শিরোনাম
◈ একের পর এক নিষেধাজ্ঞা, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক কোন দিকে? নানা প্রশ্ন ◈ স্থলপথে কেন বাংলাদেশি পণ্যে নিষেধাজ্ঞা, জানাল ভারত ◈ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কর্নেল অলির সাক্ষাৎ ◈ ভারতে কমেছে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার, বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে-সৌদি আরবে ◈ সাফ শি‌রোপা জেতা হ‌লো না বাংলা‌ে‌দে‌শের, ভার‌তের কা‌ছে টাইব্রেকারে হে‌রে গে‌লো ◈ ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা, দিলীপ ঘোষের হুঁশিয়ারি: ‘বাংলাদেশ টক্কর দিলে বাঁচবে না’ ◈ যে ‘৩ শর্তে’ সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ স্থগিত হয় ◈ আইসিসি’তে জয় শাহ: ক্রিকেটে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করছে ভারত? ◈ সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভ নিয়ে যা জানালেন আইএসপিআর ◈ ‘ইউনিফর্ম পড়ে আসছি, আমি কাপুরুষ না’- চাকরিচ্যুত সেনাদের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৮ মে, ২০২৫, ০৭:২১ বিকাল
আপডেট : ১৯ মে, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

লোকসান কমাতে বাজেট নির্ভরতা পেট্রোবাংলার

মনজুর এ আজিজ : লোকসানি খাতের দূর্নাম ঘোচাতে এবার বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলা ও তার অধীনস্থ কোম্পানিগুলো। পেট্রোবাংলা চায় এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার, আর তিতাসসহ বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাবি অস্বাভাবিক উৎসে কর কমিয়ে আনা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে অনেকটা গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট সুত্র। 

সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে গ্যাসে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। ৮২ কার্গো এলএনজি আমদানি বিবেচনা করলে ওই ভর্তুকি ঠিক ছিল। কিন্তু গ্যাসের ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে ৯৮ কার্গো আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে কারণে ঘাটতি সামাল দিতে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট (প্রাক্কলিত) ৭ হাজার কোটি টাকা প্রত্যাহারের নিমিষে আছে পেট্রোবাংলা।

এদিকে তিতাস গ্যাসসহ বিতরণ কোম্পানিগুলো অনেকদিন ধরেই উৎসে কর কর্তনের পরিমাণ নিয়ে আপত্তি করে আসছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, বেশি পরিমাণে কর কর্তন করা হলেও বছর শেষে তা সমন্বয় করছে না এনবিআর। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলেছে, আয়কর আইন-২০২৩ এবং উৎসে কর বিধিমালা-২০২৩ এর ধারা-০৩ (সংশোধনী) অনুযায়ী যে কোন পরিমাণ বিক্রি গ্যাসের বিল হতে ভ্যাট ব্যতিত অর্থের উপর ২ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। যে অনুযায়ী ভোক্তা কর্তৃক কোম্পানির গ্যাস বিল হতে ২ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তৃন করে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করছে। যদিও তিতাস গ্যাসের উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ২৫ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক পর্যায়ে দশমিক ৩০ শতাংশ করার বিষয়ে আলোচনা হলেও এখন ১ শতাংশ করার জোর সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে করদায় ছিল (পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে মুনাফার উপর ২০ শতাংশ) ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। কিন্তু উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে ৮৭২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ওই অর্থবছরে আমাদের নীট লোকসান হয়েছে ৭৪৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। উৎসে কর্তনকৃত কর সমন্বয় করা হলে কোম্পানির কোন লোকসান থাকে না। তাছাড়া আয়কর আইনের ধারা ১৬৩ অনুযায়ী উৎসে করদায় ও উৎসে কর্তনকৃত আয়কর এর মধ্যে যেটি বেশি হবে সেটি চুড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, বিতরণ কোম্পানি হিসেবে তিতাসের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে গ্যাসের বিতরণ চার্জ। কোম্পানিটি বিতরণ চার্জ পায় ঘনমিটার প্রতি ২১ পয়সা। আর অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ হারে কর্তন করা হচ্ছে ৪৫ পয়সার মতো। এখানে কোম্পানিটির ২৪ পয়সার মতো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। পেট্রোবাংলার পক্ষ অগ্রিম আয়কর কমিয়ে আনার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এক সময় অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ ছিল, গত বছর কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। আমরা দশমিক ৩০ শতাংশ করার দাবি করেছি।  

তিনি বলেন, বর্তমানে গ্যাসের গড় মূল্য (মিশ্রিত মূল্য) পড়ছে ২৯.৭২ টাকা, আর গড় বিক্রয় দর রয়েছে ২২.৬৪ টাকা। এতে ঘনমিটারপ্রতি ৭ টাকা ৮ পয়সা হারে ঘাটতি থাকছে। তিনি বলেন, ৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে চলতি অর্থবছরে ৮২ কার্গো আমদানি করলে ঠিক ছিল। কিন্তু চলতি মাসে বাড়তি এলএনজি আমদানির নির্দেশনা রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯৮ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হলে তাতে ১৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ছাড়িয়ে যেতে পারে। সে কারণে এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করার আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে শেভরন বাংলাদেশকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম দেওয়া হয় ২.৭৬ ডলার, আর তাল্লোর সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ২.৩১ ডলার। বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ৩টি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কিনে থাকে পেট্রোবাংলা। সিলেট গ্যাস ফিল্ড কেম্পানি ও বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানিকে প্রতি হাজার ঘনফুটের জন্য দাম দেওয়া হয় ২৮ টাকার মতো, বাপেক্সকে দেওয়া হয় ১১২ টাকার মতো। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজির দাম পড়েছে ১০.৬৬ ডলার ও ওমান থেকে আনা এলএনজির দাম পড়েছে ১০.০৯ ডলার।

অথচ এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে ২৮০০ মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ কমে আসায় অনেক কূপেই উৎপাদন কমে গেছে। বর্তমানে ১৮৭০ মিলিয়নে নেমে এসেছে দেশীয় উৎপাদন। বিদায়ী বছরে ২৫ শতাংশ গ্যাস আমদানি করা হয়েছে। আর দেশীয় উৎস থেকে যোগান এসেছে ৭৫ শতাংশ। ২০৩০ সালে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ ৩০ শতাংশে নেমে আসবে, আর আমদানির অনুপাত বেড়ে ৭০ শতাংশ হবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা।

দেশীয় উৎস থেকে পাওয়া গ্যাসের গড় মূল্য দেখা যাচ্ছে ৬.০৭ টাকা, আর ২৫ শতাংশ চড়াদামে আমদানির পর দর দাঁড়াচ্ছে ২৯.৭২ টাকা। ২৫ শতাংশ আমদানি করতে গিয়েই দাম সামাল দেওয়া কঠিন হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে ৭০ শতাংশ আমদানির পর কি দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়