ঢাকার নগর পরিবহন আধুনিকায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ র্যাপিড পাস ব্যবস্থার সঙ্গে ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট ও ডেবিট (এটিএম) কার্ড যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। মেট্রোরেলে যাতায়াত আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য করা এই উদ্যোগের লক্ষ্য। যাতে যাত্রীরা তাদের ব্যাংক কার্ড ব্যবহার করেই সরাসরি স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এই উদ্যোগ সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য র্যাপিড পাসকে সর্বজনীন স্মার্টকার্ড হিসেবে গড়ে তোলা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবে, যা ভবিষ্যতে সব ধরনের পরিবহন সেবায় এবং পরবর্তী সময়ে আরও বিস্তৃত আর্থিক লেনদেনেও ব্যবহারের উপযোগী হবে।
ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক তাদের প্লাস্টিক কার্ডে ডুয়াল-ইন্টারফেস সুবিধা যুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ফলে আশা করা হচ্ছে, সব ব্যাংকের ইস্যু করা এটিএম কার্ড শিগগিরই মেট্রোরেলে ব্যবহার করা যাবে। পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা বলেন, র্যাপিড পাসকে ভবিষ্যতে সব ক্ষেত্রে ব্যবহারের কার্ড হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ফিচারটি সেই রূপান্তরকে সহজ করবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে র্যাপিড পাসে ব্যবহৃত হচ্ছে সনি ফেলিকা চিপ যা ব্যাংকগুলো ক্রয় করে ভবিষ্যতে চিপভিত্তিক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করবে, যেগুলোতে ইতোমধ্যে আর্থিক লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় চিপ রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আগামীকাল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে। মেট্রোরেলের অপারেটর ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড আগেও উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সর্বজনীন টিকিটিং চালুর চেষ্টা করেছিল, তবে পর্যাপ্ত কোম্পানির আগ্রহ না পাওয়ায় উদ্যোগটি সফল হয়নি। কর্মকর্তারা জানান, সিটি ব্যাংক পিএলসি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোনালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা আরও উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে মেট্রো স্টেশনগুলোতে কোনো অতিরিক্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে না। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার বলেন, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ চাইছে সব ব্যাংক এই সিস্টেম গ্রহণ করুক, যাতে ভবিষ্যতে তারা যে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ইস্যু করবে তা নির্বিঘ্নে মেট্রো রেলে ব্যবহার করা যায়। এই উদ্যোগের ফলে র্যাপিড পাস কার্ড সরবরাহে সরকারের ব্যয়ও কমবে। বর্তমানে দেশের প্রথম মেট্রো লাইন, এমআরটি লাইন-৬ ব্যবহারকারী যাত্রীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সরকারকে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। আরও পাঁচটি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকায় ভবিষ্যতে কার্ডের চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে দেশের ৬২টি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আগামীকাল বৈঠক করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালে র্যাপিড পাসকে সব ক্ষেত্রে ব্যবহারের কার্ড হিসেবে চালু করা হয়, তবে ২০২৩ সালে মেট্রোরেল চালুর পর এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পরবর্তীতে বিগত সরকার র্যাপিড পাসকে ডেবিট ও ক্রেডিট সুবিধা, ই-ব্যাংকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধের সুবিধাসহ সব ক্ষেত্রে কার্ডের ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে। বর্তমানে ১৩ লাখ কার্ড ব্যবহারকারীর হাতে রয়েছে। যদিও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ গত ২৫ নভেম্বর র্যাপিড পাস এবং মেট্রোরেলের নির্দিষ্ট এমআরটি পাস উভয়ের জন্য অনলাইন রিচার্জ সুবিধা চালু করেছে, তবে নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন বা এনএফসির মতো অন্যান্য ফিচার এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। কারণ ক্লিয়ারিং হাউস প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ অন্তর্বর্তী সরকার বাড়ায়নি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনলাইন রিচার্জ এবং ডুয়েল-ইন্টারফেস সুবিধা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব সক্ষমতায় তৈরি করছে। তবে মোবাইল ফোনভিত্তিক টিকিটিংসহ আরও উন্নত ফিচারগুলো ছাড়া প্রকল্প এগোনো সম্ভব নয়, কারণ এগুলোতে বাস্তবায়নে সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু করে এবং ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর চালু হয়েছে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। ফলে বর্তমানে এটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন