শিরোনাম
◈ প্রশাসনে তিন শক্তির টানাপোড়েনের মধ্যেই হবে নির্বাচন: ড. ইফতেখারুজ্জামান ◈ সৌদি–পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি ঘিরে উদ্বেগে ভারত, দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়ছে নতুন উত্তেজনা ◈ বাংলাদেশ ভ্রমণে যে কারণে উচ্চমাত্রার সতর্কতা জারি করল কানাডা! ◈ ত্রয়োদশ নির্বাচন সামনে: ঢাকায় নতুন মুখসহ সম্ভাব্য প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দিল বিএনপি ◈ বাংলাদেশি মডেল শান্তা পালের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের অভিযোগপত্র আদালতে জমা ◈ বাসা বরাদ্দে ঘুষ, ঊর্ধ্বতন ৩ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করল সরকার ◈ জুলাইয়ে আমদানি ৬.২ বিলিয়ন ডলার, তিন বছরের সর্বোচ্চ ◈ শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে বজ্রবৃষ্টি ঝরতে পারে যেসব অঞ্চলে ◈ আরব-মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আকাশপথ অবরোধে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা ◈ অনলাইন জুয়ার শাস্তি বিষয়ে যা জানালো তথ্য মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:১২ বিকাল
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:৪৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আসুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীলতা পরিহার করি: শাহাজাদা এমরান

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) কুমিল্লার একটি সরকারি অফিসের এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলাম সংবাদসংক্রান্ত একটি কাজে। ভদ্রলোক বয়সের দিক থেকে আমার থেকে মাত্র দুই/এক বছরের বড় হলেও অভিজ্ঞতায় অনেক সমৃদ্ধ। স্পর্শকাতর অফিসে চাকরি করলেও অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন এবং রাজনীতি নিয়ে তিনি বেশ ভাবেন।

গত জুলাই আন্দোলনে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে ও কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে স্বেচ্ছায় সপ্রণোদিতভাবে রাস্তায় পাঠিয়েছিলেন, একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণ হবে এই প্রত্যাশায়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে তার আশাও নাকি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। সব বুঝেন, জানেন কিন্তু সরকারি চাকরি করার কারণে মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। আমাকে পেয়ে যেন তার কথার ফুলঝুড়ি ফুটে উঠলো।

প্রথম দিনের পরিচয়েই আমার কাছে এ সকল কথা বলার কারণ জানতে চাইলে ভদ্রলোক বললেন, আমি আপনার ফেসবুক ফলোয়ার। নিজের টাকা দিয়ে আগে আমাদের কুমিল্লা আর এখন কুমিল্লার জমিন কিনে পড়ি। আপনার সাহসী লেখার আমি গুণমুগ্ধ ভক্ত ইত্যাদি আরো অনেক কিছু বলে আমার প্রশংসা করলেন।

রাজনৈতিক আলাপের এক পর্যায়ে ঐ ভদ্রলোক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে লক্ষ করলাম, তিনি এক এক করে স্ট্যাটাস কিংবা কমেন্ট আমাকে দেখাচ্ছেন আর রাগে, ক্ষোভে তিনি ফুঁসে উঠছেন। অবাক হয়ে দেখলাম, শালীনতা-বিবর্জিত প্রত্যেকটা ভিডিও, স্ট্যাটাস কিংবা স্ট্যাটাসের নিচের কমেন্টগুলো তিনি সযত্নে জমা করে রেখেছেন। তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেছেন, সম্পাদক মহোদয়, আপনি কি এই শব্দ কিংবা বাক্য বা উচ্চারণগুলো আপনার সন্তানকে দেখাতে পারবেন? আর আজকের ছেলে-মেয়েরা তো নার্সারীতে পড়ার সময়ই বাবা-মায়ের মোবাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করে; কেজিতে উঠলেই বাংলা পড়তে পারে।

তিনি দুঃখ করে বলেন, মানুষের চরিত্র হরণ করার জন্য তো মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেননি। প্রাসঙ্গিক আরো অনেক কথা বলে ভদ্রলোক অনুরোধ করে বললেন, এমরান ভাই, এই বিষয়ে দয়া করে লেখালেখি করেন। বিনয়ের সাথে বললাম, ভাই, আমার লেখা কি কোনো কাজে হবে? তিনি বললেন, আমরা সবাই যদি দায়িত্ব এড়িয়ে চলি তাহলে শুরুটা করবে কে?

ভদ্রলোক ঐ সরকারি কর্মকর্তাকে বিদায় দিয়ে যখন চলে আসেন, তখন হ্যান্ডশেক করে বললেন, ভাই যা বলেছি, বন্ধু হিসেবে টেবিল টক। যেহেতু সরকারি চাকরি করি, নাম পদবি এবং অফিসের নাম বলে বেকায়দায় ফেলবেন না। আস্থা রাখবেন, বলেই আমি চলে আসি।

অফিসে এসে এ কথাগুলো ভাবছি; কম্পিউটার অন করে ফেসবুক চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই চোখে পড়ল দেশের বাইরের এক জনপ্রিয় অনলাইন এক্টিভিস্ট মহোদয়ের একটা স্ট্যাটাস। তিনি আরেক অনলাইন এক্টিভিস্টের পরকীয়া নিয়ে পোস্ট দিচ্ছেন। আমি জানি না, সংবাদের সাথে এই পোস্টের কোনো সম্পর্ক আছে কি না। আমরা কি শুধু ভিউ বাড়ানোর জন্যই এসব করছি? বাণিজ্যিক চিন্তা থাকা অপরাধ না। অপরাধ হলো, যদি অনৈতিক কাজকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়। আমার চিন্তা, চেতনা ও মতের সাথে অন্যের অমিল থাকতেই পারে এবং এই থাকাটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু তাই বলে চিন্তা বা বক্তব্যের অমিল থাকার কারণে চরিত্রহরণ করব? তাও আবার লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে? না, আমরা এটা করতে পারি না। এটা এক ধরনের ক্রিমিনাল অপরাধ।

বিশিষ্ট দার্শনিক ভলতেয়ারের একটি অমর বাণী আজো প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছেন, আমি তোমার মতামতের সাথে এক মত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আমি জীবনও দিতে পারি। ইতিহাসের একটি নির্মম শিক্ষার কথা আমরা সবাই বলি, কিন্তু কেউ পালন করে না। এবং তা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। আজ যারা লক্ষ লক্ষ ফলোয়ারের মালিক হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে চরিত্রহরণ করে গোটা সমাজটাকে কলুষিত করছেন, কাল যে আপনার বিরুদ্ধে একই আঘাত অন্য কেউ নিয়ে আসবে না এ কথা কিন্তু কেউ নিশ্চয় করে বলতে পারবে না। সুতরাং আমাদের কিন্তু এখন থামার এবং থামানোর সময় এসেছে।

ফেসবুকে এখন হরহামেশাই মতের মিল না হলেই কদর্যপূর্ণ গালি দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্যের ঘরে। এমন সব গালি দিচ্ছে এই গালিগুলো সে কোনোভাবেই তার মা, বাবা বা ভাইয়ের সামনে উচ্চারণ করতে পারবে না। যদিও তার ঐ স্বজনরা যে ফেসবুকের মাধ্যমে তার গালিগুলো দেখছে না, তারই বা নিশ্চয়তা কে দেবে?

ফেসবুকের জনক মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক খুলেছিলেন বিশ্বের সকল মানুষের মাঝে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করার জন্য। কিন্তু এটা এখন মানুষের চরিত্রহরণ করার কারখানায় পরিণত হয়েছে। আর এই ফেসবুকে যেভাবে যৌনতার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, তাতে সময় হয়েছে বলা যায় যে, প্রাপ্তবয়স্করা ছাড়া ফেসবুক দেখা নিষেধ করার কথা ভাবার।

আমাদের সকলের উচিত ফেসবুকে যারা অপপ্রচার করে, কারো চরিত্রহরণ করে যাচ্ছে তাদেরকে বয়কট করা। তারা সত্য-মিথ্যাকে একসাথে গুলিয়ে সমাজকে নষ্ট ও ভ্রষ্টের পর্যায়ে নিয়ে যায় সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করার জন্য। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনও বিকল্প নেই।

লেখক: সম্পাদক,দৈনিক কুমিল্লার জমিন ও সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কুমিল্লা জেলা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়