মনজুর এ আজিজ : দেশের কৃষিখাতে ব্যবহারের জন্য রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ১ লাখ ১০ মেট্রিক টন সার আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৮০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫০ কোটি ৫০ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এলএনজি আমদানির এসপিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এসব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৪১ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মূল্য ধরা হয়েছে ৩৮৫ দশমিক ৫০ ডলার।
বৈঠকে সার কেনার বাকি দুটি প্রস্তাব নিয়ে আসে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একটি প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় চীন থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
জানা গেছে, বিএডিসি কর্তৃক চীন থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্তৃক নীতিগত অনুমোদিত হয়। বিএডিসি ও চীনের মধ্যে গত ১০ জানুয়ারি সার আমদানির জন্য চুক্তি সই হয়।
সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে চীন থেকে প্রথম লটে ৪০ হাজার (+১০%) টন ডিএপি সার আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে এই সারের জন্য ব্যয় হবে ২ কোটি ৯১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৫৮ কোটি ২০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। প্রতি টন ডিএপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৭২৯ দশমিক ২৫ ডলার।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরব থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এ সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৫১ কোটি ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি টন ডিএপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৭১৫ ডলার।
এলএনজি আমদানির অনুমোদন: সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এলএনজি আমদানির এসপিএ স্বাক্ষরের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জিটুজি ভিত্তিতে ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ইউএই- থেকে স্বল্পমেয়াদে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এলএনজি ক্রয়ের দরপ্রস্তাব ও ড্রাফট এলএনজি সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এসপিএ) অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ইউএই এর সঙ্গে পেট্রোবাংলা ২০১৮ সাল ও ২০২৩ সালে দুটি দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রথম চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত মোট ১২২ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করেছে এবং দ্বিতীয় চুক্তির আওতায় ২০২৬ সাল হতে এলএনজি সরবরাহ করবে।
দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তির আওতায় ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ইউএই থেকে স্বল্পমেয়াদে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে এলএনজি সরবরাহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এলএনজি আমদানিতে স্পট মার্কেটের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যে জিটুজি ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদে ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড ইউএই থেকে ২০২৫ সালে ৫ কার্গো এবং ২০২৬ সালে ১২ কার্গো এলএনজি জাপান-কোরিয়া মার্কেট ফরমুলা-অনুযায়ী দরপ্রস্তাব অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়।