ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ১১ সেপ্টেম্বর ছিনতাইকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে রেজাউল করিম (২৮) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। পরের দিন শুক্রবার উপজেলার মুকুন্দপুর রেললাইনের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ থেকে মো. আমিনুর ইসলাম (৩২) নামে এক যুবককে ফেলে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সম্প্রতি রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে আফতাব আহমেদ (২০) নামের এক তরুণকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনে ইদানীং ছিনতাইকারীর তৎপরতা বেড়ে গেছে।
বিশেষ করে রাতের যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বুধবার রাতে টঙ্গী ও বিমানবন্দর স্টেশনে চলন্ত ট্রেনে একাধিক যাত্রী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা জানান, কয়েকজন যুবক চলন্ত ট্রেনে উঠে যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে তাদের মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে এক বৃদ্ধ যাত্রীকে মারধরও করা হয়।
রেলওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, তবে চক্রটি অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বেপরোয়া। তারা চলন্ত ট্রেনে হঠাৎ উঠে অপরাধ সংঘটন করে দ্রুতই পালিয়ে যায়, ফলে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে যাত্রীরা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা জেলার রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ট্রেনকেন্দ্রিক ছিনতাই প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। স্টেশনের পাশাপাশি ট্রেনেও পোশাকধারী পুলিশ পাহারা দেয়। সাদা পোশাকেও রেলওয়ে পুলিশ থাকে। গত বুধবারেও দুজন ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে।’
জানা গেছে, সারা দেশে চলাচলকারী আন্তনগর ও মেইল ট্রেনগুলোতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। কখনো ছদ্মবেশে যাত্রী সেজে, আবার কখনো দলবেঁধে হঠাৎ চড়াও হয়ে যাত্রীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। চেতনানাশক স্প্রে বা ইনজেকশন ব্যবহার করে অজ্ঞান করে মালামাল লুট করে নেওয়ার ঘটনাও আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। অনেকে দাবি করছেন, ছিনতাইকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কামরাগুলো টার্গেট করে কাজ করে থাকে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ৫০ মিনিটে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ছ’ নম্বর বগিতে উঠে সিটে বসে ফোনে কথা বলছিলেন মাহবুবুর রহমান। ট্রেনের এই শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে তখন দু-একজন করে যাত্রী উঠতে শুরু করেছে। মাহবুবুর রহমান বলেন, সিটে বসে বাসায় ফোনে কথা বলছি এর মধ্যে হঠাৎ আমার ফোন টান দিয়ে দৌড় দেয় ছিনতাইকারী। আমার সিট দরজার কাছে ছিল। ফোন ছিনতাইয়ের ভয়ে এসিতে চেয়ারে যাতায়াত করি। অথচ ট্রেনের ভিতরে উঠে ছিনতাইকারী আমার ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। পেছনে দৌড়ে গেলেও ধরতে পারিনি।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন শোয়েব আলী। তিন বন্ধু মিলে রাতের ট্রেনে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে ভোরে কক্সবাজার পৌঁছার পরিকল্পনা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তারা। শোয়েব আলী বলেন, আমাদের ট্রেনের বগি সামনের দিকে হবে জানতে পেয়ে ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে যাই। ফাঁকা দেখে একটা চেয়ারে বসে বাসায় ভিডিও কল দিয়ে আমার ছোট মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম। হঠাৎ আমার পেছন থেকে দৌড়ে এসে ফোন কেড়ে নিয়ে দৌড়ে পালায় ছিনতাইকারী।
পেছনে পেছনে আমিও চিৎকার দিয়ে ছুটতে শুরু করি। কিন্তু সবার চোখের সামনে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় আমি এত চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এ প্রসঙ্গে যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অহরহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে আমি নিজেও ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলাম। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন