শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ মে, ২০২৩, ০১:৫০ দুপুর
আপডেট : ২৯ মে, ২০২৩, ০১:৫০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সিরাজগঞ্জে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার-৩

সোহাগ হাসান, সিরাজগঞ্জ: দীর্ঘ ৫ বছর পর ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিরাজগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)।  নিহত বিউটি খাতুন (২৫) জেলার এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম গ্রামের মো. সাচ্চু মিয়ার মেয়ে। 

এই ঘটনায় সাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ১৪ মে এনায়েতপুর থানায় অজ্ঞাত নামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় মোট ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

গ্রেপ্তাকৃতরা হলো, এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে স্বপন ব্যাপারী (৩৭), মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. মমিন (৫৫), মমিনের স্ত্রী আনু বেগম (৪০) ও ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওমর ফারুক (২৮) কে গ্রেপ্তার করা হয়।  

সোমবার (২৯ মে) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।

পুলিশ সুপার বলেন, ২০১৮ সালের ১৩ মে রাতে বিউটি খাতুন তার নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পরে। এসময় বিউটির মা কোমেলা খাতুন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে দেখেন তার মেয়ের ঘরের দরজা খোলা। সেই সময় বিউটিকে নাম ধরে ডাকলে বিউটি কোন সাড়া-শব্দ না করলে বিউটির মা বিউটির শরীরে হাত দিয়ে ডাকাডাকি করে। পরে চিৎকার দিলে বিউটির পরিবারের সদস্যরা ঘরের আলো জ্বালিয়ে বিউটি মৃত অবস্থায় পরে আছে। পরিবারের লোকজনের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে থানা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। পরে বিউটির বাবা সাচ্চু মিয়া বাদী হয়ে এনায়েতপুর থানায় অজ্ঞাত নামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ পিবিআই তদন্ত করতে থাকে। মামলাটি তদন্তের প্রায় ২ বছর পরে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা এর নির্দেশে সিরাজগঞ্জ পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘদিন তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওমর ফারুক (২৮) কে গ্রেপ্তার করা হয়। ফারুকে তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় চলতি বছরের ২৩ ও ২৫ মে রাতে সন্দহমুলক ৩জনকে আটক করে। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যার সাথে জড়িত থাকায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ২০১৪ সালে এনায়েতপুরের কোচগাঁও গ্রামের আব্দুল্লাহের সাথে বিউটি খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ বছর পরে স্বামীর সঙ্গে তালাক হয়। বিউটি বাবার বাড়িতে থাকাবস্থায় প্রতিবেশী ওমর ফারুকের সঙ্গে মোবাইলে কথা হতো। একপর্যায়ে ফারুকের প্রস্তাব না করে বিউটি। পরে বিউটির ছোট বোন আলোমতির স্বামীর পরিবারের সাথে ঝামেলা হয়। পরে বিউটির বাবা সাচ্চু মিয়া তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্বপন ব্যাপারী বিষয়টি সমাধান করার জন্য অনুরোধ করে। স্বপনের মাধ্যমে বিউটির ছোট বোন আলোমতির স্বামীর বাড়ীর সমস্যার সমাধান হওয়ায় বিউটির পরিবারের সাথে স্বপনের সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। বিউটির ছোট খালা আন্না মাদক ব্যবসা করায় সে বিউটির মোবাইল দিয়ে স্বপনের সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলত।

অপর দিকে স্বপন মাদক সেবী হওয়ায় মাঝে মধ্যে স্বপন আন্নার বাড়িতে যাওয়া আসা করত এবং মাদক সেবন করত। সেই সুবাদে বিউটির সাথেও স্বপনের দেখা সাক্ষাৎ হত এবং মোবাইলে কথাবার্তা হত। স্বপন, বিউটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করত। কিন্তু স্বপন সরাসরি বিউটিকে প্রস্তাব দিতে না পেরে আন্নাকে জানায়। পরবর্তীতে স্বপন আন্নার মাধ্যমে বিউটির সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। বিউটির ছোট খালা আন্নার মাধ্যমে আন্নার বাড়ীতে স্বপন নিয়মিত বিউটির সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করত।

একপর্যায়ে বিউটির বাবা সাচ্চু মিয়া স্বপনকে তার প্রতিবেশী ওমর ফারুক বিউটিকে ডিসটার্ব করে তাকে একটু শাসন করে দিতে হবে। স্বপন এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় সে ওমর ফারুককে শাসন করে। বিউটির সাথে স্বপনের অনুমান ২ মাস সম্পর্ক চলার পরে বিউটিকে বিয়ে করার জন্য স্বপনকে চাপ দেয়। স্বপন বিবাহিত হওয়ায় বিউটিকে বিয়ে করতে রাজি না হলে বিউটি স্বপনকে জানায় বিউটি অন্তঃসত্ত্বা।

পরবর্তীতে বিউটি স্বপনের উপর আরো বেশী চাপ সৃষ্টি করলে স্বপন কি করবে তা ভেবে না পেয়ে ঘটনার ১০/১২ দিন আগে প্রতিবেশী ওমর ফারুককে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে।

স্বপন বিউটিকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে এবং ওমর ফারুককে স্বপনের সাথে থাকতে বলে। কিন্তু ওমর ফারুক রাজি না হলে স্বপন ওমর ফারুককে ভয়- ভীতি দেখায়। স্বপন বিউটির সাথে ওমর ফারুকের পূর্বের সম্পর্কের বিষয় দিয়ে ব্লাকমেইল করে হত্যার পরিকল্পনায় সাথে নেয়।

পরে স্বপন বিউটির ছোট খালা আন্নার কাছে বিউটিকে হত্যা করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আন্না তার নিজের ভাগনিকে হত্যা করতে রাজী না হলে স্বপন তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে রাজী করায়। পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে  আন্নাকে দিতে চায়। তাৎক্ষনিক স্বপন ২০ হাজার ওমর ফারুক ৩০ হাজার টাকা দেয় আন্নাকে। তখন বিউটির ছোট খালা তার আপন মেজো বোন আনু বেগমকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিউটিকে হত্যা করতে সহায়তা করতে বলে। আনু বেগম তার স্বামী মোমিন এর সাথে কথা বলে তাকে রাজি করায়। তাদের পুর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৩ মে ২০১৮ সালে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিউটিদের বাড়ির পাশে সবাই একত্র হয়। পরে স্বপন, ওমর ফারুক, আনু, আন্না ও মোমিন বিউটির ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থা বিউটিকে হাত-পা ও মাথা চেপে ধরে মুখে বালিশ চাঁপা দিয়ে হত্যা করে কৌশলে পালিয়ে যায় তারা।

প্রতিনিধি/এসএ 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়