আমাদের কাছে পরিচিত ভ্যানিলা এসেন্স মূলত কৃত্রিম। অথচ প্রকৃত ভ্যানিলা হলো এক ধরনের ফল, যা বরবটি বা শিমের মতো দেখতে। এটি জন্মায় অর্কিডজাতীয় গাছে। ইন্দোনেশিয়া, ভারতসহ কয়েকটি দেশে ভ্যানিলার বাণিজ্যিক চাষ হলেও বাংলাদেশে এর গবেষণামূলক চাষ শুরু হয় মাত্র তিন বছর আগে।
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামী মসলা *ভ্যানিলা বিন* উৎপাদনে বড় সাফল্য পেয়েছে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ফল এসেছে পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা গাছে। গবেষকরা বলছেন, এই সাফল্যের ফলে বাংলাদেশে কৃত্রিম ভ্যানিলা এসেন্স আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং ভবিষ্যতে বিদেশে রপ্তানির সুযোগও তৈরি হবে।
এবার বগুড়ার গবেষণা কেন্দ্রে এসেছে থোকায় থোকায় ভ্যানিলা বিন। বিশ্ববাজারে বর্তমানে এক কেজি ভ্যানিলা বিনের দাম ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ফলে এ মসলার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ব্যাপক বলে মনে করছেন গবেষকরা।
গবেষক আবু হেনা ফয়সাল ফাহিম জানালেন—পাঁচ থেকে ছয় ধরনের ভিন্ন লাইন নিয়ে তিনি কাজ করছেন। এর মধ্যে ভারতের একটি লাইন ও ইন্দোনেশিয়ার একটি লাইনে সফলভাবে ফল ধরেছে। তবে ভ্যানিলা চাষ খুবই শ্রমসাপেক্ষ। ফুল ফোটার পর প্রতিটি ফুলকে হাতে পরাগায়ন করতে হয় সকাল ১২টার মধ্যে। এভাবে সফল পরাগায়নের পরই বিন পাওয়া সম্ভব।
এরই মধ্যে ভ্যানিলা বিন থেকে এসেন্স তৈরির পরীক্ষাও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রক্রিয়ায় বিনগুলোকে গরম পানির ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়, এরপর দুই মাস ধরে ধীরে ধীরে রোদে শুকানো হয়। শুকানোর পর ভ্যানিলা কালচে রঙ ধারণ করে এবং এর ভেতরের নরম অংশ থেকে তৈরি হয় প্রাকৃতিক এসেন্স। একটি বিন থেকেই পাওয়া যায় প্রায় এক টেবিলচামচ ভ্যানিলা এসেন্স।
বিশ্বের ভ্যানিলা উৎপাদনের ৫৮ শতাংশই ইন্দোনেশিয়ায় হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত ভ্যানিলা এসেন্সের বেশিরভাগই কৃত্রিম, যা কেমিক্যালযুক্ত। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ভ্যানিলা চাষ সম্ভব হলে কৃত্রিম ভ্যানিলা ব্যবহার কমবে এবং দেশি ভ্যানিলা বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে বলে আশা গবেষকদের।