মোঃ রফিকুল ইসলাম মিঠু, ঢাকা : রাজধানীর উত্তরা ও তুরাগসহ ছয় থানা এলাকায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। বিশেষ করে ইয়াবা ট্যাবলেট এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং মারাত্মক মাদক হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্কভিত্তিক হোম ডেলিভারির মাধ্যমে প্রতিদিন লাখো টাকার ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণ করছে তিন স্তরের সশস্ত্র সিন্ডিকেট—শীর্ষে পাইকারি সরবরাহকারী, মাঝখানে খুচরা বিক্রেতা এবং তৃতীয় স্তরে দালাল।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, উত্তরা বিভাগের ছয় থানায় অন্তত দুই শতাধিক হটস্পট রয়েছে। প্রতিদিন কোটি টাকার মাদক লেনদেন হয়। টঙ্গী, বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও কমলাপুর রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে মাদকের চালান আসে। সড়কপথ ও বিমানপথেও ইয়াবা সরবরাহ হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাদকাসক্তদের মধ্যে ৫৮% ইয়াবাসেবী। অল্প বয়সীদের মধ্যে এর ব্যবহার ভয়াবহভাবে বাড়ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ইয়াবা শরীরকে সাময়িক চাঙ্গা করলেও তা দ্রুত মানসিক বিপর্যয়, হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস, কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া এবং যৌনক্ষমতা হ্রাসের মতো মারাত্মক ক্ষতি ডেকে আনে। বর্তমানে নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে ভর্তি রোগীদের ৮০% ইয়াবাসেবী।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায় নারী ও গৃহবধূদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। কেউ কেউ ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অপরদিকে গডফাদাররা বহাল তবিয়তে থাকলেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, উত্তরা ও তুরাগে গড়ে ওঠা হোটেল, গেস্টহাউজ ও বস্তি এলাকায় অবাধে মাদক ব্যবসা চলছে। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান হলেও মূলহোতারা অদৃশ্য থেকে যায়। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ব্যবসা শুরু হয়।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য বস্তি উচ্ছেদ ও পুনর্বাসন, মাদক সিন্ডিকেট ভাঙা, জিরো টলারেন্স ভিত্তিক চেকপোস্ট বৃদ্ধি, আর্থিক লেনদেন নিয়ন্ত্রণ ও দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ অ্যাকশন প্ল্যান জরুরি।
ডিএমপির তুরাগ থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং এলাকা ভিত্তিক চিরুনি অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন।
রাজধানীর উত্তরা-তুরাগসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা ও আসক্তি সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী প্রজন্ম ভয়াবহ সংকটে পড়বে।