আব্দুল্লাহ আল আমীন: কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য বহুকাল ধরেই জৈবসার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে কেঁচোসার বা ভার্মিকম্পোস্ট। তবে কেঁচোর রয়েছে আরও অনেক সম্ভাবনাময় ব্যবহার। ব্রয়লারের খাদ্যে উদ্ভিদ প্রোটিনের বিকল্প কেঁচোর পাউডার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো শফিকুর রহমান শিশির, পশুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাসান মোহাম্মদ মোর্শেদ এবং পশুপালন অনুষদের তৃতীয় বর্ষের মো. আবিদুর রহমান খান, অজিত মজুমদার ও উম্মে সালমা । বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের আওতায় ২০১৬ সালে ২ বছর মেয়াদী প্রকল্পের অধীনে গবেষণাটি শুরু হয়।
গবেষকরা জানান, গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে রেড ওয়ার্ম বা কেঁচো। কেঁচোর প্রতি কেজিতে ড্রাই বায়ো মাস ১০-১২ শতাংশ পাওয়া যায়। বিভিন্ন মিডিয়াতে (প্লাস্টিক অথবা সিমেন্ট রিং) কেঁচো উৎপাদনের জন্যে জৈব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। সবজির উচ্ছিষ্টাংশ, কলাগাছ, মুরগির স্লারি ও গোবর একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে মাত্র ২১ দিন সময়ে ২০০গ্রাম কেঁচো বীজ থেকে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি কেঁচো উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। একবার বীজ স্থাপন করলে ফসলের মতো বার বার কেঁচো উত্তলন করা সম্ভব। সামনে এর পুষ্টিগুণাগুণ নিয়ে আরও গবেষণা করা হবে বলে জানান গবেষকরা।
গবেষণায় দেখা গেছে, পোল্ট্রি খাদ্য রেশনে কেঁচোর পাউডার ব্যবহারে ব্রয়লার মুরগির স্বাদে, রঙে ও চর্বির পরিমাণে পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তিত রেশন খাওয়ানো ব্রয়লারের মাংস কিছুটা লালচে রঙের হয়। বুকের মাংসে কম পরিমাণে চর্বি জমতে দেখা যায়।
প্রধান গবেষক ড. মো শফিকুর রহমান শিশির এ বিষয়ে বলেন, পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে উদ্ভিদ ও প্রাণি প্রোটিনের মূল্য বৃদ্ধি। ব্রয়লার খাদ্য রেশনে প্রায় ২০ শতাংশ প্রোটিন দেওয়া হয়। যার মধ্যে উদ্ভিদ প্রোটিনের প্রধান উৎস সয়াবিন ও প্রাণিজ প্রোটিনের জন্য মিট মিল, ব্লাড মিল সহ মিথিওনিন ও লাইসিন ব্যবহার করা হচ্ছে। এই খাদ্য উপাদানের দাম যেমন একদিকে বেশি তেমনি অধিকাংশ দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়।
এছাড়া মিথিওনিন ও লাইসিনের মতো অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো এসিডের প্রোফাইল উদ্ভিদের চেয়ে প্রাণিতে বেশি শক্তিশালী। ব্রয়লার রেশনের জন্য ব্যবহার মোট প্রোটিনের ৭-৮ শতাংশ কেঁচো থেকে পাওয়া প্রোটিন ব্যবহার করা যেতে পারে। ফলে খাদ্যের দাম যেমন কম আসবে তেমনি উৎপাদন খরচও কমে আসবে।
তিনি আরোও বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো পোল্ট্রির প্রোটিনের বিকল্প উৎস। পোল্ট্রির উৎপাদনে সবচেয়ে ব্যয় হয় খাদ্যে। খাদ্যের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে প্রোটিন। আমরা যদি ইনসেক্ট প্রোটিনকে পোল্ট্রির খাদ্য রেশনে যোগ করতে পারি তাহলে উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতিনিধি/এসএ