শিরোনাম
◈ সোহেল তাজকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার বিষয়ে যা বললেন তার বোন ◈ তৃতীয় দফায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ◈ গাজা যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিলেন ট্রাম্প: সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারত নাকা‌নিচুবা‌নি খে‌য়ে সুপার ওভারে শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে জয় পে‌লো ◈ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা  ◈ জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার পুরো ভাষণ ◈ বাংলাদেশ আর কখনো স্বৈরশাসনের পথে ফিরবে না : জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা  ◈ ইইউ’র কঠোর অভিবাসন নীতি: বাংলাদেশিদের ফেরত আসার প্রবণতা বাড়ছে ◈ জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বেশিরভাগ দেশের ‘ওয়াক আউট’ ◈ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা নিয়ে টিআইবির দাবি ‘ভিত্তিহীন’: প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:২৮ রাত
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মামলার জটে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল

এম আর আমিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১৪৫০ মামলা, নিষ্পত্তিতে ধীরগতি।এতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।

চট্টগ্রাম বটতলী স্টেশনের সামনে ১২ হাজার বর্গফুটের কার পার্কিং যাত্রীদের কার পার্কিং করার শর্ত অনুযায়ী এটি ইজারা দেওয়া হয়। পার্কিংটি ইজারা নিয়েছেন এসএ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালের শেষের দিকে এ পার্কিং স্পেস নতুন করে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে। নিয়ম না থাকায় এ আবেদনে সাড়া দেননি রেলওয়ের কর্মকর্তারা। ফলে গত বছর উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি। ওই মামলার কারণে এখনও আটকে আছে নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে ইজারাদার নিয়োগ।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,এখানে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়ম স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।মামলার অগ্রগতি প্রত্যাশার তুলনায় অনেক ধীরগতির।কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়ের অভাব কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে।মামলার কারণে রেলওয়ে স্টেশনের কার পার্কিংয়ের ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। মামলা শেষ হলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

শুধু কার পার্কিং নয়, মামলার কারণে রেলওয়ের ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে শুরু করে অনেক কিছুরই নতুন টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেলওয়ে।

এদিকে বছরের পর বছর ধরে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর হচ্ছে না নিষ্পত্তি। এমনকি অনেক মামলার বাস্তব কোনও ভিত্তিও নেই। শুধু এসব মামলাকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে ব্যবহার করে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি নিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের তেমন কোনও আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। বছরে ৪০ থেকে ৫০টি মামলা দায়ের হলেও নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৭-৮টি।  

দীর্ঘদিন ধরে মামলার কারণে ঝুলে আছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ক্যাটারিং সার্ভিস (খাবার সরবরাহ) পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিসের জন্য নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ ও নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এতে ৪৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আবেদন জমা দেয় ৪২টি প্রতিষ্ঠান। তারা প্রত্যেকে রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা (অফেরতযোগ্য) অর্থ জমা দিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে আবেদনকারীদের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করে। মামলাটি এখনও চলমান আছে। মামলা শেষ না হওয়ার কারণে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মো: আল মাহমুদ আইন কর্মকর্তা বলেন,পার্কিং স্পেস নিয়ে মামলা নয়, ভূমি, নিয়োগ জটিলতাসহ নানা কারণে দায়ের হওয়া এক হাজার ৪৫০টি মামলা পরিচালনা করছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন শাখা। সেগুলোর ৮০ শতাংশ মামলাই ভূমি সংক্রান্ত। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬৫টি, হাইকোর্ট বিভাগে ৫৪০টি, জজ কোর্টে ৭৭০টি, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ৭৫টি রয়েছে।প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০টি মামলা দায়ের হলেও নিষ্পতি হচ্ছে মাত্র একটি থেকে দুটি। মামলা কম নিষ্পত্তি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলে আইন শাখায় জনবল সংকট। এখানে দুই জন আইন কর্মকর্তার মধ্যে আমি একজন। ৫টি কোর্ট পরিদর্শকের পদ থাকলেও একজনও কর্মরত নেই। স্টেনো টাইপিস্ট, প্রধান সহকারী, অফিস সহকারীর পদও শূন্য রয়েছে। এমনকি যারা মামলা পরিচালনা করবেন, আইনজীবীও রয়েছে কম। বর্তমানে এক হাজার ৪৫০টির মতো মামলা রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, রেল প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করায় অনিয়ম ও দখলদারিত্ব আরও বাড়ছে।রেল সৃত্রে জানা যায়,শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যার প্রভাব বাণিজ্যিক দপ্তর থেকে আইন বিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, ক্যাটারিং, অনবোর্ড ব্যবসা—সবকিছুই একক কর্তৃত্বে নিয়ন্ত্রণ করছে। 

চট্টগ্রাম ষ্টেশনে প্রতিদিন প্রায় দুই’শটিরও বেশি বাস-ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান এই কারপার্কিংয়ে প্রবেশ করছে। এতে স্টেশন এলাকায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারীদের আস্তানা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে,রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন বলেন, বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। ইজারাদার রিট মামলা করেছেন, তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আদালতের ওপর নির্ভর করছে। তবে ইজারাদার এটিকে সরাসরি সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করেছে। 

রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলীয় রেলকে পুনর্গঠন করতে হলে ভেঙে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অন্যথায় রেলওয়ের অর্থনৈতিক ক্ষতি ও সুনামের অবক্ষয় আরও বাড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়