোটের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়নি। আমাদের দলের ফোরামেও জোটের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি ইসলামপন্থি দল গত বৃহস্পতিবার অভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির পাশাপাশি পিআর পদ্ধিতে নির্বাচনের দাবি করেছে। অন্যদিকে বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সাংগঠনিক দিক দিয়ে বিএনপির পর বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তাই দেশের বৃহৎ দুটি দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছে। দলগুলো পরস্পর নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে ৯টি দলের বৈঠক হয়। যদি এই বৈঠককে বলা হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের পরস্পরবিরোধী অবস্থান থেকে একত্রে আনার প্লাটফর্ম। তবে ভেতরে ভেতরে জোটের হিসাব দাঁড় করাচ্ছে বলে জানা গেছে।

বৈঠকের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, এখানে কোনো জোট করার জন্য বসা হয়নি। আমরা এরই মধ্যে দেখেছি জুলাই সনদ ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াত বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। কীভাবে এই দূরত্ব কমিয়ে আনা যায়, তার পথ ঠিক করতেই ৯টি দল একত্রে বসা হয়েছিল। একটি কমিটিও করা হয়েছে। যারা বিএনপি এবং জামায়াতের সঙ্গে আলাদাভাবে বসবে। দল দুটিকে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য বলা হবে। আমাদের নিজেদের বিরোধের কারণে ফ্যাসিবাদ যেন ফিরে আর না আসে, সেটা ঠিক করতেই এই আলোচনা।

এদিকে ইসলামি দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনে নামলে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে হেফাজতে ইসলাম নামক এই সংগঠন। যদিও হেফাজতে ইসলাম নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল না। তবে ভোটের হিসাবে তাদের বড় ভূমিকা বরাবরই লক্ষ্য করা গেছে। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তাত্ত্বিকতার দিক থেকে গোড়া থেকেই বিরোধ। হেফাজতে ইসলাম মওদুদীবাদী ইসলামকে স্বীকৃতি দিতে চায় না। তাই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের আদর্শগত বিরোধ রয়েছে। তাই এই দলটি আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নে বড় দলগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধের জন্য কয়েকটি দল একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আমাদের সময়কে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও সুরক্ষার বিষয়ে আলাপ করতেই এই বৈঠক। আমরা দেখেছি কিছু দল রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে। প্রত্যেকটি দল নিজেদের মতো করে মতামত দিচ্ছে। কীভাবে একটা সমন্বিত জায়গায় পৌঁছানো যায়, তার কৌশল ঠিক করার জন্যই রাজনৈতিক দলগুলোর একসঙ্গে বসা। এরপর অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে বসা হতে পারে।

ভোটের আগে জোটের সমীকরণ পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আল মাসুদ হাসানুজ্জামান। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভোটের আগে জোটের সমীকরণ এটা নতুন না। আগেও দলগুলো ভিন্ন আদর্শের দলকে জোট করতে দেখা গেছে। এটি শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশে^ই রয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটের জোট দৃশ্যমান হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়