আজাহার আলী সরকার: [২] কুয়ালালামপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল তিনি মারা যান। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার বোন মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর তাকে সেখানেই দাফন করা হবে।
[৩] নব্বই দশকের আতঙ্ক ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপের অন্যতম সদস্য তানভীর ইসলাম জয় দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিতভাবে তাকে ডায়ালাইসিস করতে হতো। সবশেষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ভর্তি হন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের হসপিটাল কাউন্সিলর টংকু ইউ কে-তে। গত ১২ এপ্রিল সেই হাসপাতালের চিকিৎসক প্রফেসর ডক্টর ফরিদা মোহা. নুর স্বাক্ষরিত ডেথ সার্টিফিকেটে তার নাম লেখা আছে তানভীর রানা।
[৪] সূত্র বলছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী জয় বাংলাদেশে কয়েক ডজন খুন, চাঁদাবাজি ও অপহরণ মামলায় অভিযুক্ত। বাড্ডার রাইন হত্যাকাণ্ডের পর আত্মগোপনে চলে যান জয়। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের অনুরোধে ইন্টারপোল ‘রেড কর্নার নোটিশ’ জারি করে তার বিরুদ্ধে।
[৬] ২০০৬ সালের ১৪ মে বিদেশে কাজের জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া সংস্থা ‘তুর্কি অ্যাসোসিয়েট’-এর মালিককে আট লাখ মার্কিন ডলার চেয়ে ফোন করে জয়। টাকা না দেওয়ায় ওই সংস্থার অফিসে ঢুকে ছয় জনকে গুলি করে খুন করে জয়ের দলবল। কলকাতায় জয় পাসপোর্ট তৈরি করে তানভীর রানা নামে। ২০০৭ সালে বাগুইআটির চিনার পার্কের একটি বাড়ি থেকে ভারতের সিআইডি জয়কে গ্রেফতারের পর এ বিষয়টি উঠে আসে।
[৭] সূত্র বলছে, ২০১১ সালে পর্যটক ভিসা নিয়ে জয় পাড়ি জমান কানাডায়। টরোন্টোর শহরতলি আয়াক্সে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। সেখানে তার প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘এসজে ৭১’। ২০১৮ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী জয়-ই কি কানাডার ব্যবসায়ী তারেক?’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হবার পরই বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দফায় দফায় কানাডার অভিবাসন দফতর তাকে তলবের মাঝেই ওই বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে কানাডা থেকে উধাও হয়ে যান তিনি। তবে ২০১৯ থেকে তিনি মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং থাইল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন।
[৮] তানভীর ইসলাম জয় ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশে পুলিশি অভিযানের সময় হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি এবং হাজারীবাগ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের রক্ত হিম করে দিতে জয়ের একটি ফোন কলই যথেষ্ট ছিল। তার লক্ষ্য থাকত মূলত ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ী, রিয়েল এস্টেট দালাল এবং শপিং কমপ্লেক্সগুলো। এসবের মালিকদের কাছে থেকে হুমকি দিয়ে কয়েক লক্ষ থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদা চাওয়া হতো।
[৯] চাঁদা দিতে বাধ্য করার জন্য তার লোকজনকে পাঠাতো ভয়ভীতি দেখাতে। কিন্তু কেউ যদি টাকা না দিত তাহলে ঠাণ্ডা মাথায় তাকে হত্যা করা হতো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তানভীর ইসলাম জয়কে ২০০১ সালের ২৭ ডিসেম্বর মোস্ট ওয়ান্টেড অপরাধী ঘোষণা করে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
এসবি২