টুপি-পাঞ্জাবি পরা তিন ব্যক্তি বাজারে বাউল ফকিরের মতো দেখতে এক ব্যক্তির চুল কেটে দেওয়ার যে ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে, সেই বৃদ্ধের পরিচয় মিলেছে। জোরপূর্বক চুল দাড়ি কেটে দেওয়ার সময় বৃদ্ধ শুধু আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘আল্লাহ তুই দেহিস।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেনস্তার শিকার ব্যক্তির নাম হালিম উদ্দিন আকন্দ (৭০)। তিনি ময়মনিসংহের তারাকান্দা উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার কোদালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়রা তাকে হালিম ফকির হিসেবেই চেনেন।
কাশিগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, হালিম উদ্দিন ফকির। পাগল কিংবা মানসিক বিকারগ্রস্ত নন। দীর্ঘ ৩৪ বছর মাথায় জট ছিল তার। হজরত শাহজালাল (র.) ও শাহ পরানের (র.) ভক্ত তিনি। আগে পেশায় কৃষক থাকলেও এখন ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি করেন। গত কোরবানির ঈদের কয়েক দিন আগে উপজেলার কাশিগঞ্জ বাজারে হঠাৎ করেই একদল লোক এসে তাকে দৌড়ে ধরে জোরপূর্বক মাথার জট, দাড়ি ও চুল কেটে দেন। ঘটনার সময় আশপাশের মানুষ বাধা না দিয়ে বরং তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। সম্প্রতি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর হালিম উদ্দিন ফকিরকে দেখতে ভিড় জমান বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
বৃদ্ধ হালিম উদ্দিন বলেন, ‘চার মাস আগে সকালে কাশিগঞ্জ বাজারের একটি দোকানে বইছিলাম। কোদালিয়ার একটা লোক আমারে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কই যাও। তহন কইলাম বাড়িঘরে যাই। ওই লোক মোবাইল বাইর কইরা টুপি পাঞ্জাবি পরা লোকদের খবর দেয়। খবর পায়ে ওনারা আইসা আমারে টেনেহিঁচড়ে বাইর কইরা জোর কইরা মাথার জটা চুল ও দাড়ি কাইটা দেয়। আমার তো অতো শক্তি নাই। ৮-১০ জনে ধইরা আমারে ফালায়া দিয়া মেশিন দিয়ে চুল কাটছে। হেই সময় আমি বেহুশ হয়া গেছিলাম। ওই ঘটনার পর থেকে কাজকাম ভালো লাগে না। তারা ভেবেছিল, আমি পাগল। আমি তো পাগল নই, ফকির। কবিরাজ করি।’
এদিকে চুল কাটার দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর বিভিন্ন এলাকার মানুষ তাকে দেখতে কাশিগঞ্জ এলাকায় ছুটে যান।
তাকে দেখতে যাওয়া ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম বলেন, ‘হালিম ভাই তরিকায়ে নক্সাবন্দিয়া ধারায় অনুরক্ত। বর্তমানে তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। এভাবে জোরপূর্বক কেউ তার চুল দাড়ি কেটে দিয়ে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারে না। এ ঘটনায় বাউল সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে নিন্দা জানাচ্ছি। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য প্রশাসন দ্রুত দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি।’
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) টিপু সুলতান জানান, ওই বৃদ্ধের চুলদাড়ি জোরপূর্বক কেটে দেওয়ার ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। ওই বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ওই ব্যক্তি মামলা করলে কিংবা অভিযোগ দিলে দোষীদের গ্রেফতার করা হবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন