ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানাধীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার হরিজন পল্লীতে এক সংখ্যালঘু হরিজন পরিবারের কন্যাকে উত্ত্যক্ত, এসিড নিক্ষেপ, প্রাণনাশের হুমকি ও বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) এ বিষয়ে মতিহার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী রিমিতা রায়ের পিতা শ্রী জনি কুমার।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, শ্রী জনি কুমারের ১৭ বছর বয়সী কন্যা রিমিতা রায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভিযোগে বলা হয়, প্রতিবেশী রবিউল ইসলাম আশিক (২২) দীর্ঘদিন ধরে ঐ স্কুলছাত্রীকে রাস্তায় উত্যক্ত এবং প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ওই ছাত্রীর মুখে এসিড মারার হুমকিও দেন আশিক।
ভুক্তভোগী পিতা আরও জানান, আশিক নিজেকে ছাত্রদলের কর্মী এবং বিএনপির পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে হুমকি দেন যে, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হলে কিছুই করা যাবে না। হুমকির পাশাপাশি আশিক এবং তার পিতা জাহের আলী ও ভাই রুবেল স্থানীয়ভাবে গায়ের জোর দেখাতে থাকেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ রাতে তাদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। এ ঘটনায় জনি কুমার ও তার পরিবার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানানো হলে মতিহার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলের আলামত সংগ্রহ করে।
পরবর্তীতে মেয়েটিকে ঢাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে রাখা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রি-টেস্ট পরীক্ষার জন্য তাকে আবার রাজশাহী আনতে হয়। এ সুযোগে পুনরায় উত্যক্ত করতে থাকে অভিযুক্ত আশিক। দুর্গাপূজার সময় প্রতিমা বিসর্জনের দিনও আশিক মদ্যপ অবস্থায় পরিবারটির পিছু নেন এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।
ভুক্তভোগী জনি কুমার জানান, স্থানীয়ভাবে একাধিকবার মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে তিনি থানায় মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়েছেন। সাক্ষী হিসেবে এজাহারে স্থানীয় দুই ব্যক্তি সোহেল রানা এবং রাকিবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ মো আব্দুল মালেক জানান, অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, হরিজন পল্লীর হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীকে উত্যক্ত এবং তার পরিবারের উপর হামলা করা নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সেটাকে রাজনৈতিক বানিয়ে জামাত-শিবির বা বিএনপি-ছাত্রদলের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কোন ব্যক্তির দায় কোন রাজনৈতিক দল নিবে না। এতে রাজনৈতিকভাবে নিজেদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান তারা।