সমকালের প্রতিবেদন।। নির্বাচনে কোনো এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে কে নির্বাচনে অংশ নেবেন, তা দলের তৃণমূল নয়, কেন্দ্র ঠিক করে, এ নিয়ে ওহি নাজিল হয় এবং আমরা সবাই তা মেনে নেই বলে মন্তব্য করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
সোমবার রাজধানীর আরগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের একটি সেশনে প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার পেছনে আমাদের অনেকেরই দায় কম নয়। তিনি জননেত্রী হয়ে এসেছিলেন, আমরাই তাকে স্বৈরাচার বানিয়েছি।
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচন প্রক্রিয়ার ত্রুটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের কোন নেতা দলের প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা দলের তৃণমূল ঠিক করে না, ওপর থেকে ওহি নাজিল হয়, তা দেখে মানুষ ভোট দেয়। এভাবে স্বৈরাচার তৈরি হয়।
এ অবস্থার কারণ ব্যাখ্যায় গভর্নর বলেন, আসল সমস্যা হলো- নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা কী সত্যিকারের ভালো মানুষকে নির্বাচিত করি? এমন মানুষকে কী ভোট দেই- যিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিশ্বাস করে এবং এই মূল্যবোধকে ধারণ করেন?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে সরে গিয়ে ড. কামাল বা অন্য কোনো ভালো মানুষরা নির্বাচনে দাঁড়ান, তাদের ভোট দেই না। বি-চৌধুরীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের ভোটাররা ‘মার্কা’কে নির্বাচিত করেন প্রার্থীকে নয়। এখন প্রার্থী যদি ঠিক ব্যক্তি না হন, তাহলে তিনি রাষ্ট্রের সব কিছু দখলে নেবেন এবং স্বৈরাচারী হয়ে উঠবেন- এটাইতো স্বাভাবিক।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য সব সময় সংগ্রাম হয়েছে। তবে সবসময় হতাশও হতে হয়েছে। আমরা যাদের নেতা নির্বাচন করেছি, তারা স্বৈরশাসক হয়েছেন। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তারা জবাবদিহির কথা ভুলে যান। জবাবদিহিতা সংস্কৃতি ও চর্চা না থাকলে গণতন্ত্র কার্যকর থাকে না। আমরা (জনগণ) তাদের জবাবদিহি করতে পারেনি, নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে পারিনি।
তিনি বলেন, এক সরকার বদলে আরেক সরকার আসার পরই পুরো ‘সিস্টেম’ বদলে যায়। আমরা এ ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারিনি।
মুক্তিযুদ্ধের আগে আমাদের যে মূল্যবোধ ছিল, তা হারিয়েছি- মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এটা ফিরিয়ে আনতে সমাজের বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সংস্কৃতি গড়তে হবে। কোনো দলের প্রতি দুর্বলতা থাকা দোষণীয় নয়। তবে দল যদি খারাপ কিছু করে, তা বলার সাহস দেখাতে হবে।
গভর্নর বলেন, জনগণ যদি নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন নিজেদের হাতে তুলে না নেন, ক্রমাগত সরকারকে চ্যালেঞ্জ না করেন এবং নিজেদের অধিকার আদায় না করে নেন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের অসাংবিধানিক ও বেআইনি আদেশ না মানেন, তাহলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র আসবে না।