মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় ‘ডাকাতি হচ্ছে’ বলে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হলে স্থানীয়রা লাঠিসোঁটা হাতে দল বেঁধে রাস্তায় নেমে যান। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, চান মিয়া হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় এই ডাকাতির আতঙ্ক ছড়ায়। সূত্র : জাগোনিউজ
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চুরি, ডাকাতি, লুটের খবর দিচ্ছেন বাসিন্দারা। মঙ্গল ও বুধবার (৬-৭ আগস্ট) রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েও কেউ কেউ সহযোগিতা চেয়েছেন কিংবা কাউকে আতঙ্কের কথা জানাতে দেখা গেছে।
নবোদয় হাউজিংয়ের একটি বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা ডাকাতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সেখানকার একটি বাড়ির মালিক। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয়রা ১১ জনকে আটক করে তাদের হাতে তুলে দেয়।
এ ধরনের আতঙ্ক গত দুদিন ধরে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, বাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় বিরাজ করছে। এলাকাবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ছাত্ররাও এগিয়ে এসেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব থানাই পুলিশশূন্য। পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে কোনো পুলিশ সদস্যই ছিলেন না। বিমানবন্দরসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতেও পুলিশের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, পল্টন, শাহআলী, উত্তরা পূর্ব থানাসহ বিভিন্ন থানায় সোমবার বিকেল থেকে রাতভর হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সামনে থাকা গাড়ি। থানার কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
ঢাকার বাইরে খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, যশোর, পঞ্চগড়, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল প্রভৃতি জেলা থেকে হামলা, লুটের খবর পাওয়া গেছে।
খুলনায় বিভিন্ন শো-রুম, দোকান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইদ্রিস আলী নামে এক ব্যবসায়ী। তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে মালামাল লুট করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ থানার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের মেম্বর বরুণের চালের আড়ত ও মুদি দোকানে হামলা চালিয়ে সব মালামাল দুর্বৃত্তরা দিনে-দুপুরে লুট করা হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় কোটি টাকার পণ্য ছিল বলে দাবি ভুক্তভোগীর।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের জুমছড়ি এলাকায় দৈনিক সমকালের কক্সবাজার প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল মামুনের বাড়িতে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। চিহ্নিত ডাকাতরা বসতবাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয়। এসময় বাড়িতে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও কাপড়চোপড়সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতদল।
এছাড়া মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি বাড়িতে হামলা করে জিনিসপত্র লুটপাটের খবর পাওয়া গেছে। টাঙ্গাইলের নাগরপুরেও ডাকাতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়। যশোরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট হয়েছে বলে জানা যায়।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর অবস্থা আরও বেগতিক হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ থানা আক্রমণের শিকার হয়। এরপর থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা একরকম অঘোষিতভাবে নিষ্ক্রিয়। এই সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্ত ও এক শ্রেণির মানুষ চুরি, ডাকাতি ও লুট করছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সব শ্রেণির জনগণ।
পুলিশ সূত্র বলছে, সারা দেশে চার শতাধিক থানায় হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। অবস্থা বিবেচনায় কেউ থানায় বা নিজ নিজ কার্যালয়ে থাকা কেউ নিরাপদ মনে করছেন না। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আত্মগোপনে রয়েছেন। আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর রোষ কাটছেই না। কোনো কোনো থানা থেকে সেনা সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেছেন।
সোমবার দুপুরের পর থেকেই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামাল লুট হতে থাকে। আগুনও দেয় দুর্বৃত্তরা। বুধবার (৭ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে জানানো হয়েছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সঙ্গে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও আনসার সহায়তা করছে।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে জানানো হয়েছে, চলমান পরিস্থিতিতে আনসার বাহিনীর সদস্যদের থানা, বিমানবন্দর ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে সড়ক ঘুরে দেখা যায় শিক্ষার্থীরাই সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করছেন। তারা সংঘর্ষের পর যে ধ্বংসস্তূপ হয়েছে সেটিও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :