নিনা আফরিন, পটুয়াখালী: সমুদ্রে ধারাবাহিক নিম্নচাপ এবং অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ের প্রভাবে নদ-নদীতে পানির প্রবল চাপ সৃষ্টি হওয়ায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া ইউনিয়নের বেরিবাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রবল স্রোতে ভেসে গেছে মাছের ঘের, সবজির ক্ষেত, পানের বরজ, আমনের বীজতলা ও ফসলি জমি।
স্থানীয়দের অভিযোগ— প্রতি বছরই জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ মেরামত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে বছর না ঘুরতেই আবার ভেঙে পড়ে সেই বাঁধ। দ্রুত টেকসই ও মজবুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে যা দেখা গেছে:
লোহালিয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে বেরিবাঁধ ভেঙে পড়ায় ইদ্রাকপুর, কাকড়াবুনিয়া, দক্ষিণ লোহালিয়া, নাজিরপুরসহ অন্তত ১০টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
কৃষকের ক্ষোভ ও ক্ষতির চিত্র:
ইদ্রাকপুর এলাকার সবজি চাষি শাহ আলম হাওলাদার (৫৫) বলেন, “লোহালিয়া কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা। এখানকার কৃষকরা প্রতিদিন পৌর শহরের পুরান বাজার ও নিউ মার্কেটে ৮০ শতাংশের বেশি তাজা সবজির যোগান দেন। কিন্তু বারবার বেরিবাঁধ ভেঙে ফসলের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।”
তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করে শুধু কাগজে-কলমে সংস্কার দেখিয়ে দায়সারা কাজ করে। ফলে প্রতিবছর বর্ষা এলেই কৃষকেরা আতঙ্কে থাকেন।
স্থানীয় কৃষক আব্বাস উদ্দিন (৫০), আয়নাল হাওলাদার (৬৫), আতাহার গাজী (৪৫) জানান, “চলতি আমন মৌসুমে দুবার বীজতলা তৈরি করেও জোয়ারের পানিতে তা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পুরো বীজতলা গলা সমান পানির নিচে। নদী থেকে চার কিলোমিটার ভেতরের জমিতেও কোমর সমান পানি, সেখানে চাষাবাদ অসম্ভব।”
পানের বরজ, মাছের ঘের ভেসে গেছে:
কাকড়াবুনিয়ার পানচাষি সুকুমার শীল (৪৩) বলেন, “প্রতিদিন জোয়ারে পানি ঢুকে পানের বরজ ডুবে যাচ্ছে। এখন আর কোনো আয় নেই। আমিসহ অনেকের মাছের ঘেরও ভেসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ ঠিক না করলে খাবার জোটানোও কষ্টকর হবে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড কী বলছে:
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব জানান, “পটুয়াখালী জেলায় মোট ১,৩৪০ কিলোমিটার বেরিবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৫ কিলোমিটার আংশিক এবং ৬ কিলোমিটার সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। টানা বর্ষণ ও অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ের কারণে কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। পানি কমলে জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “চলতি বর্ষা মৌসুমে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কাজ শেষ হতে পারে আগামী শুকনো মৌসুমে। তবে পর্যাপ্ত বাজেট না থাকলে কাজ বিলম্বিত হয়।”
প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছরই ক্ষতির মুখে পড়ছে পটুয়াখালীর কৃষকরা। অস্থায়ী মেরামতের বদলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণই হতে পারে এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান—এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।