শিরোনাম
◈ নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি ◈ পাকিস্তান যদি পাল্টা আঘাত হানে, তখন তা ঘোষণার কোনও দরকার হবে না: জেনারেল আহমেদ শরিফ ◈ অনিশ্চয়তার মাঝেও পি‌সি‌বি চায় বাংলাদেশ দল পাকিস্তান সফরে আসুক ◈ এই প্রথম হ‌কি বিশ্বকাপে আম্পায়া‌রিং করবেন  বাংলা‌দে‌শের সে‌লিম ও শাহবাজ  ◈ পারভেজ হত্যায় গ্রেফতার অভিযুক্ত টিনা ◈ রাফালের ধ্বংসাবশেষ সরানোর প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি ভেরিফাই! ◈ যুদ্ধক্ষেত্রের ‘সাইলেন্ট কিলার’ হারোপ ড্রোনের বিশেষত্ব কী? (ভিডিও) ◈ এখানে আরেকটা বেয়াদব আছে, সে শহীদ ফ্যামিলিকে ননসেন্স বলেছে: সংবাদ সম্মেলনেই শহীদ ইয়ামিনের বাবা(ভিডিও) ◈ দুপুরের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে ডেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি, জানিয়েছেন জামায়াতের ঢাকা দক্ষিণের সেক্রেটারি ◈ ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব, সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ: উপদেষ্টা মাহফুজ

প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:৩৮ দুপুর
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০২:৩৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি

রাজশাহীর গ্রামীণ অর্থনীতিতে পানের ভূমিকা

মঈন উদ্দিন, রাজশাহী: [২] এ অঞ্চলের গ্রামবাসীর জীবন-জীবিকা এই অর্থকরী ফসলের উপর নির্ভরশীল। দেশের প্রায় সব জেলাতেই কমবেশি এর চাষ হলেও রাজশাহীর সুস্বাদু পানের কদর সব সময়ই বেশি। বহুকাল যাবত এই অঞ্চলের কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের জীবিকার ক্ষেত্রে পান প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে আসছে। চাষের ক্ষেত (বরজ) থেকে তাদের পান পাতা সরাসরি সাপ্তাহিক বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে থাকে। সামগ্রিকভাবে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষ বেশি লাভজনক, কারণ কৃষকরা স্থানীয় বাজারে সহজেই এই অর্থকরী ফসল বিক্রি করার সুযোগ পান। 

[৩] তবে গবেষণাভিত্তিক চাষ হলে এখানকার এক বিঘা জমির পান থেকে বছরে ২-৩ লাখ টাকা আয় করা যেতে পারে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

[৪] তারা বলছেন, দেশের অনেক অর্থকরি ফসলের চেয়েও অনেকাংশে লাভজনক পান চাষ। কিন্তু সনাতন চাষ পদ্ধতি ও নানারোগে গাছ-পাতার পচন এ সম্ভাবনার লাগাম টেনে রেখেছে। তাই যথাযথ গবেষণা ও উদ্যোগ নিলে বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে রাজশাহীর পান। পান গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের দাবি তুলে তারা আরও বলছেন, রাজশাহীর ২৫ হাজারের অধিক পান বরজের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত লক্ষাধিক পান চাষির জীবন-জীবিকা ও ভবিষ্যৎই পাল্টে যাবে যথাযথ গবেষণায়। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যসহ আর যেসব দেশে এখানকার পানের চালান যাচ্ছে, তা যে আরও বাড়বে সে বিষয়েও কোনো সন্দেহ নেই।

[৫] কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার মোহনপুর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া ও পবা ও তানোর উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৬২৩.৮২ কোটি টাকা মূল্যের ৭৬ হাজার ৬৭৮ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রায় ৩৮ হাজার ৯০০ কৃষক ৪ হাজার ৪৯৬ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। আগের মৌসুমে ৩৭ হাজার ৯৩২ জন কৃষক ৪ হাজার ৩৬১ হেক্টর জমি ফসল চাষের আওতায় ছিল এবং তারা ৭৩ হাজার ৭৭১ টন ফলন পেয়েছেন। সূত্রটি জানায়, জেলার সব উপজেলাতেই পান চাষ হয়, তবে মোহনপুর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।

[৬] রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের এগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনসন বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায় পানের পাতাই সোনা। সনাতন নিয়ম ছেড়ে আধুনিক জ্ঞানের আলোয় গবেষণাভিত্তিক পান চাষ করে ১ বিঘা জমি থেকে বছরে ২-৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু পুরাতন পদ্ধতিতে পান চাষ করার কারণে চাষিদের গরিব থেকে আরও গরিব হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।’

[৭] এদিকে রাজশাহীতে যুগ যুগ থেকে বংশানুক্রমে পান চাষ হয়ে আসছে। দেশে বিদেশে রাজশাহীর সুস্বাদু পানের জুড়ি নেই। এর কদর দিন দিন বাড়ছে। তাই নতুন কৃষকদেরও পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু পান চাষিদের প্রাণের দাবি ‘পান গবেষণা কেন্দ্র’ আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

[৮] মোহনপুর উপজেলার পান চাষি মকবুল হোসেন বলেন, তার স্ত্রী ও তিনি ২১ বছরেরও বেশি সময় ধরে পান চাষ করছেন। জেলার বাগমারা উপজেলার চান্দাপুর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আলী তার এলাকার প্রথম পান চাষী হিসাবে এই অঞ্চলে একজন সফল কৃষক হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার তিন ছেলে আমিনুল ইসলাম, আবদুল হামিদ ও আলী হোসেন তার কাজে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন। পান চাষ করে লাভবান হওয়ায় আলী এলাকায় প্রথম পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। তার সাফল্য অনেক প্রতিবেশীকে সুপারি বাগান স্থাপনে অনুপ্রাণিত করে এবং তারা সবাই এখন অনেক ভালো করছে। বর্তমানে আলীর তিন ছেলে আলাদা বরজ বা পান বাগান গড়ে তুলে সফল কৃষকও হয়ে উঠেছেন। 

[৯] আমিনুল ইসলাম বলেন, আগে তাদের খুব অল্প জমি ছিল এবং একটি মাত্র বাগান ছিল। এখন তাদের ১২ বিঘা জমি এবং চার থেকে পাঁচটি আলাদা বাগান রয়েছে। তিনি বলেন, তারা কঠোর পরিশ্রম করে বেশিরভাগ সময় পান গাছের যত্নে সময় দিয়েছেন। 

[১০] রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, দেশে পান গবেষণার কোনো ব্যবস্থা নেই। রাজশাহীর পান সুস্বাদু। বিদেশেও যায়। এ সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে একটি পান গবেষণাকেন্দ্র করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে একটি দল মোহনপুরের মৌগাছি এলাকাকে পছন্দ করে গেছে। কিন্তু এখনো জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি।

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়