শিরোনাম
◈ আ. লীগ নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ, মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন আটক ◈ ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি বাস্তবায়ন: ভারতকে শাস্তি দিতে আমদানি শুল্ক ৫০% আরোপ ◈ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ◈ সমুদ্রসৈকত থেকে ফেসবুক লাইভে যা বললেন সারজিস (ভিডিও) ◈ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের দুঃসময়: পারমিট জটিলতায় ৩০৬ জন আটক, বিমানবন্দর থেকে ফেরত ২৬ জন ◈ বিএনপির ভবিষ্যৎ কৌশল নিয়ে লন্ডনে তারেক-ট্রেসি বৈঠক, দেশে ফিরবেন তারেক রহমান ◈ প্রাথমিকের শিক্ষকদের সুখবর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঐক্যবদ্ধ থাকুন, মুখ দেখাদেখি যেন বন্ধ না হয়: তারেক রহমান ◈ ভাঙ্গায় সাপের কামড়ে প্রাণ গেল কৃষকের ◈ চালকের ঘুমে কেড়ে নিল প্রবাসী বাহারের পরিবারের ৭ প্রাণ, এলাকায় শোকের মাতম 

প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:২৮ বিকাল
আপডেট : ০৬ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তুরাগ-উত্তরায় নীরব নৈরাজ্য: দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও হরিলুট

মোঃরফিকুল ইসলাম মিঠু, ঢাকা: অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত উত্তরায় নীরব চাঁদাবাজি, দখলবাজি, দলবাজি এবং নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটেছে। উত্তরা, তুরাগ ও বিমানবন্দর থানা এলাকা ঘিরে একশ্রেণির অসাধু চক্র নানা অপরাধের আস্তানা গড়ে তুলেছে। ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জুয়া, নারী পাচার এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চাঁদাবাজির বিশাল সিন্ডিকেট:

সচেতন মহল মনে করছে, প্রতিদিন এই ছয়টি থানা এলাকায় কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। এই বিপুল পরিমাণ টাকা কোথায় যায়, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের মতে, এই চাঁদাবাজদের পেছনে বড় কোনো গডফাদার রয়েছে, যার পরিচয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল বাড়ছে।

বিভিন্ন সূত্র ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজির প্রধান খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে—

অবৈধ ক্লাব ও জুয়ার আসর: উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের রয়্যাল ক্লাব, বাংলাদেশ ক্লাব, এভিয়েশন ক্লাবসহ বিভিন্ন নামসর্বস্ব ক্লাব ও ফ্ল্যাট বাসায় জুয়ার আসর বসে। এখানে উচ্চবিত্ত জুয়াড়ি ও শিল্পপতিরা মোটা অঙ্কের টাকার বাজি ধরেন।

ফুটপাত ও কাঁচাবাজার: উত্তরা সোনারগাঁ জনপথ সড়কের ১১ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের কাঁচাবাজার, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন, আব্দুল্লাহপুর মাছের আড়ত, কামারপাড়া ও স্লুইস গেট কাঁচাবাজার থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়।

যানবাহন ও স্ট্যান্ড: কামারপাড়া, রানাভোলা, নয়ানগর, মেট্রোরেল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার লেগুনা এবং অটোরিকশা থেকে মাসিক মাসোহারা (জিপি) আদায় করা হয়। অবৈধ বালুর ট্রাকস্ট্যান্ড, লেগুনা ও কাভার্ডভ্যান স্ট্যান্ডগুলোও চাঁদাবাজির বড় উৎস।

সরকারি জায়গা দখল: রাজউকের পরিত্যক্ত জমিতে অবৈধ গাড়ির চাকার দোকান, ভাঙারির দোকান, নার্সারি, খাবার হোটেল, সেলুন, চোরাই তেলের দোকান ইত্যাদি গড়ে তোলা হয়েছে।

প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা:

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন এসব বিষয়ে অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয় সুশীল সমাজের মতে, উত্তরা বিভাগে কমপক্ষে ৮-১০টি মদের ও শীষার বার রয়েছে। সাবেক যুবলীগ নেতা, কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা, শিল্পপতি এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা এসব অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

রাজনৈতিক পরিচয়ে দখলবাজি:

তুরাগ থানাধীন মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে রাজউকের প্রায় ৩ বিঘা সরকারি জমি দখল করে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল বিশাল বালুর ট্রাকস্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে। এই স্ট্যান্ডটি দুটি ভাগে বিভক্ত, যার একটি গ্রুপের নাম 'বরিশাল গ্রুপ'। ট্রাকপ্রতি মাসিক ২-৩ হাজার টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা:

সম্প্রতি কিছু অপরাধী গ্রেপ্তার হলেও তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক মামলা থাকায় পুরো সিন্ডিকেট ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

গত ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে এক প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবির ঘটনায় কাজী জোবায়ের ও আবির হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

১২ জুলাই, ২০২৫ তারিখে স্লুইস গেট এলাকায় ফলের আড়ত থেকে বিএনপি'র বহিষ্কৃত নেতা মিলনসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী।

৪ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের নগদ টাকা ও ইয়াবা জব্দ করা হয়।

এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায়, উত্তরা-তুরাগে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মূলহোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়