মনজুরুল ইসলাম, নাটোর: [২] নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১১.২৬ মিটার নিচে নেমেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতে গভীর নলকূপে পানি উঠলেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না শ্যালো মেশিনে। এতে করে ফসলের খেতে সুবিধামতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা।
[৩] কৃষকরা বলছেন, শুস্ক মৌসুমের শুরুতেই কৃষকের সেচ দেওয়ার প্রধান উৎস বৈদ্যুতিক লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তা ছাড়া পানির উৎসের সংখ্যা কমে আসাসহ নানা কারণে কৃষকরা বোরো খেতে সেচ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে মাটির অন্তত ৮-১০ ফুট গর্ত করে ডিজেলচালিত শ্যালো বসিয়ে পানি তুলে সেচ সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে পরিশ্রমের পাশাপাশি বাড়ছে সেচ খরচ। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হলে এবং লোডশেডিং না কমলেও শুষ্ক মৌসুমজুড়েই এই অবস্থা বিরাজের শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক।
[৪] উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৫ বছরের গড় তথ্য মতে, ২০১৯ সালে এই স্তর ৭.১৮ মিটার, ২০২০ সালে ৮.২৩ মিটার, ২০২১ সালে ৯.৫৯ মিটার, ২০২২ সালে ১০.৪৪ মিটার এবং ২০২৩ সালে ১১.২৬ মিটার পানির স্তর নিচে নেমেছে।
[৫] উপজেলায় ফসলি জমিতে সেচ দিতে প্রায় ১৪ হাজার সেচ যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। আশঙ্কাজনকভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে বোরো চাষিরা ৮ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত মাটি গর্ত করে শ্যালো মেশিন ও মোটর বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
[৬] খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারনে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎতের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে লোডশেডিং। এতে করে সেচ পাম্পগুলো ঠিকমতো চালাতে পারছেন না কৃষকরা। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর ফসলি জমির বোরো ধান নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে কৃষক। এই উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার আর ট্রান্সফরমার রয়েছে প্রায় ৩ হাজার।
[৭] সরেজমিনে উপজেলার হালতিবিল বিস্তীর্ণ মাঠে বোরো আবাদের জমিতে দেখা যায়, অনেক বোরো চাষি গভীর নলকূপ স্থাপনের পরও জমিতে সেচ কাজে আশানুরূপ পানি পাচ্ছে না। তারা গর্তের মধ্যে মেশিন ও মোটর বসিয়ে পানি তোলার চেষ্টা করছে।
[৮] বোরো চাষি শিলন মৃধা, জালাল হেসেনসহ অনেকে বলেন, গভীর পাইপ বসিয়ে আগের মত সেচ কাজের জন্য ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। শ্যালো মেশিনে বা মোটরে পানি কম ওঠায় বোরো চাষাবাদে জ্বালানি খরচ বেড়ে গেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজে সময় বেশি লাগছে।
[৯] এদিকে নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি গ্রাম থেকে সোনাপাতিল হয়ে মহিষমারি পর্যন্ত খাল পুনঃখনন শুরু করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার খালের প্রায় অর্ধেক কাটা শেষ হয়েছে গত শুস্ক মৌসুমে। এ বছর শুস্ক মৌসুমে অবশিষ্ট খাল খননে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। সেখানে কৃষকরা দাবি করছেন সেগুলো তাদের সম্পত্তি। এ নিয়ে অবস্থায় অনেকটা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় কৃষকরা।
[১০] নাটোর বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, কৃষকরা দাবি করছেন এগুলো তাদের সম্পত্তি, কিন্তু এক সময় এখানে খাল ছিল। জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানির স্তরের সঠিকতা রাখার জন্য খাল খনন জরুরি।
[১১] নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর নলডাঙ্গা সাব-জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. আল ইমরান আহমেদ বলেন, উপজেলায় লোডশেডিং খুবই সামান্য। সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে সব সময় নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে।
[১২] এ প্রসঙ্গে নলডাঙ্গা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মো. কিষোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন খরার কারণে কৃষকরা উদিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। বিলে, ডোবা, নালা ও খালে পানি থাকলে বোরো চাষিদের সেচ কাজে অসুবিধা হতো না। কিন্তু ২ থেকে ৩ দিন যাবৎ নলডাঙ্গায় ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা ওপরে উঠবে। সেচ নিয়ে আর সমস্যা হবে না।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :