শিরোনাম
◈ ইনু, মেনন ও পলককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ◈ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমদ ◈ বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধে কলকাতার ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ৫০০০ কোটি রুপি ◈ আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক আদায়ে ব্যর্থতা ও ব্যাংক খাতের স্থবিরতা নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ ◈ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের একই আইনজীবী নিয়ে বার্গম্যানের প্রশ্ন ◈ ছাত্রলীগ পরিচয়ে নির্যাতনের অংশীদার হতেন ‘ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা’, দিলেন অনেকের পরিচয়: আবদুল কাদেরের ফেসবুক পোস্ট ◈ সি‌লেট স্টে‌ডিয়া‌মে হ‌বে বাংলা‌দেশ - নেদারল্যান্ডস সিরিজের সব ম‌্যাচ ◈ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে সরকার পতন: এক বছরে বৈষম্য কতটা দূর হলো? ◈ ইয়েমেন উপকূলে শরণার্থীবোঝাই নৌকাডুবি, ৫৪ লাশ উদ্ধার ◈ ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী নীতি আ‌মে‌রিকার  রাজ‌নৈ‌তিক ঝু‌কি বাড়া‌চ্ছে: অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মত

প্রকাশিত : ০২ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৩৫ দুপুর
আপডেট : ০৪ আগস্ট, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ব্রিটিশ আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ, ডাকসুর ভিপি-জিএস ছিলেন যারা

১০৪ বছর বয়সী দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ তথা ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মোট ৩৭ বার। এর মধ্যে ২৯ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে। আবার স্বাধীনতার ৫৩ বছরে হয়েছে মাত্র ৮ বার। অথচ ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। 

দেশের শিক্ষা, স্বাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। দেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যায়তনটির রাজনৈতিক অর্জন-অবদানও কম নয়। নেতা তৈরির আঁতুড় ঘর বলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু)। ডান, বাম, মধ্যপন্থা— সব দলেই ডাকসুর সাবেক নেতাদের সক্রিয়-সগৌরব অংশগ্রহণ রয়েছে। 

ডাকসুর সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসেই ৫ বছর পার হয় ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের। কিন্তু বর্তমানে সে পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে। গত ৫ আগস্টের পর এই নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচিও পালিত হয়েছে।

তবে ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনও এই নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ইতিবাচক। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের কাজ শুরু করে। সবশেষ গত ২৯ জুলাই (মঙ্গলবার) এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও বুধবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ করা শুরু হবে ১২ আগস্ট। ১৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৯ আগস্ট বেলা ৩টা।

এদিকে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে আগামী ২০ আগস্ট। এরপর প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ২১ আগস্ট দুপুর ১২টায়। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৪ আগস্ট দুপুর ১২টা। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট বিকেল ৪টায়। এ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে সকাল ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত। নির্বাচনের ফলাফলও ৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে মোট ২৫টি পদের বিপরীতে ভোট দিয়েছিলেন ভোটাররা। তবে এবার পদসংখ্যা বেড়েছে। এ বছর মোট ২৮টি পদের বিপরীতে লড়বেন প্রার্থীরা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অন্য একজন শিক্ষক ডাকসুর সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদটি সবচেয়ে আলোচিত। বলা হয়ে থাকে, ডাকসুর ভিপি-জিএসরা আগামীতে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বে দিয়ে থাকেন। সর্বশেষ ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। রাজনৈতিক দল গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি তিনি।  

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এমন মুহূর্তে ডাকসুতে নেতৃত্ব দেয়া সেই উজ্জ্বল মুখ ও ছাত্রনেতাদের সাথে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের এই আয়োজনে। 

ব্রিটিশ আমলে ডাকসুর ভিপি-জিএস: 
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সৃষ্টি হয়। ডাকসুর প্রথম ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন যথাক্রমে মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। এক বছর মেয়াদকালের জন্য নির্বাচিত কমিটিগুলোর সিংহভাগই নির্ধারিত সময়সীমার বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। জিএস হন এ কে মুখার্জি (ভারপ্রাপ্ত এ বি রুদ্র); ১৯২৮-২৯ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন এএম আজহারুল ইসলাম এবং জিএস এস চক্রবর্তী।

১৯২৯-৩২ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন রমণী কান্ত ভট্টাচার্য এবং যৌথভাবে জিএস হন কাজী রহমত আলী ও আতাউর রহমান। ১৯৩২-৩৩ ও ১৯৩৩-৩৪ শিক্ষাবর্ষে জিএস হন ভবেশ চক্রবর্তী; ১৯৩৫-৩৬ ও ১৯৩৬-৩৭ শিক্ষাবর্ষে এ এইচ এম এ কাদের; ১৯৩৮-৩৯ শিক্ষাবর্ষে আব্দুল আওয়াল খান; ১৯৪১-৪২ শিক্ষাবর্ষে জিএস হন আব্দুর রহিম।

১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন আহমদুল কবির (ভারপ্রাপ্ত ফরিদ আহমেদ) এবং জিএস হন সুধীর দত্ত। ১৯৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ফরিদ আহমেদ এবং জিএস সুধীর দত্ত; ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষে ভিপি অরবিন্দ বোস এবং জিএস হন গোলাম আযম (জামায়াত নেতা)। 

পাকিস্তান আমল: 
১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন এস এ বারী এবং জিএস হন জুলমত আলী খান (ভারপ্রাপ্ত ফরিদ আহমেদ); ১৯৫৪-৫৫ ও ১৯৫৫-৫৬ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন নিরোদ বিহারী নাগ এবং জিএস আব্দুর রব চৌধুরী; ১৯৫৬-৫৭ শিক্ষাবর্ষে ভিপি একরামুল হক এবং জিএস শাহ আলী হোসেন; ১৯৫৭-৫৮ শিক্ষাবর্ষে ভিপি বদরুল আলম এবং জিএস ফজলী হোসেন; ১৯৫৮-৫৯ শিক্ষাবর্ষে ভিপি আবুল হোসেন এবং জিএস এ টি এম মেহেদী; ১৯৫৯-৬০ শিক্ষাবর্ষে ভিপি আমিনুল ইসলাম তুলা এবং জিএস আশরাফ উদ্দিন মকবুল; ১৯৬০-৬১ শিক্ষাবর্ষে ভিপি বেগম জাহানারা আক্তার এবং জিএস হন অমূল্য কুমার।

১৯৬১-৬২ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন এস এম রফিকুল হক এবং জিএস এনায়েতুর রহমান; ১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন শ্যামাপ্রসাদ ঘোষ এবং জিএস কে এম ওবায়েদুর রহমান; ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ভিপি রাশেদ খান মেনন এবং জিএস মতিয়া চৌধুরী; ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে ভিপি বোরহানউদ্দিন এবং জিএস আসাফউদ্দৌলা; ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ভিপি ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী এবং জিএস শফি আহমেদ; ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে ভিপি মাহফুজা খানম এবং জিএস মোরশেদ আলী; ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষে ভিপি তোফায়েল আহমেদ এবং জিএস নাজিম কামরান চৌধুরী; সর্বশেষ ১৯৭০-৭১ শিক্ষাবর্ষে ভিপি হন আ স ম আবদুর রব এবং জিএস হন আব্দুল কুদ্দুস মাখন।

স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসুর ভিপি-জিএস:
১৯৭২-৭৯ সময়কালে ডাকসুর সহ সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র ইউনিয়নের মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম ২ নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদ-ছাত্রলীগের এবং বাসদ-ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান। 

১৯২২ সালে ডাকসু সৃষ্টির পর পরপর দুইটি মেয়াদে লাগাতার ডাকসুর ভিপি এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামান। যে দুটি মেয়াদে তারা নির্বাচিত হন সে দুটি মেয়াদ ছিল (১) ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এবং ১৯৮১-৮২।

১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৯৮৯-৯০ সেশনে দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মুশতাক আহমেদ। 

১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৬ জুন নির্বাচনের পর অর্থাৎ দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্যানেল থেকে বিপুল ভোটে ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হন নুরুল হক নুর এবং জিএস হন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। যদিও এ নির্বাচন ঘিরে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কারচুপি ও অনিয়ম এবং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফলাফল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র: দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়